May 17, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শিশু শিখুক নিজেকে ভালবাসতে

ডেস্ক: আমরা বাস করি ছবির জগতে। টিভি, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরতে থাকা নানা ধরনের ছবি দিয়েই আজকাল জেনে বা না জেনে নিজেদের যাচাই করি আমরা। আর এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় আত্ববিশ্বাস হারাই, নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। দেহের গঠন যেমনই হোক, নিজেকে ভালবাসতে শিখতে হবে ছোটবেলা থেকেই।

চারপাশে সব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ছড়াছড়ি। এদিকে শরীরের গঠনও হতে হবে নিখুঁত। এমনই দোটানার মধ্যে বড় হচ্ছে আমাদের শিশুরা। উঠতি বয়সে অনেক শিশুই নিজের শরীরের গঠন নিয়ে হতাশায় ভুগে, আপনার সন্তানকে এই দ্বন্দ্বের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারেন আপনি নিজেই।

ওজন নয়, ভাল থাকাই মুখ্য

শিশুদের নিজের শরীরের প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান ছোটবেলা থেকে নিজের দেহকে ভালবাসতে শিখলে পরবর্তীতে তার শারীরিক গঠন নিয়ে হতাশা কাজ করবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাদের শেখানো উচিৎ আমাদের প্রত্যেকের শরীরের গঠন আলাদা, তাই দেখতে কেমন লাগছে তার চেয়ে সুস্থ এবং ভাল থাকাই হওয়া উচিৎ জীবনের আসল উদ্দেশ্য।

প্রতিটি শিশু আলাদা। একেকজনের বড় হওয়ার গতি হয় ভিন্ন, তেমনই খাবারের প্রতি রুচিও সবার এক রকম হয় না। তাই জোর করে খাওয়ানো কিংবা খাওয়া কমিয়ে দেয়ার বদলে শিশু যেন ছোট থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে শেখে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সম্প্রতি একটি মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাবা-মা তাদের কিশোর বয়সী সন্তানদের বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত, তাদের বেশিরভাগই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করেছেন। ফলে নানা ধরনের ইটিং ডিজঅর্ডার, যেমন – অ্যানারক্সিয়া, মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া ইত্যাদি ঝুঁকিও দেখা দিচ্ছে এই শিশুদের মাঝে

অপরদিকে যেসব কিশোর-কিশোরীদের বাবা-মা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকে জোর দিয়েছেন, তাদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা অনেকটাই কম দেখা যায়।

কিছু খাবার ‘প্রতিদিনের’ এবং কিছু ‘মাঝে-সাঝের’

আপনার সন্তান যদি প্রতিদিন বার্গার খেয়েই থাকে, তবে তার শরীরের ক্ষতিই হবে। তাই বলে কি সন্তানকে তার প্রিয় বার্গার খাওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন? খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বসবেন না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সব খাবারই খাওয়া যায়। তবে কিছু খাবার আছে যা প্রতিদিন খাওয়া প্রয়োজন, আবার কিছু খাবার আছে যা মাঝে-সাঝে খেলেই ভাল। ভাত, ডাল, রুটি, শাকসবজি, ফলমূলের মতো খাবার আমরা প্রতিদিনই খেতে পারি নিশ্চিন্তে, এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যেও প্রয়োজনীয়।

কিন্তু ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, যেগুলোতে অতিরিক্ত ফ্যাট এবং চিনি থাকে, সেগুলো মাঝেমধ্যে খেতে দিন সন্তানকে। তাকে বুঝিয়ে বলুন, পছন্দের খাবারটি সে অবশ্যই খেতে পারবে, তবে প্রতিদিন না খাওয়াই ভাল।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে সন্তানের ভালর কথা ভেবে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেন এ জাতীয় খাবার। কিন্তু এ কারণে আপনার সন্তান চুরি করে পছন্দের খাবারটি খেতে আগ্রহী হবে, যা এক পর্যায়ে ইটিং ডিজঅর্ডারে পরিণত হবে।

সন্তানের ওপর চাপ নয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হলে চাপ প্রয়োগ না করে বরং বাচ্চাদের কিছুটা স্বাধীনতা দেয়া উচিৎ। কোনো নির্দিষ্ট খাবার আপনার সন্তান খেতে পছন্দ করছে কী না তা বোঝা জরুরি।

বাচ্চার পেট ভরে গেলেও যদি বাড়তি খাওয়ার জন্য তাকে চাপাচাপি করা হয় কিংবা জোর করে কোনো খাবার খাওয়ানো হয় যা তার ভাল লাগছে না, তাহলে বাচ্চারা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং ক্ষুধা লাগার লক্ষণগুলোও বুঝতে পারবে না।

খাওয়ার সময় বাচ্চারা অনুকরণ করে তার বাবা-মাকে। তাই যদি আপনি কোনো খাবার মজা করে খান, আপনাকে দেখে শিশুটিও সেই খাবারের প্রতি আগ্রহী হবে। এভাবে বাচ্চাদের নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করানো যায়, খাবারের পরিমাণ সম্পর্কেও সচেতন করা যায়।

ক্ষুধা লাগলে কেমন লাগে? আপনার সন্তানকে এই প্রশ্ন করুন। তাহলে সে ক্ষুধার লক্ষণগুলো সম্পর্কে বুঝতে শিখবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বড়দের মতোই বাচ্চাদেরও প্রতিদিন একই রকম ক্ষুধা লাগে না। তাই কোনো দিন ক্ষুধা না লাগলে তার যতটুকু ইচ্ছা খেতে দিন, বাকিটা নিয়ে জোরাজুরি করবেন না।

সবার দেহই সুন্দর

ছোট থেকেই বাচ্চাদের শেখান, প্রত্যেকের দৈহিক গঠনে রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। কেউই কুৎসিত নয়। আমাদের সবার শরীরই সুন্দর। বাচ্চাদের ভেতর এই আত্মবিশ্বাস আনতে হলে তার শৈশবের সময়টুকু আপনাকে থাকতে হবে তার পাশে। আপনি নিজে যখন স্বাস্থ্যকর খাবার উপভোগ করে খাবেন এবং নিজের শরীরের প্রতি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করবেন, তখন আপনার সন্তানও তা শিখবে।

সূত্র: অললাইন

Print Friendly, PDF & Email