April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

তারুন্যিক অভিযাত্রায় ইষ্টপ্রাণতায় শ্রেয় অন্বেষা

নটো কিশোর আদিত্য : বিংশ শতাব্দীর সংকটকালে যখন চারিদিকে দূর্নীতি অবিচার, ব্যভিচার, নিরাশ, হতাশার হাহাকার, বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিঘাতে ক্ষতবিক্ষত সাম্প্রতিকালের সমাজ জীবনে যখন বারবার সংহতির সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখনই সেই সংকট-মুহুর্তে মনে পড়ছে যুগপুরুষোত্তমকে, স্মরণে আসছে স্মরণীয় নাম- শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র।

মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় শ্রীশ্রীঠাকুরকে ঘিরে গড়ে উঠা প্রকৃত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান সৎসঙ্গ । যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র উনবিংশ শতকের শেষভাগে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন। ১৯৪৬ সনের ১লা সেপ্টেম্বর শ্রীশ্রীঠাকুর স্বাস্থ্যগত কারণে বায়ু পরিবর্তনের জন্য, চিকিৎসকদের পরামর্শে অখন্ড ভারতের বিহার রাজ্যের দেওঘর যান। ১৪ই আগস্ট ১৯৪৭ ইংরেজীতে ভারত বর্ষ বিভক্ত হয়ে গেলে ঐ স্থানেই গড়ে উঠল সৎসঙ্গ আশ্রম। এ দিকে ভক্তশূন্য হিমায়েতপুর ধাম, পাকিস্তান সরকার পাবনায় সৎসঙ্গ আশ্রম সহ কয়েকশ একর জায়গা সরকারী অধিগ্রহণ করে সেখানে মনোবিকারগ্রন্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য স্থাপন করা হলো পাবনা মানসিক হাসপাতাল, ইংরেজী ১৯৫২ সালে। এর আগে ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তান সৎসঙ্গের সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় প্রয়াত রাসবিহারী আদিত্য মহোদয়কে। সৎসঙ্গ আশ্রম যখন একটি ছোট খড়ের ঘর থেকে সূচনা হয় সেই তখন ১৯৫৮ ইংরেজিতে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব্যবহৃত শ্রীশ্রীপাদুকা, শহীদ প্যারী মোহন আদিত্যের নিকট প্রদান করলেন । শহীদ প্যারী মোহন আদিত্য সুদূর ভারতের দেওঘর থেকে মাথায় করে নিয়ে আসলেন। পুরুষোত্তম প্রদত্ত শ্রীশ্রীপাদুকা কেন্দ্র করেই তার  নির্দেশমতো প্রতিষ্ঠিত হলো পুণ্যপাদপীঠ স্থান সৎসঙ্গ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের পর ২৪শে মার্চ প্রয়াত সম্পাদক রাসবিহারী আদিত্য এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্যারী মোহন আদিত্য সহ সৎসঙ্গ ফিলনথ্রপী অফিসের কর্মী শ্রীগোপাল চন্দ্র ভদ্র এবং গাড়ীর চালক হিসাবে ছিলেন শ্রীঅমরেন্দ্র নাথ আদিত্য (গাড়চিালক) ধানমন্ডি ৩২ এর বাসায় গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু গঠিত মুক্তিযুদ্ধের রিলিফ ফান্ডে সৎসঙ্গের পক্ষে অর্ঘ্য দিয়েছিলেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের ভূমিষ্ঠস্থান উদ্ধারের জন্য সহায়তাও চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সানন্দে অর্ঘ্য গ্রহন করে বলেছিলেন দেশ স্বাধীন করে অবশ্যই সৎসঙ্গ আশ্রমে যাবেন এবং যা কিছু সহায়তা করা দরকার তা করবেন। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে ৮ আগষ্ট ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর সেল ও গুলি বর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করতে করতে আশ্রমে প্রবেশ করলে মন্দিরের সিড়িতেই  প্যারী মোহন আদিত্য শহীদ হন ও শহীদ হন ও আশ্রমের কয়েকজন কর্মীও সেইদিন শাহাদাত বরন করেন।

আজ আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন জাতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আপনি শহীদের রক্তে ভেজা সৎসঙ্গ আশ্রম পরিদর্শন করে জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার মানসে, আমাদের আবেদনের প্রতি আপনার সদয় দৃষ্টি আর্কষণ করি, ঈশ্বর আপনার সার্বিক কল্যাণ করুন।

তারুন্যিক অভিযাত্রায় ইষ্টপ্রাণতায় শ্রেয় অন্বেষা’র GB উদ্যোগ শ্রীশ্রীঠাকুরের সেই মহান আদর্শের বাণী পৌঁছে দেবে ঘরে ঘরে, যাতে আছে আপন পরিবার পরিজনের প্রতি প্রত্যেককে নিয়ে প্রীতির বন্ধনের দিক নিদের্শনা।  এই ক্রোড়পত্র পাঠ করতে করতে পাঠকের মর্ম মথিত করে মুগ্ধ উচ্ছাসে গুঞ্জরিত হোক। হে পরম পিতা! দয়াল আমার ! আমার হৃদয়ে তুমি চির প্রতিষ্ঠ হও, এই আমি তোমারই আমার যা কিছু সব তোমার, আমার এ জীবন শুধু তোমার দয়াতেই অভিষিক্ত হয়ে উঠুক। বন্দেপুরুষোত্তমম্ ।
লেখক : সাংবাদিক

 

Print Friendly, PDF & Email