May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

কাজ করে বাঁচতে চাই ঢাবি শিক্ষার্থী শাহেদুজ্জামান!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করার দরকার নেই। সরকার বা দেশের হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে আকুল আবেদন আমার একটি চাকরি দিন। আমি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই। আমি সমাজের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নিউজ রুমে বসে গণমাধ্যমকর্মীদের একান্ত আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্সে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের গাভা গ্রামের ছেলে শাহেদুজ্জামান। বাবা জাকির হোসেন গাভা দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক।

বাবার সমান্য বেতন টানা পড়েনের সংসারের ছোট বেলা থেকেই শাহেদের উপরে পড়ে ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশুনা চালানোর দায়িত্বভার। তারপরও মায়ের অনুপ্রেরণায় গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক। ২০০৪ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫ সালে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কলা বিভাগের ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৮৯তম মেধাস্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। তার এক বছর পরে হার্ডের দুটি বাল্প নষ্ট হয়ে মা মারা যায়। তার পর তার উপর নেমে আসে আরো দুর্দশা। এরপরও থেমে থাকেনি তার জীবন। নিজের পড়াশুনার খরচের পাশাপাশি দুই ভাইয়ের খরচ চালিয়েছেন তিনি।

তারপরেও অতি কষ্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টর্স শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশুনা শুরু করেন। কিন্তু বিধিবাম হঠ্যাৎ দু’চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায় তার।

কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই তার টি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আলাপচারিতায় অনার্গল ইংরেজিতে কথা বলছিলেন তিনি। অন্য সকল সাধারণ মানুষের মতো নাদুস নুদুস চেহারা। চিকিৎসরা জানিয়েছে তার চোখের রেটিনা ৬০% নষ্ট হয়ে গেছে। যেটি দেখতে পান সেটি অতি সামান্য। রেটিনার ৪০% ভাগ দিয়ে নিজে চলা ফেরা করতে পারেন। সকল বস্তু আফসা আফসা দেখতে পান তিনি। মা বিদায় নিয়েছে এক যুগ হলো। যে মা আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল সেই মা আজ পাশে নেই।

শাহেদুজ্জামান বলেন, ২০১৩ সালে মাস্টার্স পরিক্ষার শেষে চাকরী পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহরুল হক হলে থাকতেন তিনি। হঠ্যাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চোখে ঝাপসা দেখছি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল মেডিকেল সেন্টার, বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, ইসলামী চক্ষু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু চিকিৎসরা বলেছেন এই চোখ আর ভালো হওয়া সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে চোখের যে অবস্থা সেটি ৪০ বছর বার তার বেশী সময় স্থায়ী হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার রোগের নাম ম্যাকুলা ডিস্টাফি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মায়ের স্বপ্ন ছিলো আমি যেন বাংলায় পড়াশুনা করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যে কোন বাংলা বিভাগের প্রভাষক হয়। আমি সেই স্বপ্ন নিয়ে পড়াশুনা করছিলা কিন্তু আর হলো কই। পড়াশুনা শেষ করার পরই যখন চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম তখনই চোখ গেল নষ্ট হয়ে। বাবা একজন সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষক তিনি যে টাকা বেতন পান সেটা দিয়ে আমাদের ঠিক মতো সংসার চলে না। মাঝে মাধ্যে হৃদয়বান ব্যক্তিরা আমাকে কিছু কিছু সাহায্য করে তা দিয়ে স্ত্রী এবং এক কন্যা অনেক কষ্টে জীবন অতিবাতি করতে হচ্ছে। কিন্তু আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে অন্যের হাত থেকে টাকা নিতে খুব খারাপ লাগে। এখন গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের গাভা গ্রামে নিজ বাড়িতে স্ত্রী এবং এক কন্যা আছি তার চাকরির জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সরকার বা দেশের কোন হৃদবান ব্যক্তি যদি আমার পাশে দাড়াতেন তা হলে হয়তো আমার জীবনটা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারবো।

শাহেদুজ্জামানের বাবা মাদ্রাসা শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ছেলেক অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন তার ভালোভাবে বেঁচে থাকতে তার একটি কাজ দরকার। (এব্যাপারে সহযোগীতার জন্য শাহেদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ব্যবহৃত নাম্বারে ০১৭৭৪১১৬৫৬৪ যোগাযোগ করুন।)

Print Friendly, PDF & Email