May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

রাজাপুরে ঐতিহ্যবাহী বাঁশজাত কুটির শিল্প বিলুপ্ত প্রায়

কামরুল হাসান মুরাদ: ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী বাঁশজাত কুটির শিল্প এখন বিলুপ্ত প্রায়। ফলে এ শিল্পকর্মে নিয়োজিত রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামন খান ও পাড়গোপালপুরের কারিগর সহ উপজেলায় প্রায় দুই হাজার পেশাদার কারিগর এখন চরম দুর্ভোগের শিকার। রাজাপুর উপজেলায় প্রকৃতির দূর্যোগ প্রতিরোধিও পরিবেশের পরমবন্ধু বাঁশঝার হাড়িয়ে যাচ্ছে। বাঁশের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কুটির শিল্প। কুটির শিল্পের সাথে জড়িতরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে তারা তাদের পৈত্রিক পেশাও ছাড়তে পারছে না, আবার এ পেশা আঁকড়ে ধরে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাও দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁশজাত শিল্পকর্মের মধ্যে ডালি,কুলা,চালুন,ঝাঁপি,দোলনা সহ নানা নকশি ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়। তারপরও বাঁশের তৈরি চাটাই,সাজি,মাছ ধরার চাই সহ গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করা জিনিসের এখনও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। কিন্তুু পরিবেশগত অবাধ বৃক্ষনিধনের মাধ্যমে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে বাঁশঝাড়ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

কুটির শিল্পের মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতির প্রতিভাস ফুটে ওঠে, যার নির্মাতা পল্লী অঞ্চলের সাধারন মানুষ,রাজাপুর উপজেলার দুই শতাদিক পরিবার নিজেদের জীবিকা এবং নিজস্ব ব্যবহারের জন্য তারা এ সকল পন্য উৎপাদন করে। কুটির শিল্পের পন্য বরিশাল বিভাগের নান হাটে-বাজারে বিক্রি করত কিন্তুু এখন আর সেটা চোখে পড়ে না। কেননা প্লাস্টিকের কারনে মানুষের কাছে তেমন চাহিদা পাচ্ছে না কুটির শিল্প।বর্তমানে এ শিল্পের কদর কমলেও থেমে নেই এ পরিবার গুলোর জীবন যুদ্ধ। বাঁশ তৈরি কুটির শিল্পের কারিগরদের মাঝে নেমে এসেছে দুর্দিনের ছায়া।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু হয়ে মধ্যে রাত পর্যন্ত চলে বাঁশ কাটা, নান রকম পন্য তৈরির কাজ। বাঁশের তীক্ষè ফলায় কখনো কখনো ক্ষত হয় হাতের তালু। সেই ক্ষত এক সময় শুকিয়ে যায়,আবার হয় সেই ক্ষত। কম পুঁজি বেশি লাভ হওয়ায় এভাবেই চলছে তাদের জীবন জীবিকা। সংসারের গতি সচল রাখতে পুরুষের চেয়ে নারীদের কাজের ভার বেশি।
গ্রাম বাংলার কুটির শিল্প হারাতে বসেছে ঐতিহ্য। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিকের তৈরি পন্যর কাছে এ শিল্পের তৈরি পন্য মার খেতে বসেছে তাই দৈন্যদশায় পড়েছে এ শিল্পটি। বাঁশের সৌখিন শিল্পকর্মের নানা পন্যের কদর কমেছে গ্রামে-শহরে। ফলে কুটির শিল্পের সাথে জড়িত পরিবার গুলো মূখ ফিরিয়ে নিচ্ছে উৎপাদন কার্য থেকে।
বাঁশজাত কুটির শিল্পের কারিগর দিলিপ বড়াল জানান, পৈত্রিক পেশার হাল ধরে বিভিন্ন গ্রামের নারী পুরুষ বাঁশের পন্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তুু এখন প্লাস্টিকের কারনে বাজারে চাহিদা কম কুটির শিল্পের। আর অন্য দিকে বাঁশের সমস্যা,সাথে পুঁজি সল্পতা আছেই। সে জন্য রাজাপুর উপজেলার বাঁশ জাত কুটির শিল্পে নিয়োজিত দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋন সহায়তা প্রদান করা হলে এই কুটির শিল্প যেমন বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেত, তেমনি বাঁশজাত শিল্পের কারিগররা পৈত্রিক পেশাকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে জীবন জীবিকা চালিয়ে নিতে সক্ষম হতো।

Print Friendly, PDF & Email