April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শিবচরে সূর্যমুখী ফুলের মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার

মাজহারুল ইসলাম(রুবেল), শিবচর(মাদারীপুর) প্রতিনিধি : বহুমুখী পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ উৎকৃষ্ট তৈলবীজ জাতীয় ফসল। বিদেশি এ ফুলের নাম সূর্যমুখী। বিশ্বে এ ফুলের স্থান চতুর্থ। বিশ্ববাজারে সয়াবিনের পর সূর্যমুখী স্থান দখল করে নিয়েছে। রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে সূর্যমুখীর আবাদ হয় বেশি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এ ফুলের চাষ বেড়ে চলছে।

ফুল কম-বেশি সবাই ভালোবাসেন। কেউ কিনতে, কেউ চাষ করতে, আবার কেউ তার সৌন্দর্য দেখতে ভালোবাসেন। এ দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়, পড়ন্ত বিকেলে একদল মেয়ে সূর্যমুখী ফুলের সাথে হাসছে। দৃষ্টিকাড়া ফুলের সাথে মোবাইল ফোনে ফ্রেমবন্দি করছে প্রিয় মুহূর্তগুলো। কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে
উপভোগ করছে শেষ বিকেলের হলুদ আভা। শিবচর উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে কৃষক পর্যায়ে উৎসাহ এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

শিবচর উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেলজাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অল্প খরচ বেশি লাভ হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড সূর্যমুখী প্যাসিফিক হাইসান- ৩৩ সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দিক পরিবর্তন হয়। সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিকালে দিক পরিবর্তন করে ধাবিত হয় পশ্চিমে। সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। দলে দলে তারা ছুটে আসছেন এসব বাগানে। ছবি তুলে পোস্ট করছেন ফেসবুকে ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পড়ন্ত বিকালে সূর্যমুখীর এ জমিগুলোতে প্রকৃতিপ্রেমীদের বেশ সমাগম ঘটে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সূর্যমুখী চাষের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১০-১২ মণ বীজ পাওয়া যাবে। বিঘাপ্রতি কৃষকরা ২৫-৩৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারেন।

এদিকে সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা সরকারি বোরহানগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী উম্মেহানি ইসলাম (এ্যনি), সানজিদা ইসলাম ও সাদিয়াসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, ‘সব ধরনের ফুল ভালো লাগলেও চারদিকে ফসলি জমির মাঝখানে একসঙ্গে অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল ফোটায় সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে বিমুগ্ধ হয়েছি।’

পাঁচ্চর থেকে ঘুরতে আসা রাজু আহমেদ বলেন, বাসা বাড়িতে বিভিন্ন ফুলের বাগান করা গেলেও সূর্যমুখী ফুলের বাগান করাটা খুব একটা হয়ে উঠে না। এছাড়া একসাথে অনেকগুলো সূর্যমুখী ফুল দেখে মনটা ভরে যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে কাওড়াকান্দি পুরাতন ঘাট এলকার থেকে ঘুরতে আসা জুয়েল-রতনা দম্পতি বলেন, ফেসবুকে দেখার পর আমাদের কাছে ভালো লাগে তাই পরিবারকে নিয়ে হলুদের রাজ্যে আসা। খোলামেলা পরিবেশ, উপরে নীল আকাশের সাথে প্রকৃতির হলুদ মিলে একাকার এক নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে পেলাম।

বাহেরচর এলাকার কৃষক সোহাগ শীল বলেন, ‘আমি ১০০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্তের লোকজন ছুটে আসছেন। বিকালে অনেক লোকজন দেখতে আসেন এ সূর্যমুখী ফুলের জমি। জমির পাশে ছবি তুলে সময় কাটান অনেকেই। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব ইনশাআলস্নাহ। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ধানের পরিবর্তে আগামী বছর আরও জমি বাড়িয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

উপজেলার যাদুয়ারচর এলকার কৃষক শাহিন জমাদ্দারের সূর্যমুখী ফুলের চাষ দেখে মাতোয়ারা ভ্রমণপিপাসুরা প্রকাশ করছেন রোমাঞ্চকর যতসব অনুভূতি।

কৃষক শাহিন জমাদ্দার বলেন, ‘আমার দাবি কৃষি বিভাগ এই বীজ আগ্রহী সবার মাঝে যেন বিতরণ করে। তাহলে শিবচরে তেলজাতীয় আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।’

সন্যাসীরচর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম হীরা বলেন, ‘সূর্যমুখী একদিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।’

শিবচর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল দেখতে শুধু রূপময়ই নয়, গুণেও অনন্য। অন্যান্য তেলের মধ্যে ক্ষতিকারক উপাদান (কোলেস্টেরল) থাকে, কিন্তু সূর্যমুখী তেলে তা নেই। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন এবং পুষ্টিগুণেও অনন্য। বেশি করে এই ফসলের আবাদ করতে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email