May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শহীদদের দীর্ঘশ্বাস

মোঃ মহসিনুল হক :  ১৯৭১ সাল ইতিহাসের পাতায় ১টি স্মরনীয় বছর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমি ছোট ছিলাম। তবে বোঝার মত বয়স হয়েছিল। সৈয়দপুর শহরটা বিহারী অধ্যুষিত মানুষের বসবাস বেশী। বাঙ্গালীরা কোনঠাসা অবস্থায় থাকতো। গ্রাম থেকে বাঙ্গালীরা তরিতরকারী বেঁচতে শহরে নিয়ে আসলে তাদের উপড় নির্যাতন আর জুলুম করতো। এসব অত্যাচার জুলুম সত্য হতো না। আমার ভাইরা ছাত্রলীগ করতো। বাবা শহীদ আমিনুল হক আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন। বড় চাচা শহীদ ডাঃ জিকরুল হক ১৯৭০ এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিল। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সেই সময় বিহারীরা আমাদের পরিবারের সঙ্গে খুব হিসাব করে চলতো। ক্ষিপ্ত ছিল আমাদের গোটা পরিবারের উপর। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে আমার বাবা-চাচা-ভাইরা সক্রিয় ভাবে আওয়ামী লীরে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের কথা অল্প লেখাতে শেষ করা যাবে না। সৈয়দপুরে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিল আমার বড় ভাই শহীদুল, কুদরত ভাই, সহ আরো বেশ কয়েকজন। এজন্য কুদরত ভাইকে জীবন দিযে মাশুল দিতে হয়েছে। তার বাবা আমার বড় চাচা শহীদ জহুরুল হক ও আমার বাবা শহীদ আমিনুল হক আর এক চাচা শহীদ ডাঃ জিকরুল হক (সাংসদ) এবং ২ ভগ্নিপতি ডাঃ আজিজ শাহ, ডাঃ মোবারক আলী, বাবার চাচাতো ভাই শহীদ আশরাফ আলীকে খান সেনা আর অবাঙ্গালী বিহারীরা নির্মম ভাবে হত্যা করে। তাদের লাশ আজও আমরা খুজে পাই নাই। প্রতিটি মুসলমানের কবর থাকে, কবর জিয়ারত করবো আমরা কোথায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সবচাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আমরা।
বাবা শহীদ আমিনুল হককে প্রথম খান সেনারা ধরে নিয়ে গিয়ে সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে গারোডাঙ্গী ব্রীজে বলদ শ্রমে মাটি কাটার কাজ করাতো জোড় পূর্বক। সারাদিন কাজ করায় কপালে জুটতো ১টি চোকর মিশ্রিত রুটি আর চাবুকের মার। বৃদ্ধ বাবা কাজ করতে পারতো না বলে ফাঁেত খান নামক খান সেনা চাবুক দিয়ে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলতো। বাবার উপর বেশী রাগছিল তাদের, কারন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন টেপ রেকর্ডে ধারন করে পাড়া মহল্লায় বাজিয়ে শোনোতো, মুক্তি পাগল বাঙ্গালীদেরকে উজ্জীবিত করার জন্য।
নির্মম নিষ্ঠুরতায় আমার বাবা কাজ করতে না পারায় অবশেষে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়। ২৮শে জুন ১৯৭১ বাবা রিক্সায় চড়ে নিজ বাড়ীতে ফিরছিলো। সৈয়দপুর পৌরসভা রোডে কুখ্যাত রাজাকার ইজাহারের নেতৃত্বে খুনীরা বাবাকে রিক্সাথেকে জোড় পূর্বক টেনে হিচড়ে নামিয়ে ভুলিয়া মারোয়ারীর গুদামে নিয়ে বাবাকে মারধোর করে প্রথমে কান কাটে তারপর নাক কেটে নেয়। এইভাবে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ কেটে নিয়ে উল্লাস করতে করতে মেরে ফেলে। এই ভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকের নির্মম মৃত্যু হয়। আমার বাবা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে আজ অনেকে মন্ত্রী, এমপি হয়েছে, বড় বড় অফিসার হয়েছে। তাদের ভাববার সময় হলোনা যারা জীবন দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে, তাদের মূল্যায়ন করতে শহীদ পরিবাররা কেমন আছে, কিভাবে আছে। রাষ্ট্রের খোজ করারও সময় হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সম্মান করেছে এবং করতেছে।
পরিশেষে শুধু এটুকুই বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের নামের গেজেড করা হোক। শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক। আশাকরি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা শহীদদের মূল্যায়ন করবেন। শহীদ পরিবারদের জন্য কিছু করবেন।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, প্রজন্ম-৭১ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সন্তান) সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখা।

Print Friendly, PDF & Email