May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

অবস্থানশীল পুঁজিবাজারের আশায় বছর পার!

দেলোয়ার হোসেন মহিন: দেশের অর্থনীতির শঙ্কা যেন কাটছেই না। বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিগত কয়েক বছর দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতেই টালমাটাল হয়ে পরে সারা বিশ্বের অর্থনীতি। এর উত্তাপ থেকে রেহাই পায়নি বাংলাদেশও। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের পুঁজিবাজারসহ সার্বিক অর্থনীতিতে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন এবং ভিত শক্তিশালী করতে চলতি বছরজুড়ে সক্রিয় ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইক্যুইটির পাশাপাশি নতুন পণ্যভিত্তিক বৈচিত্র্যময় বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ পলিসিগত বাজারবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে কারসাজি, সিন্ডিকেটেশন, ইনসাইডার ট্রেডিং, যোগসাজশের মাধ্যমে শেয়ারদর বৃদ্ধি বা কমানো এবং গুজবনির্ভরতা এখনও কমেনি। এজন্য প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা মুনাফা চায়।

ফলে জেনে না জেনেও অনেকেই গুজব বা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। একপর্যায়ে পুঁজি হারিয়ে দোষারোপ করা হয় কমিশনকে। তাই দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা, বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন সংশোধন, শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গঠন, বৈচিত্র্যময় বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন দেশে ‘রোড শো’ করে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য চলতি বছরটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন।

দেশের শেয়ারবাজারে নতুন বৈচিত্র্যময় পণ্য হিসেবে এসএমই প্ল্যাটফর্ম, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ), ট্রেজারি বন্ড, কমোডিটি ও ডেরিভিটিভস এক্সচেঞ্জ পুঁজিবাজারে সংযুক্ত করাসহ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। তবে, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও সূচক বিবেচনায় তা দৃশ্যমান না হলেও ভবিষ্যতে এর সুফল বিনিয়োগকারীরা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত এক বছরের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৬ হাজার ১৯৫.৩৭ পয়েন্টে। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৪৯.২৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৫৩.৯২ পয়েন্ট বা ০.৮৭ শতাংশ। তবে, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক সর্বোচ্চ কমে দাঁড়িয়েছিল ৬ হাজার ১৮২.০৯ পেয়েছে। আর সূচকটি ১৬ জুলাই সর্বোচ্চ বেড়েছিল ৬ হাজার ৩৬৭.৪২ পয়েন্টে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস সূচক ছিল ১ হাজার ৩৫৫.৫৯ পয়েন্টে। আর চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসইএস সূচক অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৫.৪৪ পয়েন্টে। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৯.৮৫ পয়েন্ট বা ০.৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র ডিএস৩০ সূচক ছিল ২ হাজার ১৯৩.৬০ পয়েন্টে। আর চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএস৩০ সূচক কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৯৪.৫৮ পয়েন্টে। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএস৩০ সূচক কমেছে ৯৯.০২ পয়েন্ট বা ৪.৫১ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ২৬৪ কোটি ৯০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আর চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭০৬ কোটি ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ফলে, প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার টাকা ১.৭৭ শতাংশ। তবে, চলতি বছরের ১ নভেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮০ কোটি ২৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকায়, যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

অন্যদিকে, এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার সময় ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজারের নিচে। আর লেনদেন ছিল ১০০ কোটি টাকার নিচে। তাদের নেতৃত্বে ২০২১ সালের ডিএসইএক্স সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৩৬৭.৯৯ পয়েন্টে, যা এখনও পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বছরজুড়ে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন এবং ভিত শক্তিশালী করতে বিএসইসির নেওয়া পদক্ষেপগুলো হলো:

নানান আলোচনা সমালোনার কেন্দ্রে ছিল ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা। যা ছিল চলতি বছরের মধ্যে বিএসইসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে প্রথমবার ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়, যা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়

Print Friendly, PDF & Email