May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

প্রসঙ্গঃ ত্রিশ লক্ষ শহীদ

অ্যাডভোকেট আইয়ুব খান : ত্রিশ লাখ শহীদের দামে কেনা আমাদের প্রিয় এই স্বদেশ- বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের এই আত্মদান গুটি কয়েক স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তি ব্যতীতদেশের সকল মানুষই শ্রদ্ধার সহিত সব সময় স্মরণ করে থাকে। ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরাযে বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই ত্রিশ লক্ষ শহীদ কারা এই নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা স্বাধীনতার ৪৫ বৎসর পরেও বিদ্যমান রয়েছে। যদিও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে। কারা ৩০ লক্ষ শহীদ, রাষ্ট্র এখনও তা নির্ণয় করতে না পারার ব্যর্থতায় গোটা জাতি লজ্জিত; লজ্জিত ও অপমানিত আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থভাবে আমাদেও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হওয়ার যেঘোষণা দিয়েছিলেন,সেই ৩০ লাখ শহীদদের মধ্যে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করতে করতে, বুকের তাজা রক্তে সিক্ত করেছেন বাংলার মাটি, এমন মুক্তিযোদ্ধা যেমনি রয়েছেন ঠিক তেমনি রয়েছেন বাঙ্গালী এবং বাংলার স্বাধীনতার পক্ষে থাকা বুদ্ধিজীবীগণ যাদের অনেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী এবং তাদের দুসর আলবদর রাজাকারেরা ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।

শহীদদের মধ্যে আবার অনেকেই আছেন, যাদের শুধুমাত্র বাঙ্গালী হওয়ার অপরাধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এর বাইরেও শহীদদের মধ্যে বিশাল একটি অংশ রয়েছে যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার স্বীকার হয়েছিলেন। স্বাধনতার জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী সেই শহীদেরা রক্তের যেই অমূল্য চাহিদা পূরন করেছিল ৩০ লক্ষ শহীদের সকলেই সম্মিলিত রক্তদানেই পেয়েছি এই বাংলাদেশ। দুঃখজনক হলেও সত্যযে, ৩০ লাক্ষ শহীদদের মধ্যে বিশাল একটি অংশ যারা গণগত্যার স্বীকার হয়েছিলেন, কিংবা শুধুমাত্র বাঙ্গালী হওয়ার অপরাধে যাদের হত্যা করা হয়েছিল কিংবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক ছিলেন বিধায় কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছেন বিধায় হত্যা করা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সেই বিশাল অংশকে রাষ্ট্র মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও দালিলিক ভাবে স্বীকার করেন না।

স্বাধীনতার ৪৫ বৎসর পরেও মুক্তিযুদ্ধেও শহীদদের সংখ্যাগরিষ্ট এই অংশের প্রতি রাষ্ট্রের এই অবজ্ঞা সকল শহীদ পরিবার সহ স্বাধীনতার পক্ষের সকল ব্যক্তিদের হৃদয়ে কাটা হয়ে বিঁধে আছে।

শহীদদের নিয়ে এই বিভাজন এই লুকোচুরি খেলা বন্ধ করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা পাকবাহিনী কিংবা তাদের দুসরদের হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেকেই শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরী। শুধু মুখে মুখে ৩০ লাখ শহীদদের অবদানকে স্মরণ করলে হবে না, এদের সকলকে শহীদ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৩০ লাখ শহীদদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য বৎসরের একটি দিনকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
প্রজন্ম ’৭১ শহীদ পরিবারের সংগঠন। আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যরা এই সংগঠনের মাধ্যমে বলতে চাই-
* ত্রিশ লক্ষ শহীদদের স্মরণে একটি দিবস ঘোষণা করা হোক।
*  ত্রিশ লক্ষ শহীদদের সকলকে শহীদ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

সঙ্গত কারনেই জাতির জনকের রক্তের উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। একমাত্র তিনি-ই পারেন ত্রিশ লক্ষ শহীদদের সকলকেই একই শ্রেণীভূক্ত করে সকলকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দানের। এখনই সময় মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণের।

লেখক: শহীদ আমিনুর রহমান খান এর বড় সন্তান, সভাপতি, প্রজন্ম ’৭১, চট্টগ্রাম বিভাগ।

Print Friendly, PDF & Email