ডেস্ক : ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ’ আমাদের সমাজে এ ধরণের একটি কথা প্রচলিত আছে। মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ কিনা – তা আমার জানা নেই। তবে এটা যে কেউ বুঝতে পারবেন যে মানুষকে বিশ্বাস করতে না পারলে আপনি কোন কাজ করতে পারবেন না – যেখানে অন্য মানুষের সাহায্য লাগে। জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে অনেকে প্রায়শঃ বলে থাকেন,” কাউকে বিশ্বাস করবা না ‘। কিন্তু উপদেশটির পেছনের বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েও বলতে হয় এটা একটা নেতিবাচক উপদেশ। কারণ, কাউকে বিশ্বাস না করলে পরিবার চলবে না, সমাজ চলবে না, এমন কি রাষ্ট্র চালানো-ও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই জীবনের তিক্ত ঘটনা হতে শিক্ষা নিন এবং ভবিষ্যতে সাবধান হোন।
কিন্তু তাই বলে একটি ঘটনার জন্য ভেতরে অবিশ্বাসের চারা রোপণ করে তাকে বটগাছ -এ পরিণত হতে দিলে আপনি প্যারানয়েড -এ পরিণত হবেন এবং স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা কঠিন হয়ে পড়বে।যেমন, কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের অভিজাত এলাকা গুলশানের রেস্তোঁরায় সন্ত্রাসী ঘটনার জন্যে অনেকে-ই বাইরে খাওয়া- দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়ার উপদেশ দিয়েছেন। এটা একট নেতিবাচক উপদেশ – যা আসলে ক্ষতিকর। একবার একটি মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে বলে, বার বার তা ঘটবে তা নিশ্চয়ই নয় । বরং এতে ভাল ব্যবসায়ীদের এবং আপনার ও ক্ষতি হবে। কারণ, ঢাকা শহরে বিনোদনের স্থানের এমনিতে-ই অভাব। এই রেস্তোঁরাগুলো সেই অভাব অনেকটা পূরণ করে, যেখানে জন্মদিন বা ‘গেট টুগেদার’ উপলক্ষ্যে ফ্রেন্ড বা আত্মীয়-স্বজন – যাদের সাথে দীর্ঘদিন দেখা হয় না, তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলে তা মনের জন্য অনেক উপকারী। আপনি যতো-ই অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ করুন, সামনা- সামনি একজন প্রিয় মানুষের সাথে আলাপ করার সাথে তার কোন তুলনা হয় না।
আবার পহেলা বোশেখে কিছু মেয়েদের উপরে কতিপয় উচ্ছৃংখল যুবক যৌন নির্যাতন চালিয়েছে বলে বোশেখী মেলায় যাওয়া বন্ধ করে দিবেন ? এ ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে বলে মনে হয় না; আর আপনি যদি পরিবার নিয়ে এরকম একটি দিনে মনের আনন্দে সময় না কাটিয়ে ঘরে বসে থাকেন, তাতে আনন্দ হতে যেমন বঞ্চিত হলেন ; আবার অন্যদিকে এই সব বখাটে বদমাশগুলো আশকারা পেয়ে যাবে। অন্যদিকে ধর্ষণের ভয়ে যদি ঘর হতে বের হওয়া বন্ধ করে দেন – তাহলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালতে কীভাবে যাবেন ? আর এটা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতে পারেন যে সুযোগ পেলেও অতি অল্প সংখ্যক পুরুষ-ই একটি মেয়েকে ধর্ষণ করবে। বেশির ভাগ পুরুষ-ই এটা করবে না- শিক্ষা, মানবিক মূল্যবোধ,ধর্মীয় কারণে পাপের ভয়ে, সামাজিক অসম্মান, শাস্তি এবং সাহসের অভাবের কারণে। ধর্ষণ যারা করে -তারাও অসুস্থ মানসিকতার শিকার।
আবার স্বামী-স্ত্রীদের কারো যদি সন্দেহ হয় যে তাদের একজন অন্য কারো সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে – তবে স্রেফ সন্দেহের উপর ভিত্তি করে তার সাথে খারাপ আচরণ না করে প্রমাণ সংগ্রহ করুন এবং তারপরে সরাসরি এবং খোলাখুলি আলোচনা করুন। এতে অনেক সময় দেখা যাবে সন্দেহটি অমূলক। আর যদি তা সত্যি হয় ;তাহলে আপনি নিজে মাথা গরম করে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বা শাস্তিমূলক আচরণ না করে, দুপক্ষের জ্ঞানী মুরুব্বী নিয়ে বসুন এবং সবার সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিন। আর সন্তান থাকলে তাদের কথা তো প্রথমে চিন্তা করতে হবে। পরিশেষে, বেশিরভাগ মনের রোগ মানুষের দ্বারা-ই সৃষ্টি হয়;কিন্তু তার নিরাময়ের জন্য আবার যেতে হয় মানুষের কাছেই। কারণ, মানুষ-ই বড় ওষুধ।
এ বিভাগের আরো..
এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল কিভাবে জানা যাবে
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে হেপাটাইটিস বি-বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার
হুমকির মুখে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি