May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জন্ম থেকে দখল বে-দখলে বড়ো হয়েছে ….

এইচ এম অাতিক ইকবাল: সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু পিতার অাদর থেকে সারজীবনের জন্য বঞ্চিত, কারন জন্মলগ্নের দিনটিতেই পিতার মৃত্যু হয়। এখানে থেমে যায়নি জনম দুঃখি শিশুর দুঃখ সমুদ্র। একের পর এক প্রতিকুলতা অার দখল বে-দখলে শিশুকাল হতে পাড়ি দিয়ে ১৯৬৩ সাল হতে এখনো তিনি অবৈধ দখলদারদের জিম্মায় পড়ে অাছেন।
 উসমান মালত ভেদেরগঞ্জ উপজেলাধীন সখিপুর থানার সখিপুর ইউনিয়নের ০৬নং ওয়ার্ডের জমির ঢালীর কান্দি গ্রামের মৃত মেহেরচান মালত ও জহানারা বেগমের পুত্র।
 মাত্র ২মাস বয়সেই শিশু ওসমান মাকেও হারান, তার পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের অভিবাবকরা মায়ের পিত্রালয়ে বিদায় দিয়ে দেন। উসমানের দাদা অালী অাহম্মদ মালত শিশু ওসমানকে একই ইউনিয়নের রাজ্জাক তাতী ও তার স্ত্রীর কাছে দত্তক দেওয়া হয়। ওসমানের সুখ সেখানেও সয় না, ৩বছর বয়সে তার পালক মা মৃত্যুবরন করলে পালক বাবা রাজ্জাক তাতী পুনরায় বি করেন, সে ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্মহলে বৈশম্যমূলক অাচরনের কারনে উসমানকে তার দাদা অালী অাহম্মদ মালত নিজ বাড়িতে নিশে অাসেন।
ওখানেই নানা প্রতিকুলতায় যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় উসমান, ১৯৮০ সাল, তার দাদা অাহম্মদ মালতের জমি সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দেন নি তখনো। তাই একি সনে নিজের সম্পদ সন্তানদের সকলের মাঝে বন্টনের সিদ্ধান্ত নিলে উসমানের চাচা রশিদ মালত ও নাসির মালত প্রশ্ন তোলেন “দাদার অাগে পিতা মারা গেলে নাতীরা সম্পদ দাবী করতে পারবে না” সকল কে থামিয়ে দিয়ে দাদা অাহম্মদ মালত তার পুত্র মেহেরচান মামালতের অংশটুকু নাতী উসমান মমালত কে ১৯৮০ সালে তৎকালীন দেড় টাকার স্টাম্পে ৪০শতাংশ জমি লিখিতভাবে দিয়ে যান এবং যেহেতু উসমান তখনো কাগজপত্র খুব একটা বোঝেন না, তাই উসমানের চাচা রশিদ মালতের কাছে উক্ত স্টাম্পটি সংরক্ষনের দ্বায়িত্ব দেন।
চাচা রশিদ মালত পুলিশে চাকরি করতেন, অবসরগ্রহনের পর নিজ গ্রামে চলে অাসেন, এসে নিজের বাড়ির কাজ ধরেন এবং ভাতিজা উসমানকে বলেন তোরে জমি দিছে নাল জমি ওখানে তুই ঘর তুলে থাক। উসমান তখন ৪০শাতংশ জমি বুঝে নিতে চাইলে তার চাচা রশিদ মালত বলেন তোকে ৪০শতাংশ জমি দেয় নাই, তখন দাদার দেওয়া লিখিত স্টাম্পটি দেখতে চাইলেও অস্বীকার করে বলেন কোন স্টাম্প দেয়নি। স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে এ নিয়ে দরবার বসলে রশিদ মালত সকলের সম্মুখে স্বীকার করেন এবং লিখিত দেন ঐ স্টাম্প তার কাছেই অাছে কিন্তু খুজে পাচ্ছেন না, ঐ স্টাম্পে ৪০শতাংশ জমিই দেওয়া হয়েছিলো স্বীকার করে এই জমি তার ভাতিজা কে তিনি বুঝিয়ে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু এর পর একের পর এক বছর কেটে গেছে কিন্তু উসমানের ৪০শাতংশ জমি বুঝিয়ে না দিয়ে বরং সে জমির ২৮শতাংশ অবৈধ দখলে নিয়েছে চাচা রশিদ মালত। নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখানে দোকান ঘরও তুলেছেন তিনি, বারবার স্থানীয় ইুনিয়ন পরিষদে বসলে সব স্বীকার করেন অথচ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বুঝিয়ে দেন না উসমান কে। একটু একটু করে দখল করে নিচ্ছে জনমদুঃখি ওসমানের জমি, একের পর এক মামলা হয়ছে, বারবার জমিটির রায় পেয়েছে ওসমান। কিন্তু অবৈধ দখলদার মুক্ত হতে পারছেন না তিনি। তা উপায়ন্তর না পেয়ে সর্বশেষ ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বারস্থ হয়েছেন উসমান মালত ও তার পরিবারের লোকজন, লিখিত ভাবে অভিযোগ ও অাবেদন জানিয়েছেন তারা।
জীবনের করুন কাহিনী বলতে গিয়ে মুখ খানা কেমন মলিন হয়ে যায় উসমানের, চাপা কান্না নিয়ে বলেন “অামিতো সেই জন্মের দিন থেকেই বাবা-মা হারিয়েছি, তারপর কতোজনের দখলে বে-দখলে বড়ো হয়েছি, এখনতো জীবনের শেষ সময়, যদি পারেন তাহলে দয়া করে মৃত্যুর অাগে অামাকে দখলমুক্ত করেন অাপনারা, বিশ্বাস করেন কোনদিন কারো অাদর বা নিজের স্বাধীনতা কাকে বলে জানতাম না, কে শিখাবে অামাকে? নিজের মতোন  স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে ক্যামন লাগে তা একটু এই শেষ বয়সে দেখতে চাই”।
উসমানের চাচা রশিদ মালত ও নাসির মালত সাথে যোগাযোগ করা যা নি, তবে প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিনের সমস্যা এটা, উসমান মালত বারবার দরবার সালীশিতে জিতে, বারবার মামলার রায়েও জিতে উসমান কিন্তু রশিদ মালত তার জমি বুঝিয়ে দেয় না।
এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির অাহম্মেদ বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি ও দানকৃত সম্পত্তি বুঝে পাওয়ার জন্য উসমান মালত নামে একজন লিখিত অাবেদন করেছেন, অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ অাইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Print Friendly, PDF & Email