April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

বৃষ্টি হোক বা না হোক আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন

আলী আসগর স্বপনঃ  আজ ১ আষাঢ়। বৃষ্টি হোক বা না হোক আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। ষড়ঋতুর পর্যায়ক্রমে বাংলার প্রকৃতিতে দ্বিতীয় ঋতু হিসেবে বর্ষার আগমন ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম দিয়ে গ্রীষ্মের বিদায় হলেও আজ বর্ষার প্রথম দিনের ভোর থেকেই ঝকঝকে আকাশ।
আষাঢ়ের নবীন মেঘের আগমন যেন নবপথিকেরই মতো। সে আসে যেমন নবীনের অভিনবত্ব নিয়ে, তেমনি আসে পুরাতনের পুঞ্জিভূত রূপ নিয়ে। তাই সে কখনো চিরনতুন আবার কখনো চিরপুরাতন। আমাদের নিত্যদিনের এই পরিচিত পৃথিবী আমাদেরই ব্যবহার দ্বারা এত সীমাবদ্ধ মলিন হয়ে যায় যে, আমরা তার মধ্যে কোনো সৌন্দর্য দেখতে পাই না। কিন্তু আষাঢ়ের নবীন মেঘ সেই নতুন পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। সেই আদি-অনন্তকাল থেকেই আষাঢ়ের এই রূপ বাংলা প্রকৃতির কাছে চিরচেনা। তুমুল বৃষ্টিধারা, নদীমাতৃক দেশের নদীর পূর্ণ যৌবন, নদীকূলের ভাঙাগড়া সবই বাঙালির রক্তের সঙ্গে যেন মিশে আছে।
আষাঢ় আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কেননা গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে ফসলের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তখনই বৃষ্টিধারা কৃষি জমিকে চাষযোগ্য করতে, মাটিকে নরম করে আবাদযোগ্য করতে নেমে আসে আকাশ থেকে। কৃষকের মুখে ফোটে আনন্দের হাসি। বাংলার প্রকৃতির এই সবুজ-শ্যামল রূপ তা তো বর্ষারই দান। বাংলার চিরচেনা সবুজ রূপকে সত্যি করতে আর কৃষকের ফসল বোনার স্বপ্নকে সফল করতেই বর্ষা আসে। এ ঋতুতে আরো ফোটে কতো ফুল। কদম, কেয়া, খালবিলে শাপলা, শালুক আরো নাম না জানা কতো ফুল। এছাড়া কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছ্বল নৃত্যের অনুষঙ্গথাকে এই আষাঢ়েই। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের দামাল শিশুরা মাঠে-ঘাটে তুলতো শাপলা-শালুক। নদীতে জেলেরা দল বেঁধে ধরতে যায় মাছ। হয়তো নগর সভ্যতার তাণ্ডবে হারিয়ে গেছে আজ তার অনেক কিছুই। তবে আজো সেদিনগুলো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি আবহমান গ্রাম বাংলা থেকে।
বর্ষার আগমনে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট নগরবাসীর এবার যেন মুক্তির পালা। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের নিদাঘ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আকুতি ক্লিষ্ট প্রাণের। গ্রীষ্মের তাপদাহকে ম্লান করে দিতে অঝোর বৃষ্টিধারায় মহাআয়োজনের মাধ্যমেই প্রকৃতিতে বাংলা পঞ্জিকার দ্বিতীয় ঋতুটির আগমন ঘটবে। খাঁ-খাঁ রোদকে সামাল দেয়ার যত প্রস্তুতি নিতে থাকবে আষাঢ় নিজেই। শুষ্ক-রুক্ষ, তাপদাহে নাকাল প্রকৃতি আকাশের কান্নার শীতল পানিতে সবুজ সতেজ হয়ে উঠবে। প্রতিটি বৃষ্টির ফোটায় তরুলতা পাবে সজীব হয়ে ওঠার নির্ভেজাল উদ্দীপনা। দারিদ্র্য বঞ্চনা আর বৈষম্যের অবসান ঘটুক আমাদের জাতির জীবনে।
কদম কেতকী আর মেঘমেদুর বর্ষার অমল রূপের মাধুরীতে ভরে উঠুক আমাদের চারপাশ।
Print Friendly, PDF & Email