May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

চলুন ঘুরে আসি প্রকৃতি কন্যা জাফলং এ

প্রকৃতির অপরূপ সিলটে। সিলেট এসে জাফলং না গেলে ভ্রমণই অপূর্ণ থেকে যায়। শীতের সময় জাফলংয়ে পর্যটকদের ভিড় বেশি হলেও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় উপস্থিতি আরও বেড়ে যায়। ঈদের ছুটি উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন জাফলংয়ে।

‘প্রকৃতি কন্যা’ হিসেবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত জাফলং। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যেন অপরুপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তুপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ে গহীন অরণ্য ও সুনসান নীরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।

সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং অবস্থিত। জাফলংয়ে শীত ও বর্ষা মওসুমের সৌন্দের্য্যের রূপ ভিন্ন। বর্ষায় জাফলং এর রূপ লাবণ্য যেনও ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। ধূলিময় পরিবেশ হয়ে উঠে স্বচ্ছ। স্নিগ্ন পরিবেশে শ্বাস-নিঃশ্বাসে থাকে সতেজ ভাব। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজাভ চূড়ায় তুলার মত মেঘরাজির বিচরণ এবং যখন-তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে পাহাড়ি পথ হয়ে উঠে বিপদসংকুল। সে যেনও এক ভিন্ন শিহরণ। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে নেমে আসা সফেদ ঝর্ণাধারার দৃশ্য যে কারোরই নয়ন জুড়ায়।

জাফলং পর্যটন স্পটের আলাদা আকর্ষণ খাসিয়া সম্প্রদায়। জাফলংকে ঘিরে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জি। ছিমছাম ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত খাসিয়ারা। বাগানে উৎপাদিত পান, সুপারির ওপর খাসিয়াদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল।

জাফলং এলাকার বল্গা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর-এই ৫টি পুঞ্জিতে প্রায় আড়াই হাজার খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে।

খাসিয়াদের বাড়িঘর অনেকটা মাচাং এর মতো। তারা বাসা করে দোতলা টাইপের বাড়িতে। বানিয়ল লামিন নামের একজন অধিবাসী জানান, বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য খাসিয়ারা মূলত এ ধরণের বাড়িতে বাস করে। এ সম্প্রদায়ের লোকজন পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। খাসিয়া বাড়ির সীমানায় প্রবেশ করলেই তাদের সুরুচির পরিচয় মেলে।

জাফলং ছাড়াও সিলেটের আরও কয়েকটি পর্যটন স্পট রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

লালাখাল

স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুপাশে অপরুপ সৌন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমণের সাধ যেকোনও পর্যটকের কাছে এক দুর্লভ আর্কষণ। তেমনি এক নির্জন মনকাড়া স্থান লালাখাল। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার কাছেই অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলের উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পিডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালাখালে। যাবার পথে আপনার দুচোখ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে হয়ে যেতে পারে তবু তা যেনও শেষ হবার নয়। ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌঁছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরি ঘাটে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন নদীর পানির দিকে। কী সুন্দর নীল, একদম নীচে দেখা যায়। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত।

সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কি.মি. রাস্তা। অনেকভাবেই লালাখাল যাওয়া যায়। বাস, মাইক্রো, টেম্পোতে করে যেতে পারেন। লালাখালে থাকার জন্য রিসোর্ট রয়েছে।

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার

হযরত শাহজালাল (রঃ) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ ও পীর। সিলেট অঞ্চলে তার মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার ঘটে। সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বুরহান উদ্দিনের ওপর রাজা গৌর গোবিন্দের অত্যাচারের প্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল (র:) ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ কারণে সিলেটকে ৩৬০ আউলিয়ার দেশ বলা হয়।

সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাতে করে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজারে পৌঁছাতে হয়। মাজার গেট-এ অনেকগুলো আবাসিক হোটেল রয়েছে।

চা বাগান

বাংলাদেশের যে কয়টি অঞ্চলে চা বাগান আছে তার মধ্যে সিলেট অন্যতম। সিলেটের চায়ের রঙ, স্বাদ ও সুবাস অতুলনীয়। উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান সিলেট শহরে অবস্থিত। নাম মালনীছড়া। ১৮৫৪ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বেসরকারি তত্ত্বাবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত। চা বাগানের পাশাপাশি বর্তমানে এখানে কমলা ও রাবারের চাষ করা হয়।

মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য।

মালনীছড়া এবং লাক্কাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকণ্ঠেই অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।

Print Friendly, PDF & Email