April 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জার্মানির এক ভয়ংকর নারী ইলচ কোচ কাহিনী

ডেস্ক : দস্যু ফুলন দেবী বা অন্য কোন নারী নয়, আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো এক ভয়ংকর নারীর কাহিনী। যার নাম ইলচ কোচ।
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। কিন্তু এই সেরা জীব মানুষের সব কাজই সেরা হয় না। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে যারা পৃথিবীকে আলোকময় করেছেন আবার এমন কিছু ব্যক্তির কাজকর্মে পৃথিবী কলঙ্কিত হয়েছে। তবে সুখের কথা এই, তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যে সব ব্যক্তির কর্মে মানবতা কলঙ্কিত হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ যেমন আছে তেমনি আছে নারীও। তেমনই একজন নারী ইলচ কোচ যার কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
ইলচ কোচ এতটাই জঘন্য ছিল যে, তাকে সম্বোধন করা হয় বুখেন ওয়ার্ল্ডের ডাইনি হিসেবে। তিনি ছিলেন জঘন্যতম একজন খুনি মহিলা। এমন সব জঘণ্য কাজ করেছেন এই ইলচ কোচ যা শুনলে পিলে চমকে যাবে। কারাগারে বন্দিদের হত্যা করত এবং তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করত এই ইলচ কোচ।
“এবার ‘বোরকা’ নিষিদ্ধ হচ্ছে জার্মানিতে”
১৯০৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জার্মানির ডেরেসডেনে ইলচ কোচের জন্ম। তার পিতা ছিলেন কারখানার একজন সামান্য কর্মচারী। ইলচ কোচ শৈশবে একজন সদা হাস্যোজ্জ্বল বালিকা ছিল। জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে ১৯৩২ সালে সে নাজি পার্টিতে যোগদান করেন। কোচের স্বামীর নাম ছিল কার্ল ওট্টো। যিনি পেশায় ছিলেন একজন কারারক্ষী। কোচ নিজেও ছিল ক্যাম্পের একজন সুপার ভাইজার। ১৯৩৬ সালে বার্লিনে সে এক ক্যাম্পের সুপারভাইজার ও নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে যোগদান করে। সে কার্ল ওট্টোকে বিয়ে করে ১৯৩৭ সালে। ১৯৪০ সালে কোচ একটি ইনডোর ক্রীড়া কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। এ পর্যন্তই ছিল কোচের ভালো সময় এবং এর পরের গল্পগুলো শুধুই অন্ধকার জগতের এক লোমহর্ষক কাহিনী।
এই ইলচ কোচ যখন ক্যাম্পের সুপারভাইজার ছিল তখন সে এক হৃদয় বিদারক ও নির্মম খেলায় মেতে ওঠে। কোচের দায়িত্বে থাকা ক্যাম্পে যখন কোনো নতুন বন্দি আনা হত তখন সে বন্দিদের তীক্ষ্মভাবে পরখ করত। কোচ সব বন্দিকে দেখে যে সব বন্দির শরীরে ট্যাটু অংকিত থাকত এবং যাদের গায়ের রং ভালো তাদেরকে আলাদা করে রাখত। এরপর একসময় সে মেতে উঠত তার পৈশাচিক নেশায়। তার দেখা যে সব বন্দির শরীরে ট্যাটু ছিল তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করত। তাদের গা থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নিত। তারপর এই বর্ণিল চামড়াগুলো সংরক্ষণ করত। এছাড়া সে যে সব বন্দির চামড়া সুন্দর তাদের সে হত্যা করত এবং তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করত। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় শখ ছিল সুন্দর চামড়াওয়ালা বন্দিদের হত্যা করে তাদের শরীরের চামড়া দিয়ে কুশন কভার, সাইড ল্যাম্প, বালিশের কভারসহ অনন্যা জিনিস তৈরি করা! একই ক্যাম্পে স্বামীসহ কোচ নিজে সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকায় এই জঘন্য কাজগুলো সহজেই করতে পরতো সে।
এভাবে দীর্ঘদিন নির্মমতার পর কুখ্যাত এই মহিলাকে ১৯৪৩ সালের ২৪ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তার এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের কোনো প্রমাণ তখন পাওয়া যায়নি। ফলে সঠিক প্রমাণের অভাবে জেল থেকে ছাড়া পায় কোচ কিন্তু তার স্বামী দোষী বিবেচিত হন এবং তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে কোচ চলে যায় লুদুইগবার্গ শহরে। সেখানে বসবাস করার সময় আমেরিকার সৈন্যরা তাকে আবার গ্রেফতার করে ১৯৪৫ সালের ৩০ জুন। পুনরায় গ্রেফতার হবার পর আবার বিচারের মুখোমুখি করা হয় কোচকে। দ্বিতীয়বার বিচারের সময় প্রকাশিত হতে থাকে তার নানা কুকীর্তির কথা। কোচ স্বীকার করে তার নানা লোমহর্ষক কাহিনীর কথা। পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি তার বিভিন্ন প্রকারের জিনিস। বিচারে কোচ দোষী বিবেচিত হওয়ায় ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু নিজের প্রতি অভিমান ও জীবনের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ইলচ কোচ। আর এভাবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় ভয়ংকর এক নারী ইলচ কোচ। এসব কাহিনী এখনও বিশ্ববাসীকে হতবাক করে-ব্যথিত করে। কারণ ইলচ কোচ একজন নারী সমাজের কলঙ্ক হয়ে এই বিশ্বে আবির্ভূত হয়েছিল।
সূত্র: অনলাইন

Print Friendly, PDF & Email