May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

“শুভ জন্মদিনে” পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র ও সৎসঙ্গ

ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য : অত্যাশ্চর্য ধর্ম সমন্বয়ের বাণী নিয়ে তাঁর আবির্ভাব। মানুষের জন্য- সে হোক হিন্দু বা মুসলিম, বৌদ্ধ অথবা খ্রিষ্টান প্রতিপ্রত্যেকে প্রকৃষ্ট রূপে আদর্শানুসারে যার যার প্রেরিত পুরুষ অথবা পয়গম্বরকে সঠিকভাবে অনুসরনের মাধ্যমে আদর্শ মানুষ হওয়ার বিশ্বব্যাপী কয়েক কোটি মানুষের যে কারখানা তার নাম সৎসঙ্গ এবং ইহার প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র।
সারা বিশ্বে আছে সৎসঙ্গের কয়েক হাজার মন্দির- সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত এমনকি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে সৎসঙ্গের আন্দোলন। এখানে কোন মতভেদ নেই কারণ সবাই একই ঈশ্বরের সৃষ্ট মানুষ, এই বিশ্বাস নিয়ে চলছে সৎসঙ্গ। আর সকল ধর্মের মানুষকে প্রেমে আবদ্ধ করার কৃতিত্ত্বের জন্য তাঁর অনুসারীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের নামের আগে বিশেষণ জুড়ে দিয়েছেন “পরম প্রেমময়”।
ধর্ম নিয়ে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হওয়ার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর বাণীর মাধ্যমে বলছেন, “ঈশ্বর এক, ধর্ম এক, প্রেরিত পুরুষেরা একই বার্তাবাহী ও একই সত্তাবাহী”। সৎসঙ্গের ব্যাখ্যা হচ্ছে সকল পয়গম্বরই মানুষের শান্তির জন্যে, স্বস্তরি জন্যে ঈশ্বরের বাণী নিয়ে এসেছেন। তাই প্রত্যেক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের প্রেরিত পুরুষকে একইভাবে শ্রদ্ধা বা ভক্তি করবে কারণ কোন ধর্মেই মানুষকে ধ্বংস করার মতো এমনতর কোন বাণী প্রদান করা হয়নি। তবে সে নির্দিষ্ট ধর্মের জন্যে ওই পয়গম্বরই একমাত্র এবং শ্রেষ্ঠ, কারণ তিনি সেই সময়ের মানুষের সভ্যতা অনুযায়ী সত্য বাণী তথা উপলব্ধি করার মতো নির্দেশনা নিয়ে এসেছেন।
বিশ্বে ধর্ম নিয়ে শত রকমের ব্যাখ্যা ও অনুশাসনকে একই বৃত্তে আবদ্ধ করেছে সৎসঙ্গ, যেখানে প্রায় বিশ হাজারেরও উর্দ্ধে বিভিন্ন বাণী সমৃদ্ধ গ্রন্থ আছে সেগুলোর মধ্যে সত্যানুসরণ, রসূল গীতা ইত্যাদি অন্যতম। সত্যানুসরণ গ্রন্থখানি স্বয়ং শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীহস্ত লিখিত বাণী গ্রন্থ, যার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সৎসঙ্গ পরিবার যার যার মত ও পথ অনুযায়ী ধর্ম পালন করে যাচ্ছে ও বিকর্শিত হচ্ছে তাই সৎসঙ্গে আছে সকল ধর্মের মানুষ।

শ্রীশ্রীঠাকুর “তপোবিধায়ণা” গ্রন্থে নিন্ম লিখিত বাণীটি দিয়েছেন, যেমন:
তুমি মানুষ, মানুষের সাথে
তোমার কোন দ্বন্ধ নেই কো
যে কেউই হোকনা কেনো
সে তোমারই একটা অন্য অবস্থিতি
জীবন নিস্তব্ধ নয়কো
দু:খ, কষ্ট, দারিদ্র, জরা, মৃত্যু-
এর সাথে লড়াই করে জয়লাভ কর
তবে তো প্রকৃত জয়ের সম্ভাবনা
তোমাতে ফুটন্ত হয়ে উঠবে;
অসৎ-নিরোধ করে
এমনতর ভাবে তোমার সত্তার প্রতিষ্ঠা কর-
অমরণ অভিসারে
ধন্য হও তুমি, ধন্য হোক সবাই। {বাণী সংখ্যা-১৩০}

ধর্ম সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের ছড়া নিম্ন রূপ:
ধর্মে সবাই বাঁচে বাড়ে
সম্প্রদায়টা ধর্ম নাড়ে
তারপর বললেন-
অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে
ধর্ম বলে জানিস তাকে।

“প্রেরিত পুরুষ” সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী “অনুশ্রুতি” ১ম খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে তা নিম্নরূপ:
কৃষ্ণ-রসূল বিভেদ করে
বুদ্ধ ঈশায় প্রভেদ গনিস্
আরে, ওরে ধর্ম কসাই
কুটিল দোজখ মনেই রাখিস
এক বাপেরই পাঁচটি ছেলে
দেখলিনা তুই চোখটি মেলে,
কাউকে বাপের করলি স্বীকার
কাউকে বললি নয়,
কারে রে তুই দিলি ধিক্কার
গাইলি কাহার জয়? {বাণী সংখ্যা- ৪৪}

সৎসঙ্গ নাস্তিকতায় বিশ্বাস করেনা। শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন- “আমি চলছি, ভিড়ছি, কথা বলছি, খাচ্ছি, বাঁচতে চাচ্ছি অনন্তকাল অথচ বলছি নাস্তিক তা হয় কি করে? ভগবানের অস্তিত্ব না মানলেও নিজের অস্তিত্ব তো অস্বীকার করার উপায় নেই” {আলোচনা প্রসঙ্গে ১৪শ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৯৩}
১৮৮৮খ্রি: মোতাবেক ১২৯৫ সালের ৩০শে ভাদ্র পাবনা জেলার হেমায়েত পুরে এই মহানপুরুষ জন্মগ্রহণ করেন। আজিকার দিনে তাকে অভিবাদন।

লেখক : অবসর প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান; অধ্যক্ষ, রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়, কবি, প্রাবন্ধিক।

Print Friendly, PDF & Email