April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

প্রজন্ম’৭১-এর জন্য শুভকামনা

ডাঃ নুজহাত চৌধুরী : আজ পঁচিশ বছর হয়ে গেল কিছু শহীদ সন্তান একত্রিত হয়েছিলাম প্রাণের টানে, আদর্শের প্রেরনায়, কিছু একটা করার তাগিদে। সময়টা ছিল খুব টালমাটাল, উত্তাল। ১৯৯১ সাল। এরশাদের পতনের পরে গণতন্ত্রের স্বপ্ন সবার চোখে। দীর্ঘ বৈরী পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই শহীদ সন্তানরা তখনো আমরা ছিলাম ১৯,২০,২১ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। খুব বেশী বয়সের যারা তারাও ৩৫ ঊর্ধ্ব নন। দেশের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিছু একটা করতে হবে – শুধু জানতাম এটুকুই। শুধু আবেগ নিয়েই যাত্রা শুরু আমাদের।
প্রজন্ম’৭১-এর জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই আবার শুরু হল বৈরী হাওয়া। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দেখলাম গণতন্ত্রের ঔদার্যের সুযোগ নিয়ে নির্বাচনের সীল গায়ে মেখে আমাদের পিতৃহন্তারক যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে। সরকারের অংশ হয়ে মন্ত্রী হয়ে আমাদের পিতার রক্তে রঞ্জিত পতাকা গাড়ীতে লাগিয়ে চলল দম্ভভরে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা জামাতের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করলো, অর্থে বিত্তে বলীয়ান হয়ে সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতির বিস্তার ঘটিয়ে দিল তৃনমূল পর্যন্ত। ’৭৫-এর পর থেকে যে কাজ তারা করে এসেছে সামরিক শাসনের ছায়ায়, সেই একই ধারা চলতে থাকলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও নির্বাচনের পরেও। কিছুই পাল্টালো না। তাই জন্মেই প্রচুর প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে সেই সদ্যজাত সংগঠনকে। শুধু রাজনৈতিক, আদর্শিক প্রতিকূলতা নয় আরও অনেক জটিল সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে সেই সময়। এমনকি রাষ্ট্রীয় গোপন সংস্থাগুলোর ঘৃণ্য থাবার কুটিল আঁচড়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে এই সংগঠনকে। তার জন্য প্রজন্ম’৭১-কে অনেক ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হয়েছে।

projonmo-71-aa অবিশ্বাস হলেও সত্য, শহীদ সন্তান হলেও স্বার্থের জন্য আপোষ করতে দু-চার জনকে যে দেখি নাই, তা না। তাদের সংখ্যা খুব কম হলেও, কিছু স্খলন কিছু মানুষের মধ্যে দেখছি। অবাক হয়েছি, দুঃখিত হয়েছি এবং সর্বশক্তি দিয়ে আদর্শের সাথে আপোষ করা এই লোকগুলোর মোকাবিলা করেছি।
এভাবেই ঘরে বাইরে চক্রান্ত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই এগুতে হয়েছে প্রজন্ম’৭১ কে। যতটুকু হবার সম্ভাবনা ছিল, তা হয়তো আমরা অর্জন করতে পারি নি। কিন্তু এই ২৫ বছরে শত প্রলোভন, শত প্রতিকূলতায়ও প্রজন্ম’৭১ সংগঠন হিসেবে আদর্শের সাথে কখনও আপোষ করেনি এটাই এর সবচেয়ে অর্জন বলে আমি মনে করি। ৯১-এর গণআদালত, ২০১৩-এর গণআন্দোলন এবং বর্তমানের জঙ্গি বিরোধী আন্দোলনসহ সকল প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রজন্ম’৭১ সামিল ছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজে সোচ্চার প্রজন্ম’৭১ -এর সদস্যরা সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে পিতৃহত্যাকারীর বিচার করার কাজকে সফল করেছে। এভাবে শহীদ স্বজনের কাছে, দেশমাতৃকার জন্য তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এবং করতেই থাকবে। জঙ্গি সমস্যা আমাদের সামনের দিনের বড় চ্যালেঞ্জ। প্রজন্ম’৭১ একই আদর্শিক দৃঢ়তা নিয়ে এই সমস্যা মোকাবিলায় বদ্ধপরিকর। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিবো- এই আমাদের অঙ্গীকার। নিশ্চয়ই এই পবিত্র আকাঙ্খা আমাদের বাস্তবায়িত হবে। প্রজন্ম’৭১-এর ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রইলো আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালবাসা আর শুভ কামনা।

লেখকঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরীর সন্তান।

Print Friendly, PDF & Email