গাজী জহিরুল ইসলাম : “জাতির পিতা” ইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করে থাকে জামাত ,বিএনপি ৷ জামাত , বিএনপি স্বাধীনতার দির্ঘদিন পরও প্রায়শই “জাতির পিতা” ইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করে থাকে৷
এক সময় বিভ্রান্ত করতে চেস্টা করছিল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে দেশ ভারত হয়ে যাবে, কোন মুসলমান প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করতে পারবেন, মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি শোনা যাবে না বলে মুসলমানের চেতনায় আঘাত লাগে সেই অপচেষ্টা ব্যার্থ হয়ে নতুন বিতর্কে যাচ্ছে ৷ তাদের অপ প্রচার এখন আর মানুষ পছন্দ করে না৷ তথা কথিত জামাত বিএনপির মতে “আমরা মুসলিম, আর মুসলিম জাতির পিতা হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ), বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা হতে পারেন না।”
জাতি বলতে কোন একক অংশকে বুঝায় না। জাতির বহুরূপতা আছে । যেমন – দেশ জাতি, ভাষা জাতি, ধর্ম জাতি, বর্ণ জাতি, গোত্র জাতি, প্রভৃতি।
আমরা এক এক জন মানুষ একই সাথে বহুজাতির মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। যেমন – আমি দেশ জাতি হিসেবে একজন বাংলাদেশি, ভাষা জাতি হিসেবে একজন বাঙ্গালি, ধর্ম জাতি হিসেবে একজন মুসলিম/হিন্দু, বর্ণ জাতি হিসেবে একজন শ্বেতাঙ্গ/কৃষ্ণাঙ্গ ইত্যাদি। এত গুলো বিভাজিত জাতির মধ্যে যে যে অংশে যে নেতার অবদান সে সে অংশে বা গন্ডিতে তিনিই জাতির পিতা।
মানুষের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সৃষ্টি হয়, মানুষেই সৃষ্টি করে ইতিহাস, সেই ইতিহাসের সামনে কখনো কখনো কিংবদন্তিতুল্য নেতা ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বাঙালির শত বছরের মুক্তি সংগ্রামে হিমালয়তুল্য যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তিনি হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতিতে আমি / আমরা মুসলিম সে জাতির আঙ্গিকে আমার জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ:) এবং যে জাতিতে আমি একজন বাঙ্গালি সে জাতির আঙ্গিকে আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমান, এই কথাটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
আসুন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে যদি আমরা দেখি বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গালি জাতির জনক বললে ক্ষতি আছে কি’ না?
আল্লাহ তা’লা বলেছেন – ﻣِّﻠَّﺔَ ﺃَﺑِﻴﻜُﻢْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ۚ ﻫُﻮَ ﺳَﻤَّﺎﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ
অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। তিনিই তোমাদের কে মুসলিম নাম প্রদান করেছেন পূর্বেও আর পরেও।
(সূরা- আল হাজ্জঃ ৭৮)
এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীন দ্বারা ধর্মকে বুঝায়। তাই এখানে ইব্রাহীম(আঃ) এর সাথে পিতা, ধর্ম, এবং মুসলিম । এই তিনটি শব্দ স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যার অর্থ দাঁড়ায় মুসলিম ধর্মের জাতির পিতা। তাই এই নিয়ে বিতর্কের কোন স্থান নেই। আমাদের মধ্যে যদি কেউ বঙ্গবন্ধূকে এই বলে জাতির পিতা বলতে অস্বীকার করে যে ’ইব্রাহীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নয়।
মুসলিম দেশের জাতির পিতা পাকিস্থানের জাতির পিতা (বাবা-এ-কওম) কায়েদে আজম জিন্নাহ। বলা বাহুল্য জামাতীরা এখন বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে নারাজ, কিন্তু তারা কায়েদে আজম জিন্নাহ কে খুব জাতির পিতা মেনেছেন। তখন ধর্ম যুক্তি কিছুই প্রয়োজন হয় নি। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতে জাতির পিতা হলেন জনাব সূকর্ণ সাহেব। ইরানের মত এত বড় ধর্মীয় অনুশাসনের দেশেও জাতির পিতা আছেন, আর তিনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হযরত আল্লামা আয়েতুল্লাহ খামেনী (রহঃ)। তিনি হাদিস কোরআনে প্রচুর ধারণা রাখতেন। সেখানে কোন ধর্মীয় বিরোধ নেই জাতির পিতা মানার ক্ষেত্রে। একমাত্র ইউরোপিও মুসলিম দেশ তুর্কিস্থান, সেখানে জাতির পিতা কামাল অর্তুত পাশা। ফিলিস্তিন, যে দেশ ইহুদি দ্বারা আক্রান্ত, সে দেশের জাতির পিতা হলেন ইয়াসির আরাফাত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শেখ যায়েদ বীন সুলতান নাহিয়্যান, আফগানিস্তানে মুহাম্মাদ জহীর শাহ্ । ঠিক এভাবেই আরও অনেক মুসলিম দেশেই জাতির পিতা আছে, মানা হয়।
অন্যান্য মুসলিম দেশের মতই আমাদের দেশের জাতির পিতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এতে কোন ভাবেই ধর্মীয় বিরোধ নেই। তবে কোন জাতি তা উল্লেখ করতে হবে। আর তা হলো বাঙ্গালি জাতি। আমাদের বলতে হবে, ”বাঙ্গালী জাতির জনক তথা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
এখানে তুলনা করা বা না মানা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন । কারন নবী-রাসুলগণের সাথে কারোরই তুলনা চলে না। কিন্তু বিএনপি জামায়াত শিবির এই বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চায় ।
ওদের বিভ্রান্তি আর থাকবেনা নতুন প্রজন্ম এখন ইতিহাস জানতে শিখেছে৷ ওরা জানে আমাদের জাতির জনক কে৷
লেখক : সম্পাদক, সি নিউজ২৪ ডটকম।
এ বিভাগের আরো..
অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয়
সংসদ সদস্যকে আইন প্রনয়ন নয়, মানতেও হবে
জাতীয় চারনেতা হত্যা নেপথ্যে থাকা কুশলীব কারা