April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সন্ত্রাসবাদ ও বাংলাদেশ

নাদীম কাদির: বাংলাদেশে দুটো সন্ত্রাসী হামলার পর স্বাভাবিকভাবেই লন্ডনে কারও সঙ্গে দেখা হলেই এ প্রসঙ্গে নানা কথা বলেন। তারা অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গেই নানা রকম প্রশ্নও করেন।
এর মধ্যে অন্যতম প্রধান জিজ্ঞাসা, বাংলাদেশ কেন উগ্র ইসলামী গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তু হলো এবং এজন্য কী করা উচিত সে বিষয়ে তাদের মতামতও জানায়।
অনেকেই বাংলাদেশের দুঃখজনক ইতিহাস জানেন না, তারা জানেন না কী করে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিল পাকিস্তানপন্থী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি। এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ, যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানপন্থীমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন।
কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান আলোচ্য এই বিষয়টি এবং আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে একে ব্যাখ্যা করা খুব সহজ নয়, যেখানে গ্রেফতারকৃতদের থেকে স্পষ্ট, বিএনপি এবং তার দোসর জামায়াত ইসলামী এই উগ্রপন্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
প্রথম কাজ হচ্ছে উর্দু ভাষাভাষী বিহারিসহ সকল পাকিস্তানপন্থীদের নির্মূল করা। আমার সূত্র জানিয়েছে, বিহারি ক্যাম্পগুলো অপরাধ ও বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের আখড়া। অনেক স্বচ্ছল বিহারিরা এখন মূলধারায় মিশে গিয়েছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্থানপন্থীদের তহবিল প্রদান ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ কেন এই আটকে পড়া পাকিস্তানিদের পালন করতে থাকবে? ১৯৭১ সালে তারা শুধু যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন তাই নয়, বরং তারা নিজেরাও লুট, সহিংসতা ও বাঙালি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন।
আমরা ১৯৭১-এ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় ছিলাম, সেখানে আমার বাবা বিহারি প্রতিবেশীদের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন কারণ তারা বাঙালিদের বিরোধিতা করেছে ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছে। আমার বিশ্বাস, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এরা আজ বাদে কাল পৃথিবীর মানচিত্রে হাজির হওয়া বাংলাদেশ নামের দেশটির সঙ্গে কখনই একাত্মবোধ করবে না।
আরেকটি বড় বিষয়, ছোট বড় মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের দেওয়া ধর্মপোদেশগুলোর দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। আমি একবার মহাখালীতে একটি বড় মসজিদে গিয়েছিলাম, মসজিদটি নির্মিত হয়েছে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন তহবিলের অর্থায়নে। ইমাম ভুলভাল ইসলাম শেখাচ্ছিলেন, ইসলামিক বাংলাদেশের জন্য জিহাদের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। মোনাজাতের সময় যুদ্ধাপরাধী মওলানা আব্দুল মান্নানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন। আমি আমার হাত নামিয়ে মসজিদ ছেড়ে বের হয়ে গেলে উপস্থিত অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। সম্ভবত তারা কেউই খেয়াল করেননি কার জন্য দোয়া করা হচ্ছে।
মসজিদ আল্লাহর দরবার এবং সেখানে সবাই আমন্ত্রিত। কিন্তু গুলশান এলাকার মসজিদের ইমাম বলছিলেন যারা রোজা রাখেননি অথবা নানা রকম অপরাধ করেছেন তারা ঈদের নামাজের জামাতে আসতে পারবেন না। একটা ডাহা মিথ্যা।

বাংলাদেশে ইসলামের নামে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ফলানোর আরেকটি উৎস এই অভিজাত এলাকার মসজিদগুলোর ইমামরা। ছোট থেকে বড় সব মসজিদের ভেতরের খবর জানা উচিত, বিশেষত যাদের জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে প্রয়োজনে তাদের পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত নতুন প্রজন্মের ইমামদের নিয়োগ দিতে হবে।

সৌদি আরব থেকে আলেমদের বাংলাদেশ সফরে আনতে হবে, তারা ভুল ইসলাম শেখা মানুষকে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বয়ান দেবেন।

সবশেষে বলা যেতে পারে, এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। সকল গণমাধ্যমকে একযোগে দাঁড়িয়ে প্রচার করতে হবে ইসলামের মূল বার্তা- ভালোবাসা ও শান্তি।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার,লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার এবং সদস্য প্রজন্ম’৭১।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email