April 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সৎসঙ্গের প্রয়াত আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদার চিতাভস্ম পাবনার পদ্মা নদীতে বিসর্জন

নটো কিশোর আদিত্য : আজ শনিবার (১৮ জুন) সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ, যুগ-পুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পৌত্র শ্রীশ্রীদাদর (শ্রীঅশোক চক্রবর্ত্তী) চিতা ভস্ম বিসর্জন সম্পন্ন হয়। এই ক্রিয়া সম্পাদন করবেন তাঁর ছোট সন্তান শ্রীঅনিন্দ্যদ্যুতি চক্রবর্ত্তী (বিংকীদা)।

পরমপূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীঅর্কদ্যুতি চক্রবর্ত্তী (বাবাইদা) সৎসঙ্গের চতুর্থ পুরুষ তথা বর্তমানে প্রাণপুরুষ। তাঁকে কেন্দ্র করেই আজ সমগ্র বিশ্বে কোটি কোটি নর-নারী বাঁচা বাড়ার পথ খুৃঁজে পাচ্ছেন এবং নিত্য পেয়ে চলেছেন। আজকে সারাবিশ্বে সৎসঙ্গের ভক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। হাজারো পপথভ্রষ্ট মানুষ সঠিক পথে আসছেন। মৃতপ্রায় মানুষ পরমপূজ্যপাদ আচার্য্যদেবের অমিয় সুধায় পাচ্ছেন বেঁচে থাকার শক্তির অনুপ্রেরণা।

উল্লেখ্য সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ, যুগ-পুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পৌত্র শ্রীঅশোকরঞ্জন চক্রবর্ত্তী, সমগ্র সৎসঙ্গ জগতে দাদা’ বলে অভিহিত ছিলেন। তাঁর পিতৃদেবের তিরোধানের পর থেকেই তিনি দৃঢ়হস্তে ধারণ করেছেন ‘সৎসঙ্গ-আন্দোলন’ নামক রথের রশি। এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি যে মানুষ, শ্রীশ্রীঠাকুরের এই কথা তাঁর অন্তরে সুনিবদ্ধ। তাঁর কথা ও ব্যবহার দিয়ে মানুষকে, আমাদেরকে আপন ক’রে তুলতেন তিনি।তিনিও গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ সকালে ৯.৪০ মিনিটে ভারতের দূর্গাপুরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

শ্রীশ্রীঠাকুরের পৌত্র পরম পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদা ১৯৩৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের পূর্ণ্যভূমি হিমাইতপুর, পাবনা জেলায় জন্ম গ্রহন করেন। বাল্যকালে হিমাইতপুর তপোবন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর সহপরিবারে স্বাস্থ্যগত কারনে ভারতের দেওঘরে চলে যান। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩ বছর। সেখানে দেওঘর ও কলিকাতার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন কিন্তুু সমাপ্ত হয়নি সম্পর্ন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ও এল.এল.বি নিয়ে পড়াশুনা করেন।

বর্তমানে ‘সৎসঙ্গ’-এর প্রায় পাঁচ সহস্র কেন্দ্র রয়েছে; এইগুলি সৎসঙ্গ বিহার, সৎসঙ্গ অধিবেশন কেন্দ্র, সৎসঙ্গ উপাসনা কেন্দ্র, সৎসঙ্গ মন্দির, ঠাকুরবাড়ি প্রভৃতি নামে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, ব্রহ্মদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমিরিকাতেও ছড়িয়ে আছে কেন্দ্রগুলো।

সৎসঙ্গের উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সৎসঙ্গ কখনো সম্প্রদায়ে বিশ্বাস করে না। ধর্ম কখনও বহু হয় না-ধর্ম এক। সপারিপার্শ্বিক জীবন-বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলাই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। ধর্ম মূর্ত্ত হয় আদর্শে এবং শ্রীশ্রীঠাকুর হলেন ধর্মের মূর্ত্ত আদর্শ। তিনি কোন সম্প্রদায়-বিশেষের নন, বরং সব সম্প্রদায়ই তাঁর। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-“একজন মানুষের বিনিময়ে আমি একটি সাম্রাজ্য ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু একজন মানুষকে ছাড়তে পারি না।”

১৯৬৯-এ শ্রীশ্রীঠাকুর যখন দেহরক্ষা করেন, তখন হাহাকার উঠেছিল, কে এই বিপুল ধর্মসাম্রাজ্যের পরিচালনার ভার নেবেন। কিন্তু ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ সন্তান অমরেন্দ্রনাথ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সৎসঙ্গের ধর্মপতাকা। ১৯৯৪-এ “শ্রীশ্রীবড়দা”র ( অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) প্রয়াণ ঘটে। তখন রথের রশি ধরেন “শ্রীশ্রীদাদা” (অশোক চক্রবর্তী)। আর গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ এ শ্রীশ্রীদাদার ( অশোক চক্রবর্তী) যখন প্রয়াণ ঘটে তখন স্থলাভিষিক্ত হন তাঁরই জ্যেষ্ঠ সন্তান শ্রীশ্রীঅর্কদ্যুতি চক্রবর্ত্তী (বাবাইদা)। জগন্নাথের রথ অবিরত চলছেই।

১৯৬৯ সালে সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ, যুগ-পুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের তিরোধানের পর শ্রীশ্রীঠাকুর চিতা ভস্ম ভারতের দেওঘর থেকে বাংলাদেশের পাবনার পদ্মা নদীতে বিসর্জন দেওয়ার হয়। এই ক্রিয়া সম্পাদন করবেন সৎসঙ্গ বাংলাদেশ এর প্রয়াত সম্পাদক রাস বিহারী আদিত্যের ছোট ছোট ভাই ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে শহিদ প্যারী মোহন আদিত্য।

Print Friendly, PDF & Email