April 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

দ্রুত রায় কার্য়কর দেখতে চাই

শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী : এদেশের লক্ষ লক্ষ শহীদ পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পুরণ করেছে বিচার বিভাগ। মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রিভিউ কমিটি আল বদর নেতা আলী আহসান মুজাহিদ ও যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিচারের যে রায় প্রদান করেছে – তা একাত্তরের চেতনার বাস্তবায়নেরই অংশ। আর এমন রায়ের জন্যই আমরা এখনো যেন বেঁচে আছি।

এদেশের আপামর জনগণ এখন এ রায় কার্যকর করা দেখতে চায়। মুক্তিকামি মানুষদের যারা হত্যা করেছিল, এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপহরণ ও হত্যায় যারা সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে এটি স্বাধীন বাংলার একটি মাইলফলক রায়।

এমন রায়ের পুর্ণাঙ্গতা প্রকাশে দেশের বিচার বিভাগ তথা সরকার এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের বিচারের আওতায় এনে ও রায় কার্যকর করে তাঁর নির্বাচনী ওয়াদা পুরণ করে চলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে এই বিচার প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। শহীদ পরিবারের সদস্যদের পক্ষে আমরা এ বিষয়ে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা অবিলম্বে আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হবে বলে আশাবাদী।

একাত্তরে আমার স্বামী ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। আমি এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়েছি। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর জবানবন্দি নেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুরিন আফরোজ। এ সময় আসামির কাঠগড়ায় অন্যতম ঘাতক মতিউর রহমান নিজামী উপস্থিত ছিলো। সে সময় আমার আমার মনে হয়েছে আমি বিচর চেয়ে তা প্রাপ্তির দরজায় আছি। আজ সে পূর্ণতা মিললো।

১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আলবদর বাহিনীর তিনজন সদস্য আমাদের পুরানা পল্টনের ভাড়া বাসায় যায়। আলবদর বাহিনীর সদস্যরা আমার স্বামী আলীম চৌধুরীর চোখ বেঁধে তাঁকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। আমি ৪২ বছর ধরে এই বিচারের অপেক্ষা করে আছি। আমি মারা যাওয়ার আগে আমার স্বামীসহ অন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী এবং মানবত বিরোধী আলবদর বাহিনী ও রাজাকার সহ সব সদস্যের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেখে যেতে চাই।’ তাই যত দ্রুত রায় কার্য়কর করার অাহব্বান জানাই।

বি: দ্র: শহীদ ডাঃ আব্দুল আলিম চৌধুরী (জন্ম: ১৯২৮ – মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১) ছিলেন চিকিৎসক ও বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর শহীদ ডাঃ আলিম চৌধুরীকে রাজাকার-আলবদর বাহিনী তাঁর বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং ঐ দিন রাতে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে।

লেখক : শহীদ ডাঃ আব্দুল আলিম চৌধুরীর স্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email