April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সৎসঙ্গের আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদার পারলৌকিক ক্রিয়া আজ

প্রদিপ্ত কর্মকার : আজ রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ, যুগ-পুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পৌত্র শ্রীশ্রীদাদর (শ্রীঅশোক চক্রবর্ত্তী) পুণ্য পারলৌকিক ক্রিয়া ভারতের দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রমে সম্পন্ন হবে। এই পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদন করবেন তাঁর তিন পুত্র অর্কদ্যুতি চক্রবর্ত্তী (বাবাইদা),অনিরুদ্ধ চক্রবর্ত্তী ( সিপাইদা) এবং অনিন্দ্যদ্যুতি চক্রবর্ত্তী ( বিংকীদা)।

উল্লেখ্য গত ১৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে ৯.৪০ মিনিটে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে তিনি শোকসাগরে নিমজ্জিত করিয়া পরমধামে মহাপ্রয়াণ করিয়াছেন।তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর৷ প্রয়াত আচার্যদেবের শেষকৃত্যে সম্পন্ন হয় দুর্গাপুরের শ্যামপুর আশ্রমে ৷ সেখামে হাজার হাজার ভক্ত ও নর-নারী তাদের আচার্যদেবকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হাজির হয়েছিলেন৷ রাজ্য সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক, ডেপুটি মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, জল দফতরের মেয়র পরিষদ দীপঙ্কর লাহা, বিশিষ্ট আইনজীবী দেবব্রত চাঁই ও দু নম্বর বোরো চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ হালদার প্রমুখ৷ শেষ শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকেরাও৷

সৎসঙ্গ বাংলাদেশের সহ-সম্পাদক সুব্রত আদিত্য জানান যে, সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ, যুগ-পুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পৌত্র শ্রীঅশোক চক্রবর্ত্তী,সমগ্র সৎসঙ্গ জগতে দাদা’ বলে অভিহিত। তাঁর পিতৃদেবের তিরোধানের পর থেকেই তিনি দৃঢ়হস্তে ধারণ করেছেন ‘সৎসঙ্গ-আন্দোলন’ নামক রথের রশি। এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি যে মানুষ, শ্রীশ্রীঠাকুরের এই কথা তাঁর অন্তরে সুনিবদ্ধ। তাঁর কথা ও ব্যবহার দিয়ে মানুষকে, আমাদেরকে আপন ক’রে তুলতে তিনি।

প্রয়াত পূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা ১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসেবাংলাদেশের পূর্ণ্যভূমি হিমাইতপুর, পাবনা জেলায় জন্ম গ্রহন করেন।

শ্রীশ্রীদাদা বাল্যকালে হিমাইতপুর তপোবন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর সহপরিবারে স্বাস্থ্যগত কারনে ভারতের দেওঘরে চলে যান। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩ বছর। সেখানে দেওঘর ও কলিকাতার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন কিন্তুু সমাপ্ত হয়নি সম্পর্ন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ও এল.এল.বি নিয়ে পড়াশুনা করেন। এই হচ্ছে তার শিক্ষাজীবন অমৃত লীলা।

পরমপূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা সৎসঙ্গের তৃতীয় পুরুষ তথা বর্তমানে প্রাণপুরুষ। তাঁকে কেন্দ্র করেই আজ সমগ্র বিশ্বে কোটি কোটি নর-নারী বাঁচা বাড়ার পথ খুৃঁজে পেয়েছেন এবং নিত্য পেয়ে চলেছেন। শ্রীশ্রীদাদার আশীর্বাদে আজকে সারাবিশ্বে সৎসঙ্গে ভক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। হাজারো পথভ্রষ্ট মানুষ সঠিক পথে এসে চলছে। মৃতপ্রায় মানুষ শ্রীশ্রীদাদার অমিয় সুধায় পাচ্ছে বেঁচে থাকার শক্তির অনুপ্রেরণা। প্রতিদিন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সহস্র সহস্র মানুষ আচার্য্যদেব সঙ্গ করার জন্য ছুটে আসছেন ভারতের দেওঘর আশ্রমে।

বর্তমানে ‘সৎসঙ্গ’-এর প্রায় পাঁচ সহস্র কেন্দ্র রয়েছে; এইগুলি সৎসঙ্গ বিহার, সৎসঙ্গ অধিবেশন কেন্দ্র, সৎসঙ্গ উপাসনা কেন্দ্র, সৎসঙ্গ মন্দির, ঠাকুরবাড়ি প্রভৃতি নামে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, ব্রহ্মদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমিরিকাতেও ছড়িয়ে আছে কেন্দ্রগুলো।

সৎসঙ্গের উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সৎসঙ্গ কখনো সম্প্রদায়ে বিশ্বাস করে না। ধর্ম কখনও বহু হয় না-ধর্ম এক। সপারিপার্শ্বিক জীবন-বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলাই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। ধর্ম মূর্ত্ত হয় আদর্শে এবং শ্রীশ্রীঠাকুর হলেন ধর্মের মূর্ত্ত আদর্শ। তিনি কোন সম্প্রদায়-বিশেষের নন, বরং সব সম্প্রদায়ই তাঁর। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-“একজন মানুষের বিনিময়ে আমি একটি সাম্রাজ্য ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু একজন মানুষকে ছাড়তে পারি না।

Print Friendly, PDF & Email