May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

এই হাসি কিসের?

নাদিম মাহমুদ : আজ সারাদিন একটি ভিডিও নিয়ে ফেইসবুকে বন্ধু তালিকায় অনেক হাসির মহড়া বসিয়ে দিয়েছে। অনেকে তো ‘মেধাবী’ নেই নেই বলে চিৎকার করতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ শিক্ষা ব্যবস্থার গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলছে। আসুন আপনাদের হাসি রহস্যটা একটু উম্মোচন করি।
আচ্ছা ধরুন ক্লাস টু তে পড়ে এমন এক শিক্ষার্থীকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা সূত্র কিংবা রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো? উত্তরটা কি পাবেন তা নিশ্চয় জানেন?
আবার ধরুন স্নাতকোত্তরে পড়ে এমন একটি শিক্ষার্থীকে বীজগণিতের মৌলিক কয়েকটি সূত্র জিজ্ঞাসা করুন অথবা পাটিগনিতের সুদ-আসলের একটি অংক দিন? দেখুন কয়জন এই প্রশ্নের উত্তর দেয়?
আজ যারা হাসলেন, তারা কি জানেন, যে প্রশ্নগুলো আমার সহকর্মী সাংবাদিক বন্ধু জিজ্ঞাসা করছে সেই প্রশ্ন কখন করা উচিত? কেউ কি বলতে পারবেন, এই প্রশ্নগুলোর শতকরা কতভাগ বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (বিসিএস) পরীক্ষায় আসে?
এরা তো কেবল এসএসসি পাশ করলো, এরপর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে আরো আট বছর পর এই প্রশ্নের মুখামুখি হবে আর আপনি আট বছর আগে তাদের কাছ থেকে উত্তর চাচ্ছেন তা কি করে হয়?
আমার কাছে এই এসএসসি উত্তীন্নদের কাছে প্রশ্ন করা আর দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের কাছে আইনস্টাইনের সূত্র মেলে ধরা একই মনে হয়। আমরা যারা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকুরিজীবনে প্রবেশের আগে এই প্রশ্নগুলো সমাধান করি কিন্তু এদের কাছ থেকে এই প্রশ্ন উত্তর না মেলে তাতে হাসির কি আছে বলুন?
আপনার আমার মেধার জোর দেখেই তো আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র বিসিএস নামক এক আজব পরীক্ষায় ‘সাধারন জ্ঞান’ একটি অংশ রেখে দিয়েছে। যেখানে আপনার কাছ থেকে চাওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর, রাষ্ট্রপ্রতির নাম, হ্যান ত্যান সব প্রশ্ন। ওরা যদি এসএসসির পরপরই যদি এইসব প্রশ্নে উত্তর দিতে শিখে ফেলে তাহলে তো আর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দরকার নেই বাপু। এই জিপিএ-৫ দিয়ে তো ফুলশিরাত পার করে দিবে। যদি উত্তর দেয় তাহলে তো ওরাও বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। দিবেন নাকি বসতে?
সমস্যার গোড়ায় হাত না দিয়ে উপরে কচলায়ে তো আর বেশি তিতা করে দিচ্ছেন তা কি ভেবেছেন? আজ একটি ভিডিও বের হয়েছে আর তাতে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন, ছি ছি রব তুলে দিয়েছেন।
কিন্তু এরা যখন পিএসসি, জেএসসি, এসএসসিতে ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ঘরে ফিরে। স্বতির বায়ু ছাড়ে আমাদের শিক্ষামন্ত্রণালয় তখন কি তো আপনারা হাসেন না। এমনকি একটি স্টাটার্সও আসে না।
আর এটাই আমাদের ধ্বংসের মূল রচনা করে দিয়েছে। প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষায় ফাঁসকৃত প্রশ্ন আর ধ্বজা ধরা সৃজনশীলতা আমাদের বড্ড সৃজন করে তুলছে। যার দরুন আজ ক্যামেরার সামনে জাতির ভবিষৎ প্রস্ফূটিত করে দেয়। আর আমি-আপনি তা দেখে হাসিরচ্ছ্বলে থুঁথু বের করে দিচ্ছি।
আপনার বিবেকে কি কখনো আঘাত দিয়েছিল, যখন গত বছর মেডিকেল পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল। একবারও কি তাদের সাথে রাস্তায় গিয়ে সহমর্মতা জানিয়েছেন? ধর্ষন হয় রাস্তায় নামেন, জয় হয় মিছিল করেন, কিন্তু আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ধর্ষন করে সেঞ্চুরি করছে তার হিসেব কি মিলাতে পারবেন?
সমস্যার কুঠারাঘাত করা বড্ড জরুরী হয়ে গেছে মহাশয়। এইসব স্টাটার্স দিয়ে কাম হবে না। আর যারা এতোক্ষণ এই কমলমতি বন্ধুদের গালিগালাজ করেছেন তারা একটু থামেন। এরা মেধাবী। এদের মেধা জিপিএ-৫ গিয়ে ঠেকে গেছে। কিন্তু মেধার স্কেল তো জিপিএ-৫ নয়। সারাজীবন তো আর জিপিএ-৫ ঘরে জুটবে না। কর্মজীবনে কেউ তো জিপিএ৫ দিবে না তাহলে এই মেধার স্ফূটন কি তখন দেখা যাবে?
আমি হতাশ কিন্তু আশান্বিত। মুলা ঝুলিয়ে সামনে এগানোর চেয়ে মুলা চাষ করার কৌশল জানা জরুরী। আজ যদি আপনি এই হাসি দিয়ে সব কিছু বিচার করতে থাকেন তাহলে আমি বলবো, আমাদের পিছিয়ে নেয়ার জন্য আমরােই দায়ী। আমরা কখনো মুখে কথা বলতেও ভুলে গেছি যে আমাদের ভবিষৎ অস্তিমিত। সরকারকে অনুরোধ করবো, প্লিজ আমাদের অন্ধকারে নিয়েন না। অন্তত এই একটি আলো জ্বালিয়ে রাখুন, আপনাদের অন্ধকার ঘর এই আলোতে প্রজ্বলিত হবে।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক।

Print Friendly, PDF & Email