May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

যুবক বয়সেই হজ আদায় করা ভালো

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন:  হজ ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। প্রধানত আল্লাহ ও রাসূল সা. এর ওপর ঈমান আনার মাধ্যমে একজন মানুষ ইসলামে প্রবেশ করে। একজন মুমিনকে তাই বলা হয়েছে, ‘হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁকে ভয় করার হক আদায় করে এবং মুসলিম (আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে মরো না।’ (সূরা: আল-ইমরান, আয়াত : ১০২)।

এ কারণে একজন মুমিনকে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হবার জন্য সব সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। হজ ফরজ হবার শর্ত হচ্ছে, একজন মুসলিম হজের সফর থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তার অধীনস্তদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা ইত্যাদির খরচ রেখে যাবার পর সৌদি আরবের মক্কা-নগরীতে অবস্থিত আল্লাহর ঘর বা কাবা ঘর ও সংশ্লিষ্ট স্থানে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচের সমপরিমাণ অর্থের মালিক হয় তাহলেই তার ওপর হজ ফরজ। হজ একই সাথে শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। কোনো একজন লোকের হজ যদি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় তাহলে সে এমন নিষ্পাপ হিসেবে ফিরে আসে যেনো তাকে তার  মা নতুন  করে প্রসব করলো।

একজন লোক কত বছর বয়সে হজে যাবেন? হজ ফরজ হওয়া একজন লোকের ওপর এই হজ আদায় করার সময় কখন? এমন প্রশ্নের সম্মূখীন হয়ে, আমাদের বাংলাদেশের হাজীদেরকে দেখার জন্যে যদি কেউ হাজী ক্যাম্প ঘুরে আসেন তাহলে সে এসে বলবে যে, ‘একদম বুড়ো না হয়ে মনে হয় হজ করতে যেতে হয় না।’ কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। আমাদের দেশের হজ ফরজ হওয়া লোকদের অন্য আরো একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। তারা বলেন, এতো অল্প বয়সে হজে গেলে ফিরে এসে কি হজ ধরে রাখতে পারবো? ইসলামে এ ধরনের কথার কোনো যুক্তি নেই। সম্পূর্ণ অজ্ঞতাবশত এমন কথা আমাদের কেউ কেউ বলেন। আসলে ইতোপূর্বে যেমনটা বলেছিলাম, হজ হচ্ছে আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। অর্থ বা টাকা-পয়সা হলো; কিন্তু মন ও শরীর যদি ঠিক না থাকে তাহলে তার পক্ষে হজ করা কঠিন। হজের জন্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঢাকার হজ ক্যাম্পে অবস্থান, বিমানে ভ্রমণ করা, জেদ্দায় গিয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদন শেষে নির্দিষ্ট মুয়াল্লিম বা হজ গাইডের প্রস্তুত রাখা মক্কার আবাসস্থলে গিয়ে পৌঁছার মতো শরীর ও মন দরকার। এরপরের যে কাজ তা হলো, জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা। মিনা থেকে ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে অবস্থানের জন্য যাওয়া। সূর্যাস্তের পর রাতে মুজদালিফায় অবস্থান, সেখান থেকে ছোট পাথর সংগ্রহ, ১০ তারিখ ফজরের পর থেকে আবার মিনায় অবস্থান, জামারাতে (বড়, মেজো ও ছোট) শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, মাথা মুণ্ডন করা, জবাই করা, তাওয়াকুল ইফাদা করা, এরপর মিনায় অবস্থান করা, পরদিন ১১ তারিখ শয়তানকে পাথর মারা, ১২ তারিখও অনুরূপ কাজ করা, এবং তারপর তাওয়াফুল বিদার মাধ্যমে মক্কা থেকে বেরিয়ে যাওয়া, আর তাতে অপারগ হলে ১৩ তারিখও অনুরূপ পাথর নিক্ষেপ করে তাওয়াফুল বিদার মাধ্যমে হজ সম্পন্ন করা হয়।

এই যে কাজের ছোট একটি ফিরিস্তি দেয়া হলো- এ কাজগুলোর জন্য পূর্ণ শক্তিশালী তারুণ্যদীপ্ত একজন টগবগে যুবক দরকার, যার পক্ষে কখনো কখনো খেয়ে না-খেয়ে, বিশ্রাম নিয়ে কিংবা না-নিয়ে এ কাজগুলো করা সম্ভব। অর্থাৎ এমন একজন যুবক দরকার, নইলে তাওয়াফ করে তৃপ্তি নেই, সা’য়ী করে তৃপ্তি নেই, পাথর নিক্ষেপ করে তৃপ্তি নেই, জবাই করে তৃপ্তি নেই ইত্যাদি। অর্থাৎ আরাফা, মুজদালিফা, মীনার মধ্যে প্রচুর হাটাহাটির পর ক্লান্ত অবসাদগ্রস্ত হয়ে না-পরার মতো শক্তিশালী একজন লোক দরকার। যিনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪০ বছরের নিচের একজন লোক হবেন। তা হলে হজের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব। অথচ আমরা দেখি আমাদের দেশের বেশীর ভাগ হজ ফরজ হওয়া লোক এ বয়সে হজের চিন্তাও করেন না। মনে রাখতে হবে, শক্তিশালী একজন লোক ছাড়া হজের এসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করাটা খুবই কষ্টকর। তাই যুবক বয়সেই হজ করা শ্রেয়। তাছাড়া কেউ যদি ভাবে তাড়াতাড়ি হজ করলে হজ ধরে রাখতে পারবে না, তার তো ঈমানই পূর্ণ হয়নি। সে ক’দিন বেঁচে থাকবে তার নিশ্চয়তা দিতে সে অক্ষম। অতএব ঈমান আনার পর পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হওয়ার চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। নইলে এমন লোকদের ইবাদত লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে হয়ে যেতে পারে। যাতে সওয়াবের তুলনায় বরং গুণাহ বেশি হতে পারে। কখনো কখনো তা শিরকও হয়ে যায়। এমন কাজ করা কোনক্রমেই উচিৎ নয়। কারণ আল্লাহ বলেছেন তিনি শিরক ছাড়া অন্যান্য সকল গুনাহ তাওবা করলে মাফ করে দিবেন। শিরক হচ্ছে কবীরা বা বড় গুনাহ। তাই ছোট পরিসরে আবারো বলতে চাই, আল্লাহ আমাদের হজ ফরজ হওয়া লোকদের যুবক বয়সেই হজ আদায়ের তাওফীক দিন। আমীন। সূত্র :রাইজিংবিডি

Print Friendly, PDF & Email