May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শীতে ঘন ঘন প্রস্রাব বিরক্তির কারণও বটে

ডেস্ক: আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে পৃথিবীপৃষ্ঠে উত্তাপের বিতরণ ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বিবেচনায় সূর্যের তাপ পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে পড়ে, যার ফলে কোনো স্থান যখন সরাসরি উত্তপ্ত হয়, তখন তুলনামূলক শীতল স্থানের দিকে উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। দেশব্যাপী আবহাওয়ার বিচিত্র আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

শীতে অনেকের প্রস্রাবের চাপ বাড়ে। ঘন ঘন প্রস্রাব এ সময় বিরক্তির কারণও বটে। অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়েন ডায়াবেটিস হলো কিনা? জানতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কিছু নিয়ম মানলে কমানো যায় প্রস্রাবের চাপ।

শীতকালে এ সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু গরমে অনেক বেশি পরিমাণ পানি পান করলেও সেগুলো ঘাম ও প্রস্রাবসহ নানা পথে বের হয়ে যায়। শীতকালে ঘাম হয় না। ফলে শরীর থেকে পানি বের হওয়ার একমাত্র উপায় মূত্রত্যাগ। তাই শীতকালে বারবার প্রস্রাবের বেগ পায়।

তবে ঘন ঘন প্রস্রাব হলে ডায়াবেটিস ভাবার কোন কারন। গরমে যেখানে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন, শীতে একটু কমিয়ে ২.৫ লিটার পানি পান করা যেতে পারে। এতে প্রস্রাবের চাপ কমবে।

পানি ছাড়াও শরীর গরম রাখা বা ঠান্ডার জন্য মধু মিশিয়ে লেবু পানি পান করি। আবার বারবার চা কফি পান করি। এসব জন্যও প্রস্রাবের বেগ হয়। এ ধরনের পানীয় কম পান করলে আরাম পাওয়া যাবে।

তবে আলসেমি করে প্রস্রাব আটকে না-রাখার ব্যাপারে সতর্ক করে এই বিশেষজ্ঞ জানান, কোনোভাবেই প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না। এতে নানান ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রস্রাব আটকে রাখলে ব্যথা হওয়াসহ কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শীতে কি ধরনের খাবার প্রস্রাবের চাপ বাড়ায় এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ ডা. জাহানারা আক্তার সুমি বলেন, সাধারণত বলা যায়, অতিরিক্ত লিকুইড খাবার অতিরিক্ত প্রস্রাবের জন্য দায়ী। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। এর সঙ্গে আরো অনেকগুলো কারণ জড়িত। খাবারের পুষ্টি উৎপাদানের তারতম্য বা ভিন্নতার উপরও অনেক সময় প্রস্রাবের পরিমাণ নির্ভর করে ।

যেমন খাবারের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে এর মধ্যে কিছু উপাদান প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কাজ করে। উচ্চ ডায়েটারি সোডিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, ক্যাফেইনেটেড পানীয় যেমন কফি, কার্বনেটেড পানীয় যেমন কোক, স্প্রাইট বা এলকোহলসমৃদ্ধ পানীয় প্রস্রাব বাড়ায়।

ঘন ঘন প্রস্রাব করার সমস্যা যদি বিশেষ করে রাতের বেলায় হয় তাহলে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। যখন কিডনির ছাঁকনি গুলো নষ্ট হয়ে যায় তখন প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে দেখা যায়। সুস্থ কিডনি সাধারণত ব্লাড সেল গুলোকে শরীরের ভিতরে রেখে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ মূত্র হিসেবে বের করে দেয়। যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন ব্লাড সেল বের হতে শুরু করে। প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়ার এই লক্ষণটির কিডনি রোগের সাথে সাথে টিউমার, কিডনি পাথর বা ইনফেকশনেরও ইঙ্গিত হতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ
বেশি বেশি পানি পান করা একটি প্রধান কারণ
দুঃশ্চিন্তা, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষাকালীন সময়ে বা ইন্টারভিউ দেয়ার পূর্বে
যুবকদের পর্ণ দেখা বা উত্তেজক চিন্তার ফলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
শীতকাল বা ঠান্ডা-শুষ্ক পরিবেশে মানুষের শরীর ঘামে না, ঐ সময় অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি করে কিডনী শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়, যেমন – ডায়াবেটিস, প্রস্টেট গ্রন্থির টিউমার, প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি
কিডনী অকেজো হবার অন্যতম লক্ষণ হল অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া
ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর হলে
মূত্র নালীর সংকোচন হলে ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে
এছাড়া এলকোহল, চা, কফি পান করাও অতিরিক্ত প্রস্রাব হবার জন্য দায়ী
ইনফেক্শন একটি কারণ। এটি হলে প্রস্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া হবে। প্রস্রাব ছাড়াও জ্বালাপোড়া হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পেলভিক এরিয়াতে বা তলপেটে জ্বালাপোড়া করছে।
পুরুষদের প্রোস্টেটে ইনফেকশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
প্রস্রাবের পথে যদি কোন বাধা থাকে তাহলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
মেয়েদের গর্ভে সন্তান আসার প্রথম ৩ মাসে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
মেয়েদের পেলভিক ইনফ্লামেশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
যক্ষা বা TB হলেও তলপেটে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
প্রস্রাবের থলিতে ক্যান্সার হলেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, এমনকি রক্তও বের হতে পারে

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার লক্ষন
ঘন ঘন প্রস্রাব বেগ হওয়া
প্রস্রাবের প্রচণ্ড চাপ অনুভব
প্রস্রাবের সময় ব্যাথা, জ্বালাপোড়া ও অসহ্য অনুভূতি
তল পেটে স্বাভাবিকভাবে অথবা চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব
ঘন ফেনার মত অথবা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব
জ্বর-কাঁপুনিসহ অথবা কাঁপুনি ছাড়া
বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
কোমরের পাশের দিকে অথবা পিছনে মাঝামাঝি অংশে ব্যাথা
প্রস্রাবের চাপে রাতে বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।

সূত্র: অনলাইন

Print Friendly, PDF & Email