May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

হালি-ছালি থেকে বড়জোর টম-হ্যারি

মাসকাওয়াথ আহসান : ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ট্রাক হামলার কারণ হিসেবে ফরাসী সরকার হামলাকারীর মনোবৈকল্যকে খুঁজে পাচ্ছেন। সিএনএন আইএস-এর আগেই এই হামলার জন্য আইএসকে দায় স্বীকারের কথা মনে করিয়ে দেবার তিনদিন পর আইএস যদিও এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু ফ্রান্সের সরকার এই হামলাটিকে হামলাকারীর মনোবৈকল্য বলে জানিয়েছে তার তদন্ত শেষে। ফ্রান্সের লেখক-শিল্পী-কবিদের প্রতিক্রিয়াও সেরকম। বিদেশী বিদ্বেষী কিছু টম-হ্যারি নিঃসন্দেহে সিএনএন-এর ন্যারেটিভ পছন্দ করছে; কারণ হামলা না হলেও তারা বিদেশীদের অপছন্দ করতো; এদের পুর্বপুরুষেরা আফ্রিকায় গনহত্যা চালিয়েছিলো।
জার্মান সরকার সম্প্রতি ট্রেনে উঠে হামলা করা ১৭ বয়েসী আফগান শরণার্থী কিশোরটিকে মনোবৈকল্যের স্বীকার বলে অভিমত দিচ্ছেন। নাগরিক সমাজের চিন্তার জগতের অগ্রসর মানুষেরা ১৭ বছরে অভিভাবকহীন এক শরণার্থী কিশোরের মনোবিভ্রাট বলেই বর্ণনা করছেন বিষয়টিকে। আর যেসব জার্মান শাইসে বলে গালি দিচ্ছে’ এরা সবসময়ই বিদেশীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী বাহিনী জার্মানীতে উপস্থিত না থাকলে এদের পূর্ব পুরুষ নাতসী অপরাধীদের বিচার বানচাল করে দিতো এদের অপরাধী পূর্বপুরুষেরা। এরা যেহেতু সমাজের টম-হ্যারি এদের প্রতিক্রিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ফ্রান্স ও জার্মানীর মানবিক ঔদার্যের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে সরকার ও সমাজের আলোকিত মানুষদের ‘অপরাধ’ এবং ‘অপরাধী’কে নৈর্ব্যক্তিক জায়গা থেকে দেখার সততার জায়গাটিতে।
অথচ আমাদের কতিপয় আধাসেদ্ধ অগ্রসর সমিতি রয়েছে; তারা কত সহজে “অপরাধ” ও “অপরাধী” সম্পর্কে রায় দিয়ে দেয়! অনেক সময় সিএনএন-এর আগে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিডিয়া অরল্যান্ডো হামলাকারীর ব্যক্তি জীবনের হতাশার ঘটনা তদন্ত করে বের করেছে। জানিয়েছে হামলাস্থলে আরেকজন মুসলমান তরুণের কথা যে হামলার সময় অনেক মানুষ বাঁচিয়েছে। তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে, একজন মুসলমান তরুণ অরল্যান্ডোর হামলাকারীর “মনোবৈকল্য”-জনিত সহিংস মনোভঙ্গির কথা হামলার আগেই গোয়েন্দা সংস্থাকে হানিয়েছিলো। গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের এ ভুল স্বীকার করেছে। এই হচ্ছে যৌক্তিক বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনের উদাহরণ। যেখানে কেউ কোন ঘটনার স্টেরিওটাইপিং করে রায় ঘোষণা করছে না। অবশ্য টম-হ্যারি সেখানেও আছে; এদের দূষিত জিন আদিবাসীদের দেশ দখল করে এমেরিকা বানিয়েছিলো; আফ্রিকার মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে নিয়ে এসেছিলো। তারা সব সময় বিদেশী বিদ্বেষী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রসর সমাজ বুশ ডকট্রিনের এই “ইসলামোফোবিয়া” তৈরীর ঘোর বিরোধী।
এতে স্পষ্ট হয়ে যায় আমরা আপাতঃ দৃষ্টিতে যাদের অগ্রসর চিন্তার মানুষ ভাবি; এরা হালি-ছালি থেকে বড় জোর টম-হ্যারি হতে পারে। তার বেশী আর এগুতে পারেনা। আর অপরাধীরাই অপরাধ ও অপরাধীর রায় দ্রুত দিয়ে দেয়; এ বোধহয় লেডি ম্যাকবেথের “বার বার হাত ধোবার” ফোবিয়া; নিজের হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে বলে মনোবিভ্রাট ঘটে বার বার। কার রক্ত? নিঃসন্দেহে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান-আদিবাসীর রক্ত।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক

Print Friendly, PDF & Email