May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

বাঙালী জাতীর অংহকার জননেত্রী শেখ হাসিনা

নটো কিশোর আদিত্য: জননেত্রী শেখ হাসিনা। একটি নাম একটি বিশ্বাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন। তা নাহলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাও ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। প্রানে বেচে যাওয়া শেখ হাসিনা শত ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পড়েছেন। প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। এরপরপরই তার হাতে তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল। সেই থেকে তিনি দলের প্রধান।

গত শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে আবারও দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। এর মধ্য দিয়ে তিনি টানা ৯ বার দলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হলো। তিনি আরও তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পেলেন । বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের ইতিহাসে ৩৯ বছর। বেশি সময় ধরে দলের সভাপতির দায়িত্বভার শেষ করে এরই মধ্যে ইতিহাস রচনা করেছেন।

একটি দল ও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্যমে বিশ্বের যে ক’জন নেতা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, নেতা থেকে হয়ে উঠেছেন বিশ্বনেতা, সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান থেকে হয়ে উঠেছেন রাষ্ট্রনায়ক, তাদের সারিতে শেখ হাসিনা তার স্থান করে নিয়েছেন আরও আগেই।

সাম্প্রতিক বিশ্বে যে ক’জন নেতার নাম বিভিন্ন কারণে বার বার উচ্চারিত হয়, তাদের মধ্যেও তিনি রয়েছেন। গত এক দশক ধরে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যম, সংগঠন, সংস্থাগুলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সন্দেহাতীভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর, প্রভাবশীল, মানবিক ও সৎ সরকার প্রধান হিসেবে গণ্য করে আসছে।

সেই নেতাকে টানা নবমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা। গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে সময়ের দিক থেকে যা বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটা অনন্য নজির। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান— তথা দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব-এশিয়ার দেশ মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে গত ৪০ বছরে এ ধরনের ঘটনা বিরল।

ভারতের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কংগ্রেস ও বিজেপির কোনো নেতা গত ৪০ বছরে টানা ২০ বছর দলীয় প্রধান ছিলেন— এমন নজির নেই। পাকিস্তানের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলীম লীগ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিতেও (পিপিপি) এমন নজির নেই।

মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম নাসির সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেলে ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন মামুন আব্দুল গাইয়ুম। পরবর্তী সময় ‘মালদ্বীপ প্রগ্রেসিভ পার্টি’ গঠন করলেও ইতিহাসে তিনি একনায়ক হিসেবে পরিচিত। মামুন আব্দুল গাইয়ুম টানা ৩০ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন বটে, কিন্তু গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন ২০১১ সালে। বর্তমানে তিনি দলীয় প্রধান হিসেবেই আছেন।

মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি মাহাথির মোহাম্মদ টানা ২২ বছর ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে দলীয় প্রধান হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার থেকে তিনি অনেক পিছনে অবস্থান করছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে টানা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন। শুধু দলের দায়িত্ব পালন নয়, সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার দিক থেকেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অবস্থা ঈর্ষণীয় পর্যায় রয়েছে— এ কথা স্বীকার করে নিতে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা কুণ্ঠাবোধ করলেও সারাবিশ্ব কুণ্ঠাবোধ করে না। সাম্প্রতিক বিশ্বে তার সদর্প বিচরণ সেটিই প্রমাণ করে।

ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৭ সালে তার অবস্থান ছিল ৩০তম, পরের বছর আরও চার ধাপ এগিয়ে ছিল ২৬তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদের একজন সদস্য, যা বর্তমান ও সাবেক নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।

২১তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যিনি নিজেও টানা দ্বিতীয় দফায় পুননির্বাচিত, বললেন শেখ হাসিনা এখন আর স্রেফ কোনো পলিটিশিয়ান নন, তিনি আজ একজন স্টেটসম্যানে পরিণত হয়েছেন।

তবে শেখ হাসিনার এই পথচলা মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সময় ছোট বোন শেখ রেহেনা, স্বামী ও দুই সন্তানসহ পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি। সেই থেকে আজ অবধি আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব বয়ে চলছেন তিনি।

এই দায়িত্ব পালনকালে বার বার আক্রমণের শিকার হয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ওই হামলায় তার ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন, আহত হন শতাধিক। দেশি ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের অনেকেই জড়িত। এরই মধ্যে এ মামলার বিচারিক আদালতের বিচার কাজ শেষ হয়েছে।

রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে থেকে হত্যার সেই চেষ্টার পরও শেখ হাসিনা তার সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে আছেন। আর শুধু বেঁচেই নেই, মৃত্যুর খাড়া সারাক্ষণ মাথার ওপর নিয়েই তিনি পরিচালনা করছেন ১৬ কোটি মানুষের একটি দেশ। যাদের একটা বড় অংশের একসময়ে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান ছিল না, তাদের প্রত্যেকেরই এখন রয়েছে তার সবকিছু। দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত একটি দেশ তিনি যেমন গড়ে তুলেছেন, তেমনি বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে আজ বাংলাদেশ। একসময় যাকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, সেই বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত। বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের কাছে বিস্ময় হয়ে উঠেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই।

সাম্প্রতিক বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে জায়গা দিয়ে ‘মানবতার মা’ (Mother of Humanity) আখ্যা পান। নিজ দেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নজর কেড়েছেন গোটা বিশ্বের। আর সে কারণেই বলা চলে, ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন, শেখ হাসিনা আজ পলিটিশিয়ান থেকে হয়ে উঠেছেন একজন স্টেটসম্যান।
সুত্র: সারাবাংলা

Print Friendly, PDF & Email