April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

নিষেধাজ্ঞা সত্বেও হাজী শামসুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালেয় বেত্রাঘাত

মোঃ মিজানুর রহমান মিজান, লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম থেকে : লোহাগাড়ায় উপজেলার কাছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বেত মারার কারণে অষ্টম শ্রেনীর এক ছাত্রের শরীরে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে লোহাগাড়া উপজেলার কাছে   একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজ্বী শামসুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। আহত শিক্ষার্থীর বাবা হারুনুর রশিদ পেশায় একজন রিকসা চালক।
তিনি বলছিলেন, আজ সকাল ১০:৩০ মিনিটে খবর পান তার তের বছরের ছেলে এবং ওই স্কুলের অন্যান্য শ্রেনীর শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তিনি সেখানে ছুটে গিয়ে দেখতে পান শিক্ষকের লাঠি দিয়ে তার ছেলেকে আঘাত করতেছে, সেখান থেকে রক্ত ঝরছে এবং তাকে হাসপাতালে না নিয়ে এক ঘন্টা পর এলাকার লোকজন নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে যান। কেন মারা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে অত্র স্কুলের অন্যন্য শিক্ষক সহ এলাকার লোকদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে এই বলে যে, আপনারা যা ইচ্ছা করুন।
হারুনুর রশিদ আরো জানান, এরপর তিনি তার ছেলেকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,  জনাব মাহবুবুল আলমের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ইউ এন ও মহোদয় ব্যাবস্তা নিবেন বলে অভিযোগ গ্রহন করেন।
তারপর তাকে স্তানীয় একটা ডক্টর চেম্বারে চিকিৎসা করানো হয়।
এরপর এলাকাবসীর কাছে ঘঠনাটা জানতে চাইলে এলাকাবাসী বলেন, আমরা যখন ছাত্রকে নিয়ে অফিসে যাই, তখন স্কুলের শিক্ষকরা বলেন আপনারা এইখানে আসার কোন মানে হয় না, আমাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে স্কুল থেকে বের করে দেয়।এলাকাবাসী আরও বলেন, নয় মাস আগেও নাকি অত্র স্কুলের এক শিক্ষক একটা ছাত্রকে মেরে রক্তাক্ত করে দেয়। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে অত্র স্কুলের পরিচালক ও সভাপতি হুমকি প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর আরও জানা যায় স্কুলের পরিচালক আব্দুল্লাহ বাচ্চু স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে রাত এগারটায় ফোন করতে বাধ্য করেন। প্রতিদিন ফোন না দিলে শাস্তি দেওয়া হয় বিভিন্ন কায়দায়। এর কিছুদিন পর একজন দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে ফোন করে যৌন হয়রানী করেন স্কুলের পরিচালক। এই ঘটনাটা এলাকাবাসী জানতে পেরে রেকর্ডিং সহ স্কুলের সভাপতি মহোদয়কে জানানো হলে তিনি তা এড়িয়ে যান, আর একজন অভিবাবক বলেন, স্কুলের পরিচালক অবৈধভাবে আমার মেয়েকে তার বাড়ীতে একা একা যেতে বলেন, আমার মেয়েটি কান্না করে আমাকে বললে আমি ঐ স্কুল থেকে নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিই। আজকে সাকালেও বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রী জানান,  তাদের নাকি প্রতিদিন রাতে- সাকলে স্কুলের শিক্ষকদের ফোন করতে বাধ্য করা হয় । না করলে বেত্রাগাত ও বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়।
বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক, রূপস কান্তি নাথ এই অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘ ছেলেটি গতকাল অর্ধেক ক্লাস করে  স্কুল থেকে  চলে যায়। তাই আমি একটা কাঠের বেত নিয়ে মারি। ওই আঘাত গিয়ে লাগে ছেলেটির বিভিন্ন জায়গায়।
গত ২০১৪ সালে বেশ কিছু ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্টানে শাস্তি প্রধানের বিষয়টিকে আলোচনায় শীর্ষে নিয়ে আসে।বিশেষত শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিষেধ থাকা সত্বেও কিছু স্কুলের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাড় করিয়ে এমপি মন্ত্রীদের অভ্যার্থনা জানাতে বাধ্য করা হয়। অন্য দিকে নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক স্কুলে এখনো শিশুদের শাস্তি প্রদানের সাংস্কৃতির অবসান ঘটেনি।বরং বেত্রাঘাতে বেহুশ হতে দেখা গেছে,চড় খেয়ে অপমানিত শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে অনেকেই।এসব ঘটনা দেশের প্রত্যন্ত অঞলে বিদ্যমান।১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে বিশ্বের শিশুদের মৌলিক মানবাধিকার, মর্যাদা রক্ষা, জীবন মান উন্নয়ন, স্বাধীনতা নিরাপত্তা,কল্যান এবং তাদের বিকাশের স্বার্থে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সনদটি গৃহীত হয়।১৯৯৯ এর ১২ ই সেপ্টেম্নর থেকে সনদটি বাংলাদেশে কার্যকর হয়।জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ১৮ ও ১৯ ধারায় আইনি, প্রশাসনিক, সামাজিক, ও শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিশুরা যাতে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন, ইনজুরী এবং কোন ধরনের অন্যায় সুবিধাভোগীর শিকার না হয়,সে জন্য উপযুক্ত সব ব্যাবস্তা গ্রহনের জন্য রাষ্ট্রকে বলা হয়েছে। শিশুর উপর সব শাস্তি বন্ধ করার জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিদ্যালয়ে শারিরীক শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ করেছেন।কোন শিক্ষক শিক্ষিকা কিংবা শিক্ষক পেশায় নিয়োজিত কোন ব্যাক্তি অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীকে পাঠদানকালে বা অন্য কোন সময় ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে উল্লেখিত শাস্তিযোগ্য আচরণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এসব অপরাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা ১৯৭৯ সালের সরকারী কর্মচারীর আচরণ বিধিমালার পরিপন্তী হবে এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।এসব অভিযোগের জন্য অভিযুক্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে সরকারী বিধিমালা ১৯৮৫ এর আওতায় অসাদাচরণের অভিযোগে শাস্তি মূলক ব্যাবস্তা গ্রহন করা হবে।
Print Friendly, PDF & Email