May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

দীক্ষা নয়কো – এ যে বাঁচার মন্ত্র

মনোরঞ্জন সরকার : গল্প নয়, আমার জীবনের বাস্তব ঘটনা এটা। আমি ভালবাসি নিজেকে আর ঠাকুর ভালবাসেন তার অধম সন্তানকে। জ্বলন্ত প্রমান আমি, এই যে এখনও বেচে আছি, ঠাকুরের দেয়া নতুন জীবন নিয়ে। দিনটি ছিল ১লা মে, ২০০৬ ইংরেজী। হঠাৎ করে মরণাপন্ন অবস্থা, পুরো শরীর একটা লৌহ খন্ডের মত, আমি অচেতন।
ঢাকায় শিকদার মেডিকেল কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা নিরীক্ষায় কিছুই ধরা পরেনি। মেডিকেল বোর্ড বসল – নিরাশ হল। আভাস দিল বাচার আশা নেই। SPR রামকৃষ্ণ দা’র নেতৃত্বে উপস্থিত সব ঋত্বিক দাদারা ICU তে আমার অচেতন দেহ স্পর্শ করে প্রার্থনা জানাল, নাম করল । বর্তমান আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদার শ্রীচরনে নিবেদনের বার্তা পাঠাল।
হঠাতই এক ডাঃ বলল হিমোগ্লোবিন ইঞ্জেকশন দিতে হবে, যাতে detoriation টা অন্তত ঠেকানো যায়। প্রতিদিন ১লক্ষ পাওয়ারের ইঞ্জেকশন পুশ করতে হবে, যার মূল্য ১২০০০০ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে নাই, আনতে হবে জার্মানি থেকে DHL এ। তাই করা হল ৫ দিন। বাংলাদেশে আমিই একমাত্র এইরকম Patient যা ডাক্তাররা আগে কখনও দেখেনি।
আচার্য্যদেব শিলং উৎসবে, SPR মানিক শর্মা দা নিবেদন করলেন আমার কথা। সাথে সাথেই নির্দেশ দিলেন SPR মনোরঞ্জন কাঞ্জিলাল দা’কে ঢাকায় আসার জন্য। সাথে দিলেন আচার্য্যদেব এর পরনের ধূতি, prescribe করলেন থানকুনি পাতার বড়ি, সংগে দিলেন ১১টি ফল।
যেই কথা সেই কাজ, কাঞ্জিলাল দা শিলং থেকে কোলকাতা এসে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে, পরদিন রাতে হাজির হলেন হাসপাতালে। নির্দেশমত কাজ করলেন। আচার্য্যদেবের পরিধেয় বস্ত্র গায়ে ঢেকে দিলেন, দেয়া ফল খাওয়ালেন, থানকুনি বড়ি দিলেন। আচার্য্যদেবের নির্দেশ পালন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, জলও স্পর্শ করেননি কাঞ্জিলাল দা।
পরদিন রামকৃষ্ণদা নিবেদন করলেন আচার্য্যদেবকে, আমার অবনতি দেখে। আচার্য্যদেব বললেন আমাকে India তে পাঠাতে। কিন্তু movement করা সম্ভব ছিল না, না-বিমানে, না-স্থলপথে। ঘটনা ঘটলো অলৌকিক। ভারতীয় ডাক্তারকেই ১ দিনের নোটিশে বাংলাদেশে পাঠানো হল।  Neuro Prof. Dr. Sandip Kumar Das, Apollo Hospital Dhaka।
পত্রিকার খবর দেখে আমার ছোট ভায়রা মনোরঞ্জন সাহা, Appointment নিলে্‌ সিরিয়াল হল – ১। তার আগেই top 10 in asia এর ২জন Neuro  Surgeon কে Apollo Hospital এ পাঠিয়েছেন ।

চলতে থাকলো চিকিৎসা, পূনর্জীবিত হল প্রাণ।
রাশিয়া ও ভারতের ডাক্তাররা হাসিচ্ছলে বললেন, শালা তোমার তো বাচার কথা না, বাচলে কি করে? আমার প্রশ্ন তুমিও ১দিনের নোটিশে India থেকে Dhaka Apollo তে কি করে?
উত্তরে ডা: বললো God knows। আমার উত্তরও ছিল God knows।

ডাক্তার জিজ্ঞেস করল, আপনি কি কারো follower? আমি বললাম, Yes, I am the follower of Thakur Anukul Chandra, The doctor of doctors. তারা হতবাক হয়ে চাইল ও মাথা নাড়ল এবং হাত জোড় করে প্রণাম জানালেন।

আমার মা শয্যাশায়ী ছিলেন, মা চলে গেলেন। মা’র প্রাণটা প্রতিস্থাপন করলেন আমার দেহে। এইতো তাঁর লীলা – এই যে আমি কথা বলছি। এটা শুধুমাত্র সম্ভব হল শুধু ঠাকুরকে ধরেছিলাম বলে। ঠিকুজি কুষ্ঠি পাল্টে গেল, যাতে লেখা ছিল অর্থনাশং, আয়ুক্ষয়ং। কিন্তু আমিতো বেঁচে আছি, কারন – আমি তো ঠাকুরের বাঁচার মন্ত্র পেয়েছি – দীক্ষা নয়কো।

ইং ২০০৭ এ দেওঘর উৎসবে গেলাম, ৩দিন হয়ে গেল, দর্শন পাইনি পরম পুজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদা’, পূজনীয় বাবাই দা ও পূজনীয় বিংকি দার।

অমিতানন্দ দা এসে বললেন, মশাই ৩দিন হলো দেখা করেননি। এক্ষুনি ধরে নিয়ে যেতে বলেছে। আমি অপ্রস্তুত, গেলাম পার্লারে বসা সবাই। পূজনীয় বিংকিদা বলে উঠলেন মশাই ৩দিন লুকাইয়া ছিলেন কেন? যিনি আপনার প্রাণ বাচালেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। পূজ্যপাদ আচার্য্যদেব হাসলেন আর পূজনীয় বাবাই দার দিকে থাকালেন। নিয়মিত ঠাকুর বাড়ি আসা লাগে বললেন আচার্য্যদেব নির্দেশ করলেন যান বাবাইর সঙ্গে যান।

বাবাইদা পার্লারে এক দাদাকে বললেন উনার এক্ষুনি স্বস্ত্যয়নী হবে হাত মুখ ধোয়ায়ে পাঠান। প্রণামী শেষে আমার পকেটে মাত্র ৩০টাকা অবশিষ্ট ছিল। দীক্ষায় বসলাম, ঠাকুর, বড়মা ও বড়দা প্রণামী দিতে বললেন। ১০ + ১০ + ১০ দিয়ে দিলাম আমি শূন্য। বাবাই দা মুচকি হেসে বললেন নাই তো? বাবাইদা পকেট থেকে ১০ টাকা বের করে হাতটা বাড়াতে বললেন।  অমনি দু হাত দিয়ে আমার ডান হাত চেপে ১০টাকা গুজে দিলেন। বললেন প্রণাম করে এটা আমায় দিন। এ যে কি অনুভূতি মনে হলো, আমি জ্বরা মুক্ত, ক্লান্তি মুক্ত, শূন্যে ভাসছি। স্বস্ত্যয়নী হল।

এ কি পরীক্ষায় ফেললে আমায়। মাছ, মাংস ছাড়া যে আমার এক বেলাও চলে না। ঢাকায় ফিরে বাসায় ফোন করলাম স্ত্রীকে, আমার জন্য নিরামিশ রান্না করো, আমি স্বস্তয়নী নিয়েছি। রেগে স্ত্রী বললেন, রান্নার লোক নিয়ে আসো, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এসে দেখি নতুন হাড়িতে রান্নাবান্না সব তৈরি – আজও তা অব্যাহত।

যা দেখিনি নিজ নয়নে – বিশ্বাস করি না গুরুর বচনেঃ  অবিশ্বাস্য এক লীলা দেখার সৈভাগ্য হয়েছিল। সুনামী হয়েছিল যখন। দেওঘরে ১৫দিন ধরে উৎসব চলছে। দায়িত্ব নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সৎসঙ্গ। সুনামীর পূর্বাবাস – সতর্কতা, সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। ৫ লাখ লোক সরিয়ে ফেলা হল পশ্চিমবঙ্গের ঝুকিপূর্ণ জায়গা থেকে। চলছে মাইকিং, টিভি সম্প্রচার সতর্কতা সবখানে। আচার্য্যদেব সন্ধ্যায় অস্থির হাটা-হাটি করছেন। হঠাৎ নিজের ঘরে ঢুকে দরজা জানালা বন্ধ করে দিলেন। প্রকৃতির সঙ্গে বোঝাপড়া করলেন সারারাত। ঐদিকে বাবাই দাকে পাঠালেন কোলকাতা। প্রকৃত শান্ত হল। কোলকাতার লোকেদের কোন ক্ষতি হয়নি। পরদিন সকালে প্রার্থনা শেষে আচার্য্যদেবের পার্লারে গেলাম – তিনি তখনও রুম থেকে নামেননি।

বৌদিমনি দোতালায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায়। আমাদের অনেক লোকের পায়তারা দেখে হাত জোড় করে বললেন, Please আপনারা আচার্য্যদেবকে একা থাকতে দিন। সারারাত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। না হলে যে সুনামীতে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতিতে মানুষের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যেত, ম্লান হয়ে যেত উৎসব অঙ্গন। যান সবাই, বেশি বেশি করে নাম করুন।

সারাজীবন বললেও তাঁর দয়ার কথা বলে শেষ হবে না। আমি নরাধম, আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি ঠাকুর। তোমার চরণাশ্রিত হওয়ার পর থেকেই যে তুমি সব কিছুর দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছ। শুধু তাই নয়কো, উৎসাহ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছ, পরম মমতায় বলেছ –

১। জীবনকে যেভাবে বলি দেবে, নিশ্চয় তেমনতর জীবন লাভ করবে।একটা চাইতে গিয়ে দশটা চেয়ে ব’সোনা, একেরই যাতে চরম হয় তাই কর, সবগুলিই পাবে।

২। উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হও আর প্রশান্তচিত্তে সমস্ত সহ্য কর, তবেই তোমার উদ্দেশ্য সফল হবে।

৩। হৃদয় দাও, হটে যেতে হবে না।

৪। নির্ভর কর, কখনও ভয় পাবে না।

৫। বিশ্বাস কর, অন্তরের অধিকারী হবে।

৬।সাহস দাও, কিন্তু শঙ্কা জাগিয়ে না দিতে চেষ্টা কর।

৭। ধৈর্য্য ধর, বিপদ কেটে যাবে।

৮। কেহ তোমাকে দোষী করবার পূর্বেই কাতরভাবে নিজদোষ স্বীকার কর, কলঙ্কমুক্ত হবে, জগতের স্নেহের পাত্র হবে।

৯। সংযত হও, নির্ভীক হও।

১০। সরল হও, কিন্তু বেকুব হ’য়ো না।

১১। বিনীত হও, তাই বলে দুর্বল হৃদয় হ’য়ো না।

১২। সাধু সেজো না, সাধু হ’তে চেষ্টা কর।

চলুন আমরা ‘হও’য়াগুলোকে পাওয়ায় রুপান্তরিত করি তাঁরই নির্দেশিত পথে চলে। চলুক সবাইকে ঠাকুরের সাথে সৎ নামে যুক্ত করার প্রচেষ্টা। তা হলেই তো বাঁচব সকলে, ভালো থাকবো সবাই। চলুন সবাই একত্রে সম্মিলিত প্রয়াসে ঠাকুরের কাজে লিপ্ত থেকে ধন্য করি নিজেদেরকে।

জয়গুরু সকলকে।
লেখকঃ  সাবেক সভাপতি, সৎসঙ্গ ঢাকা।

Print Friendly, PDF & Email