April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শহীদ সন্তান সুমন জাহিদের মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের জোর দাবী : প্রজন্ম’৭১

প্রথমকথা ডেস্ক: প্রজন্ম’৭১ এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর এবং  সহ সভাপতি আসিফ মুনীর এক যৌথ বিবৃতিতে জানান,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনীর নারকীয় হত্যা যজ্ঞের শিকার শহীদ কবি সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের সন্তান, শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১-এর সংগঠক সুমন জাহিদ-এর অকাল প্রয়াণে আমরা শোকাভিভূত।
গত ১৪ জুন সকালে ঢাকার শাহজাহানপুর রেললাইনের ধারে তাঁর বিচ্ছিন্ন মরদেহ পাওয়ার খবর জেনে আমরা স্তম্ভিত ও শঙ্কিত। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে এই মৃত্যু নিয়ে যে মতামত প্রকাশিত হচ্ছে, তা বাঞ্ছনীয় নয়।
যেভাবে এবং যে কারণেই ঘটুক না কেন, এই নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তদন্ত করছে। এখনও ডাক্তারি পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। অস্বাভাবিক এবং অকাল প্রয়াণের ক্ষত অনেক গভীর, তা যে ভাবে, যে কারণেই হোক না কেন। এমতাবস্থায় এক শহীদ সন্তানের আত্মার শান্তি ও তাঁর স্বজনের শোক সামলে ওঠারপ্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য দেশবাসী, সরকার, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ অনুরোধ করছি।
আমরা স্মরণ করছি, ১৯৯১ সালে প্রজন্ম ৭১-এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সুমন জাহিদ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দিক নির্দেশনায় সহায়তা করেছেন। শহীদ সেলিনা পারভিনের সুযোগ্য সন্তান একাধারে শহীদ মা-এর স্বীকৃতি ও স্মৃতি-সংরক্ষণে নিজেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের বিরুদ্ধে গণ আদালতে তিনি একজন সাক্ষ্যদাতা, আর ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের হোতা আলবদর চৌধুরী মইনউদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড মামলার একজন অন্যতম সাক্ষী। দুই আদালতেই এই স্বাধীনতা বিরোধীরা অভিযুক্ত হন এবং তাদের কৃত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। এহেন হাই প্রোফাইল মামলায় সাক্ষ্য দেবার কারণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিবর্জিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছে প্রয়াত সুমন জাহীদসহ আরও কয়েকজন সাক্ষী বিভিন্ন সময় হুমকি পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করছি, তাঁর মৃত্যুর সাথে কোনভাবে তাঁকে প্রদত্ত হুমকির কোন যোগসূত্র আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এছাড়া সুমন জাহীদ ফার্মারস ব্যাঙ্কে দায়িত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন, যেখান থেকে কয়েকমাস আগে ব্যাঙ্কের উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে তিনি চাকরী থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। এজন্য তিনি মানসিকভাবেও বিমর্ষ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য ফার্মারস ব্যাঙ্কের পরিস্থিতিও দায়ী কিনা, সেটিরও তদন্ত হওয়া জরুরী বলে আমরা মনে করি।
যে কোন আকস্মিক মৃত্যু, প্রয়াতের পরিবারকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে মধ্যে ফেলে দেয়। সুমন জাহিদের স্ত্রী এক সুযোগ্য গৃহিণী, তাঁর এক সন্তান কলেজের গণ্ডি পেরোয়নি, আরেকজন স্কুলে। একজন শহীদ সন্তান, যুদ্ধাপরাধী বিচারের এক সাক্ষীর পরিবারের কল্যাণে ও নিরাপত্তায় সহায়তা করতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনীত আবেদন করছি।
একই সাথে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সকল সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে তাঁদের সকলের নিরাপত্তা বিধানের গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছি।(বিজ্ঞপ্তি)

Print Friendly, PDF & Email