May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ঢাকায় ভূমিকম্প:আমাদের প্রস্তুতি ও সাবধানতা “পৃথিবীর ভয়ঙ্কর যত ভূমিকম্প”

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: ভূমিকম্প নিয়ে কমবেশি আতঙ্ক সবার মধ্যেই আছে।রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (৫ মে ২০২৩) সকাল ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়।

রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এর উৎপত্তিস্থল রাজধানী থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে দোহারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানান, ভোর ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে ভূমিকম্প হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল আগারগাঁও ভূমিকম্প পরিমাপক কেন্দ্র থেকে ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে দোহারে।

হালকা এ ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলে মাত্রা ৪ দশমিক ৩ ছিল বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। যার গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

তবে প্রাথমিকভাবে এ ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর জানানো হয়েছে।

এর আগে সবশেষ গত ৩০ এপ্রিল দুপুর চট্টগ্রামে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়। ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মাওলাই নামক স্থানে।১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪টি মাঝারি মানের ভূমিকম্প বাংলাদেশ ও এর আশপাশ অঞ্চলে হয়েছে, যার অধিকাংশেরই উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত; বিশেষ করে ত্রিপুরা, আসাম ও মিজোরাম অঞ্চলে। ১৯৮৮ সালে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প সিলেট অঞ্চল বেশ জোরেশোরে কেঁপে উঠে, যার স্থায়িত্ব ছিল ৫০ সেকেন্ডেরও বেশি। আর এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এবং এর পরের বছর ১৯৮৯ সালে ফের সিলেট ও এর আশপাশ এলাকা প্রায় ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এলাকাগুলোতে ৫.৩ মাত্রার ভূকম্পন সংঘটিত হয়। ২০০৩ সালে পার্বত্য অঞ্চলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, যার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৪০ সেকেন্ডের মতো। সেসময় পুরো পার্বত্য এলাকাজুড়েই প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়েছিল, যদিও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ২০২১ সালে ২ ফেব্রুয়ারির সকাল ৬টায়, ৭ জুলাই বিকাল ৩টা ও অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে মোট তিনটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, যার স্থায়িত্ব ছিল ৩০ থেকে ৫০ সেকেন্ডের মতো। ২০২২ সালে ৩০ অক্টোবর ৪.৩ মাত্রার একটি ৪০ সেকেন্ড স্থায়িত্বের ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৮ সালে তিনবার, ২০১৯ সালে একবার, ২০২০ সালে দুবার, ২০২১ সালে তিনবার ও ২০২২ সালে একবার ভূকম্পন হয়েছে এ অঞ্চলে, যার গড় মাত্রা ছিল ৪.১ থেক ৫.৬ এর মধ্যে।তবে ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া বেশি জরুরি। ভবন বানানোর সময় যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে চলা, সর্বোপরি ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে করণীয় কী, সেসব জানা জরুরি।ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন।ভূ অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে—যেমন, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব—বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প।আর ভূমিকম্প এটি এমন একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ, যার পূর্বাভাস দেয়ার উপায় এখনো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি। আমাদের দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে মানুষ বাড়ার পাশাপাশি আবাসিক-অনাবাসিক স্থাপনা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু সেইসব স্থাপনা কতটা মান সম্পন্ন, বড় ধরনের ভূমিকম্পে সেগুলো টিকে থাকবে কি না এই আশঙ্কা প্রবল। ভূমিকম্পের মতো দূর্যোগে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই আমাদের বড় শহরগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, দেশে ভবন নির্মানে বিল্ডিং কোড মানা হয় না। ফলে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পও মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আর বড় ধরনের ভূমিকম্প ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। তাই ভূমিকম্পের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের স্থাপনা এ দূর্যোগ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভূমিকম্প কেন হয়
ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।

ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হয়ে থাকে। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়ে যেতে পারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ভূমিকম্পের মাত্রা অনুযায়ী ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার নাম রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা—৫ – ৫.৯৯ মাঝারি, ৬ – ৬.৯৯ তীব্র, ৭ – ৭.৯৯ ভয়াবহ এবং ৮-এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ।

তুরস্ক ও সিরিয়া ভূমিকম্প
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি ও সিরিয়ার ৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এএফএডি জানিয়েছে, দেশটিতে ৪৪ হাজার ২১৮ জন মারা গেছেন। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন ৫ হাজার ৯১৪ জন।
এ ভূমিকম্পকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর একটি বলে মনে করা হচ্ছে।এটি একটি বড় ধরণের ভূমিকম্প ছিল। যার মাত্রা ছিল ৭.৮, যেটি ‘উল্লেখযোগ্য’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ফল্ট লাইন বরাবর প্রায় ১০০ কিলোমিটার ধরে এটি আঘাত হেনেছে এবং এর কারণে ভবনগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফাউর ওয়াকার বলেছেন: “যে কোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। গত ১০ বছরের মধ্যে মাত্র দুটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল, আর এর আগের ১০ বছরে মাত্র চারটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল।”
তবে শুধু কম্পনের শক্তির কারণেই এতো বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি। এই ঘটনাটি ঘটেছে ভোরের দিকে, যখন মানুষ ঘরের ভেতরে ঘুমাচ্ছিল। ভবনের দৃঢ়তাও একটি বিষয়।বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই এলাকার মাটির নীচে থাকা অ্যারাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে গিয়ে আনাতোলিয়ান প্লেটে ধাক্কা দিলে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের তৈরি হয়।

একই কারণে ১৮২২ সালেও এখানেই একদফা ভূমিকম্প হয়েছিল। বিশ্বের যেসব এলাকা ভূমিকম্প প্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তুরস্কের এই এলাকাটি তার অন্যতম।

ভূমিকম্প কীভাবে হয়
‘’পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ট আলাদা আলাদা বিট বা প্লেট টেকটোনিক দিয়ে তৈরি হয়েছে, যা নিচের নরম পদার্থের ওপরে ভাসছে। সারা পৃথিবীতে এরকম বড় সাতটি প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট রয়েছে। ‘’

‘’এগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে বা একটি অন্যদিকে ধাক্কা দিতে থাকে, তখন ভূ-তত্ত্বের মাঝে ইলাস্টিক এনার্জি শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। সেটা যখন শিলার ধারণ ক্ষমতার পেরিয়ে যায়, তখন সেই শক্তি কোন বিদ্যমান বা নতুন ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন ভূ-পৃষ্টে কম্পন তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে ভূমিকম্প।‘’

যেসব স্থানে একটি প্লেট এসে আরেকটি প্লেটের কাছাকাছি মিশেছে বা ধাক্কা দিচ্ছে বা ফাটলের তৈরি হয়েছে, সেটাকে বলা হয় ফল্ট লাইন।

বর্তমানে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মি. আখতার বলছেন, ‘’প্লেট বাউন্ডারি যেখানে তৈরি হয়েছে, সেটাকে আমরা বলি ফল্টলাইন। এর আশেপাশের দেশগুলো ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকে।’’

বিশ্বের ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাগুলো শনাক্ত করতে জাতিসংঘ গ্লোবাল সিসমিক হ্যাজার্ড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম নামে একটি কর্মসূচী চালু করেছিল। সেটার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি মানচিত্র তৈরি করা, যাতে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে।

সেই প্রকল্পের আওতায় অতীতে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের তথ্য এবং গবেষণার ভিত্তিতে বিশ্বকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বের যেসব এলাকা বিজ্ঞানীদের বিশেষ নজরে রয়েছে:

বাংলাদেশ
ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভু-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, ‘’উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং দক্ষিণে বার্মা সাব-প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ হয়ে, কিশোরগঞ্জ চট্টগ্রাম হয়ে একেবারে দক্ষিণ সুমাত্রা পর্যন্ত চলে গেছে।‘’

সেখানে দেখা গেছে, ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে দীর্ঘসময় ধরে কোন ভূমিকম্পের শক্তি বের হয়নি। ফলে সেখানে ৪০০ থেকে হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হয়ে রয়েছে।

ইন্ডিয়া প্লেট পূর্ব দিকে বার্মা প্লেটের নীচে তলিয়ে যাচ্ছে আর বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে সেখানে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে, তাতে আট মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হতে পারে।

এটা যেমন একবারে হতে পারে, আবার কয়েকবারেও হতে পারে। তবে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে সাত বা আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু কবে বা কখন সেটা হবে, তা এখনো বিজ্ঞানীদের এখনো ধারণা নেই।’

বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।

ভারত ও নেপাল
সারা বিশ্ব অনেকগুলো টেকটোনিক প্লেটের মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। যখন এসব প্লেট নড়াচড়া করে, যেসব দেশ বা এলাকা সেই প্লেটগুলোর ওপরে অবস্থিত, সেখানে ভূমিকম্প দেখা যায়।

হিমালয়ের পাদদেশে নেপাল যে টেকটোনিক প্লেটের ওপরে বসে রয়েছে, সেটার ওপরেই রয়েছে ভারতের উত্তর অংশ।

ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের কর্মকর্তা রজার মুসন বিবিসি নিউজবিটকে বলেছেন, ‘’সেখানে কোন ভূমিকম্প হলে শনিবারের তুরস্কের ভূমিকম্পের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।‘’

বিশেষ করে কাঠমান্ডুর মতো শহরগুলো বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ এই শহরটি নরম শিলা পাথরের পুরু স্তরের ওপরে তৈরি হয়েছে। ফলে ভূমিকম্প হলে সেখানে কম্পন বেশি অনুভূত হবে।

২০১৫ সালে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং তিব্বত প্লেটের সংঘর্ষে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পে ৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু আর এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।

তুরস্ক
তুরস্ক হচ্ছে আরেকটি দেশ যা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয়েছে।

উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইনটি তুরস্কের পূর্ব থেকে পশ্চিমে বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে।

সেখানে অ্যারাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে গিয়ে আনাতোলিয়ান প্লেটকে ধাক্কা দিয়ে সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনাটি ঘটে।

বিশেষ করে ইস্তানবুলের একটি অংশ এই ফল্ট লাইনের কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে দুইটি প্লেট একে অপরের সঙ্গে প্রায়ই ঘষা লাগছে এবং বিভিন্ন সময়ে ওঠানামা করছে।

ফলে এই এলাকায় মাঝেমাঝেই ভূমিকম্প তৈরি হচ্ছে।

এই এলাকাতেই ১৮২২ সালে ভয়াবহ ৭ দশমিক ৪ মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল।

ইরান
ইরানের রাজধানী তেহরান বসে রয়েছে আরেকটি সক্রিয় ফল্ট লাইন, অ্যারাবিয়ান প্লেটের ওপরে।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষক জন ইলিয়ট বলেছেন, ‘’এই শহরটি ফল্ট লাইনের একেবারে চূড়ায় বসে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার এই ফল্টলাইনটি নড়াচড়া করেছে এবং ভবিষ্যতেও ভূমিকম্পের কারণ হয়ে উঠতে পারে।‘’

২০০৩ সালে ইরানের বাম শহরের কাছাকাছি ৬ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, যার ফলে ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, আহত হয়েছিল বহু মানুষ।

ইরানের এই ফল্ট লাইনটি কৃষ্ণসাগরের পূর্ব তীর থেকে শুরু করে কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ উপকূল পর্যন্ত চলে গেছে।

চীন
ভারত আর ইউরেশিয়ান মাঝে প্লেটের সংঘর্ষের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে চীন।

২০০৮ সালে ওয়েনচুয়ান ভূমিকম্পে ৯০ হাজার মানুষ হতাহত হয়েছিল। সেই সময় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছিল।

‘’এখানে ভূমিকম্পের প্রবণতা কিছুটা অগভীর হয়, ফলে শক্তিশালী কম্পনের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়,‘’ বলেছেন লিভারপুল ইউনিভার্সিটি ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ স্টিফেন হিক্স।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকার পরেও সেসব এলাকার বাড়িঘরগুলো ভূমিকম্প সহনীয়ভাবে তৈরি করা হয় না। ফলে এ ধরনের এলাকায় ভূমিকম্প দেখা দেয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় এবং উদ্ধারকাজেও নানা সমস্যা দেখা যায়।

১৯৫০ সালে তিব্বতে ৮০৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যদিও সেটার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।

জাপান
টোকিও শহরের কাছাকাছি বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। যদিও জন্য জাপানিরা ভালোমতোই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

২০১১ সালে টোকিওতে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, তাতে ভূকম্পনে যতো না মানুষ হতাহত হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি মারা গেছে সুনামির কারণে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, টোকিও শহরের নীচে অগভীরে বেশ কয়েকটি টেকটোনিক প্লেট এসে মিশেছে। বিশেষ করে প্যাসিফিক প্লেটের পশ্চিম দিকে জাপান রয়েছে। ফলে এসব প্লেট নড়াচড়া করলেই সেখানে ভূকম্পন অনুভূত হয়।

পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় জাপানে সবচেয়ে বেশি ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়ে থাকে।

ইন্দোনেশিয়া
জাপানের মতো ইন্দোনেশিয়া, ফিজি এবং টঙ্গার মতো দেশগুলো প্রতিবছরই ছোট ছোট ভূমিকম্প রেকর্ড করে থাকে।

কারণ অস্ট্রেলিয়ান প্লেটটি ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে জড়িয়ে রয়েছে। জাপানেও এর অংশ বিশেষ পড়েছে।

২০১৪ সালে সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে যখন ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন সেটি রেকর্ড তৈরি করে এবং ইতিহাসের বৃহত্তম সুনামির জন্ম দেয়। সেই সুনামিতে দুই লাখের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও জাপান, ফিলিপিন্স সেই সুনামির শিকার হয়েছিল।

ইউরোপ
গ্লোবাল সিসমিক হ্যাজার্ড অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী, তুরস্ক এবং ভূমধ্যসাগরের আশেপাশের কিছু অংশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি রয়েছে।

কারণ এখানে আফ্রিকান মহাদেশীয় প্লেট অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের নীচে ইউরেশিয়ান প্লেটটিকে উপরের দিকে ঠেলতে থাকে বলে ভূমিকম্পের তৈরি হয়। এই কারণে মধ্য ইতালি ও পশ্চিম তুরস্কেও ভূমিকম্প দেখা যায়।

১৯৫৫ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যা এই অঞ্চলের জন্য একটি রেকর্ড।

২০১৬ সালে ইতালির অ্যামাট্রিসা শহরে মাঝারি মাত্রার তিন দফা ভূমিকম্পে তিনশোর বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

নেপালে
নেপালে ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে রাজধানী কাঠমান্ডুর বহু বাড়িঘর ধসে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা
উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, ওয়াশিংটন এবং কানাডার একটি অংশ বড় একটি ফল্ট লাইনের কাছাকাছি রয়েছে।

এই ফল্ট লাইনে দুইটি প্লেট একে অপরের বিপরীত ঘেঁসে রয়েছে। এই প্লেট দুটি হলো হুয়ান ডে ফুকা প্লেট বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট এবং নর্থ আমেরিকান প্লেট।

এই ফল্ট লাইনের আশেপাশে যে বড় শহরগুলো রয়েছে, সেগুলো ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লস অ্যাঞ্জেলস, সানফ্রানসিসকো, সিয়াটল এবং ভ্যাঙ্কুবার।

ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুলের গবেষক স্টিফেন হিকস বলছেন, ‘’এই ফল্টটি বেশ অনেক সময়ের জন্য শান্ত রয়েছে।‘’

তবে তিনি জানিয়েছেন, ২০১১ সালের জাপানের সুনামির পর এই ফল্ট কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে বড় ধরনের গবেষণা করা হচ্ছে।

১৯৬৪ সালে আলাস্কায় ৯ দশমিক ২ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত করেছিল।

চিলি
দক্ষিণ আমেরিকান প্লেটের সঙ্গে বেশ কয়েকটি মহাদেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের কারণে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় প্রায়ই শক্তিশালী ভূমিকম্প দেখা যায়।

বিশেষ করে কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার ক্যারিবিয়ান উপকূল একটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা রয়েছে।

এই এলাকায় সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬০ সালে। সেই সময় চিলির সালভেদরের কাছে ৯ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। তখন বাস্তুচ্যুত হয়েছিল ২০ লাখের বেশি মানুষ।

এরপর ২০১০ সালে কনসেপসিওন শহরের কাছে আরেকটি ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। সেবার নিহত হয়েছিল প্রায় ৫০০ মানুষ। সেই ভূমিকম্পে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এর বাইরেও বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে, যা বিজ্ঞানী বা গবেষকদের ধারণায় ছিল না।

যেমন ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চে ভূমিকম্পের পরেই বিজ্ঞানীরা প্রথম জানতে পারেন যে, সেই শহরের নীচে একটি ফল্ট লাইন রয়েছে।

আলাস্কা: যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য আলাস্কার প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ডে ১৯৬৪ সালে ৯ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ফলে আলাস্কায় ভয়ংকর ভূমিধস ও সুনামিরও সৃষ্টি হয়েছিল। এতে ১২৮ জনের নিহত হয়। এছাড়া ৩১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়।

উত্তর সুমাত্রা: উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে ২০০৪ সালে একটি ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে অন্তত এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। অনেক লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে অনুভূত হয়েছিল এ ভূমিকম্প ও সুনামি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া। দেশটির মৎস্য শিল্প ও কারখানার প্রায় ৬০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যায় এ সময়।

কামচাটকা: ১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর রাশিয়া ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় সুনামি। এ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল কামচাটকা উপদ্বীপ। তিন হাজার মাইলজুড়ে অনুভূত হয়েছিল এ ভূ-কম্পন। এতে নিহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল: ১৭০০ সালের ২৬ জানুয়ারি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তবে এর কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প মনে করা হয় এটিকে। এ ভূমিকম্পের পর সুনামিতে ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পাচেনা উপকূলের অধিবাসীদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

ইকুয়েডরের উপকূল: ১৯০৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সৃষ্টি হওয়া সুনামিতে নিহত হয় ৫০০-র বেশি মানুষ।

আসাম-তিব্বত: ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট বর্তমান ভারতের আসাম ও চীনের তিব্বতে ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এ ভূমিকম্পে আসাম-তিব্বতের ৭০টি গ্রাম ধবংস হয়ে যায়। নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। ভূমিকম্পের পরে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা

ভূমিকম্পের সময় কী করবেন
* ভূমিকম্প হচ্ছে টের পেলে বা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন।
* উঁচু ভবনে থাকলে এবং বের হতে না পারলে জানালা বা দেয়ালের পাশে অবস্থান না নিয়ে শক্ত কোনো বীম, টেবিলের নিচে অবস্থান নিন।
* হতবিহ্বল না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
* বহুতল ভবনে একই জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।
* আপনার মুঠোফোনে ফায়ার সাভির্স এবং দরকারি মোবাইল নম্বরগুলো আগাম সতর্কতা হিসেবে আগেই রেখে দিন। বিপদের সময় আপনার কাজে লাগবে।
* দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।
* ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু [কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলি] ধরে রাখুন।
* গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।
* উচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না।
* ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।
* একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যাকে ‘আফটার শক’ বলে। নিজেকে বিপদমুক্ত।তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সরকারকেই এ বিষয়ে মুখ্য দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে থাকে। একটি ভবন নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব নিয়ম মেনে করছে কি না, তা কঠোরভাবে তদারক করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারকে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে, বড় মাত্রার ভূকম্পন হওয়ার পর কংক্রিটের স্তূপ সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা, শহরের দুর্বল অবকাঠামোগুলোকে চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলা বা রেক্ট্রোফিকেশন করা, নতুন ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড সঠিকভাবে মেনে চলা, রাজউককে শক্তিশালী করা, রাজউক থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা, সঠিকভাবে ভবনের নকশা প্রণয়ন ও তা যাচাই করা, জায়গাভেদে চার-পাঁচতলার বেশি উচ্চভবন না করা, ক্লাস্টার হাউজিংয়ে নিরুৎসাহিত করা, জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ না করা, জলাশয় ভরাট আইনত দণ্ডনীয় তা প্রতিপালন করা, শহরের খালগুলো পুনরুদ্ধার করা, নদীগুলো দূষণমুক্ত রাখা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নিয়ে ভূমিকম্প সেল গঠন করা ইত্যাদি। ভূমিকম্পের ক্ষতি কমাতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ভূমিকম্পবিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা, প্রতিটি অফিসে মাঝেমধ্যে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে তা ব্যাপকহারে শহরের মানুষদের উজ্জীবিত করবে এবং মানুষ ভূমিকম্পের সময়ে করণীয় সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হবে।

লেখক: কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

Print Friendly, PDF & Email