May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

‘বিরোধীদলকে চাপে রাখার কারণেই বাংলাদেশে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে’

ডেস্ক: বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার চেয়ে সুশাসনের বিষয়টিই বেশি জড়িত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এর বিরোধী দলগুলোকে প্রচণ্ড চাপে রেখেছে, যার শুরু হয় ২০১৪ সালে সর্বশেষ নির্বাচনের পর। আর এ কারণেই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ওয়াশিংটন ডিসির উড্রো উইলসন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক উইলিয়াম বি মাইলাম এ মন্তব্য করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড এবং এই গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিজের মত তুলে ধরেন এই মার্কিন বিশ্লেষক।
নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে উইলিয়াম বি মাইলাম বাংলাদেশে বৌদ্ধভিক্ষু, জুলহাজ হত্যাকাণ্ডসহ ২৫টি হত্যার কথা বলেন। তিনি লিখেছেন, এসব হত্যাকাণ্ডের কয়েকটি জনসমক্ষেই ঘটেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নাস্তিক অথবা বাকস্বাধীনতার পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের ওপর এই হত্যার শুরু হয় গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। অনেকে হামলার শিকার হয়েও বেঁচে গেছেন। ২০টি বেশি হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), কয়েক ডজনের হামলার দাবি আল-কায়েদার। আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো দুটি হামলার দায় স্বীকার করেছে বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী জামা’আতুল মুজাহিদীন ও আনসার আল-ইসলাম।
স্বভাবতই জঙ্গি হামলার ঘটনা পশ্চিমা দেশগুলোকে বিচলিত করে। অনেক পশ্চিমা দেশ এই সংকটে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচলে নিরাপত্তায় সহায়তা করছে জাপান। জঙ্গি ও চরমপন্থীদের দমনে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
উইলিয়াম বি মাইলাম লিখেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল বিশ্লেষণের কারণে এটি ভুলপথে চলতে পারে এবং দেখা দিতে পারে আরো বিপজ্জনক হয়ে।
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কথা তুলে ধরে উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপর দলকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা দেখা যায় না। ওই বছর থেকে দেশটির দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, অপর দলকে চাপে রাখার চেষ্টা করে। এ কারণেই অর্থনৈতিক বিস্তারের বিষয়টি বেসরকারি খাতকেই করতে হয় এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নসহ যেসব সেবা সরকার দেয় না, এনজিওরা সরবরাহ করে।
উইলিয়াম বি মাইলামের মতে, বাংলাদেশের সরকারের কার্যত এমন ব্যর্থতাই দেশের জন্য ইতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়। দুই দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ শতাংশের মতো বাড়ছে। সামাজিক ও স্বাস্থ্যের অনেক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে খারাপের দিকে গেছে।
মাইলামের নিবন্ধে বলা হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে কার্যত এক দলের রাষ্ট্র বানিয়েছে। সরকারের কথিত আইন প্রয়োগের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো বিএনপি। রুটিনমাফিক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আইন বিভাগ ও পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও সরকারের নেতাদের দাবি হলো, দেশে কোনো আল-কায়েদা অথবা ইসলামিক স্টেট নেই। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপি এবং অন্য বিরোধীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান হত্যাকাণ্ডের পরও সরকারের পক্ষ থেকে এমন দাবি দেখা গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে মাইলাম আরো লিখেছেন, বাংলাদেশের সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে হিন্দু নেতাদের এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাই নিজ ধর্ম পালনের অধিকার আছে, কিন্তু অন্য ধর্মকে আঘাত করার অধিকার নেই। গত মাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে ব্লগারদের ইসলাম সমালোচনাকে ‘বাজে লেখা’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এসব লেখার কারণে কোনো ঘটনা ঘটলে সরকার কেন এর দায়িত্ব নেবে।
মাইলামের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গি আশঙ্কার বিষয়টির পরিমাপ বেশ কষ্টকর। একই অবস্থা এসব হামলায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক খুঁজে বের করা। এর ধরন যাই হোক, মূলধারার ওপর সরকারের অব্যাহত চাপেরই ফলাফল এটি। তাই একে সরকারের সমস্যা হিসেবে না দেখে নিরাপত্তার সমস্যা হিসেবে দেখা ভুল হবে। এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে দেখা দিতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email