April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

কথা বলা প্রয়োজন সামগ্রিক খবরদারি ও কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে

সঞ্জয় দে : ওয়ান-ইলেভেনের সময় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহ করা সংবাদ ছাপানোর অভিযোগ স্বীকার করেছেন সাংবাদিক মাহফুজ আনাম। এতে বিস্ময়-উদ্বেগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সম্ভবত দেশের সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।

সাংবাদিকদের এই প্রতিক্রিয়াই বরং আমাকে বেশি বিস্মিত করছে। কারণ, খুব সামান্য একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে এক যুগের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে এটি কোনো বিস্ফোরণমূলক তথ্য মনে হয়নি। কারণ, যারা আমরা এই মাধ্যমটিতে কাজ করছি তারা সবাই তো কোনো না কোনোভাবে এই ‘অপরাধ’ করেছি বা করে চলেছি।

ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে খুব পরিষ্কার মনে করতে পারি আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের কথিত জবানবন্দির কথা। আমি তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে কাজ করি। সেনা গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এই জবানবন্দির একটি সিডি আমরাও পেয়েছিলাম। বিডিনিউজ এই খবর প্রকাশ করেনি। তবে প্রথম আলোসহ আরো বেশকিছু সংবাদপত্রে সেটি খুব বড় করে ছাপা হয়েছিল। সেই সময়ে বিডিনিউজের একজন কর্মী হিসেবে গর্বিত হয়েছিলাম।

অথচ এর কয়েক মাস পরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম সাজেকে গিয়েছিলাম পাহাড়িদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার খবর সংগ্রহে। পাহাড়িদের অভিযোগ ছিল, সহিংসতার পেছনে সেনা মদদের। সেই প্রতিবেদনটি কিন্তু বিডিনিউজে আর প্রকাশিত হয়নি।

আমরা সংবাদকর্মীরা যদি সত্যিই মুক্ত সাংবাদিকতার চর্চা নিয়ে উদ্‌গ্রীব হই, তাহলে একজন মাহফুজ আনামকে নিয়েই আলোচনা চালিয়ে গেলে খুব ভালো ফল আসবে বলে মনে করি না। আমাদের কথা বলা প্রয়োজন সামগ্রিক খবরদারি ও কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে সাংবাদিকতায় দুর্বৃত্তায়ন- যার সুযোগ নিয়ে অন্য পক্ষের কর্তৃত্ব ও খবরদারির পথ সুগম হয় সেসব নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।

পাশাপাশি স্বাধীনতার নামে দৈনিক আমার দেশ-এর মতো স্বেচ্ছাচার এবং অসাংবাদিককে সাংবাদিক করে তোলার প্রচেষ্টা প্রতিরোধের উদ্যোগটিও নেয়া জরুরি।

খুব শিগগির এসব হবে বলে আমি খুব একটা আশাবাদী নই, তবে সাংবাদিক মাহফুজ আনমকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক যদি একটি সত্যিকারের নৈতিকতাপূর্ণ স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম গড়ে তোলার আন্দোলনের দিকে নেয়া সম্ভব হয় তবে হয়ত কিছুটা হলেও আশার ঝিলিক তৈরি হতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email