May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ঘৃতকুমারীর গুণাগুণ

ডেস্ক: অ্যালোভেরা, বাংলায় এটি পরিচিত ঘৃতকুমারী হিসেবে। এটি বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। এর পাতাগুলি পুরু, দুই দিকে করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে জেলের মতো পিচ্ছিল শাঁস থাকে। বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড ও নানান ধরণের ভিটামিন রয়েছে অ্যালোভেরা জেলে। অ্যালোভেরা গাছ থেকে জেল সংগ্রহ করে টিউবে ভরে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এখন অবশ্য গাছের পাতা ছেঁচে নেওয়া কিংবা সরাসরি জেল সংগ্রহ করার প্রয়োজন নেই তেমন। সুদৃশ্য বোতল বা প্যাকেটেই পাওয়া যায় অ্যালোভেরার সবটুকু গুনাগুণ। অ্যালোভেরা জেলের পাশাপাশি শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ক্রিম, তেল, লোশনসহ নানা কসমেটিকস রয়েছে বাজারে।

স্বাস্থ্যরক্ষায় অ্যালোভেরা

– অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।

– অ্যালোভেরায় মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিডসহ নানা ধরণের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যা হাড় ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।

– দেহে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করলে তা অপসারণ করতে সাহায্য করে অ্যালোভেরা।

– অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ঔষধির কাজ করে। বিভিন্ন চর্মরোগ ও ক্ষত সারায় এটি। অনেক সময় প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এটি।

– অ্যালোভেরার জুস ক্লান্তি দূর করে দেহকে সতেজ করে।

– নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করলে হজম শক্তি বাড়ে। পরিপাক তন্ত্রের নানা জটিলতা সারাতেও সাহায্য করে অ্যালোভেরা।

– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় অ্যালোভেরা। এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।

– সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

রূপচর্চায় অ্যালোভেরা

– অ্যালোভেরার জেল মেছতা দূর করে। আঙ্গুলের ডগায় খানিকটা জেল নিয়ে দাগের উপর ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। সারা রাত লাগিয়ে রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক সপ্তাহ লাগালে মেছতার দাগ কমে যাবে। এছাড়া অ্যালোভেরা, মধু ও শসা একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগালে মেছতা দূর হওয়ার পাশাপাশি সতেজ হয়ে উঠবে ত্বক। অ্যালোভেরা ও গাজর সেদ্ধ পেস্ট করে লাগালেও উপকার পাবেন।

– সানবার্ন থেকে রেহাই পেতে অ্যালোভেরা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারলে। রোদে পোড়ার তামাটে রঙ দূর হয়ে যাবে দ্রুত।

– বাইরে থেকে এসে মুখ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর  ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে হালকা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। এবার  স্ক্রাব দিয়ে ত্বকের ওপর জমে থাকা মরা কোষ ও ময়লা পরিষ্কার করে  মুখ ভালো করে মুছে অ্যালোভেরা প্যাক লাগান। নিমিষেই স্নিগ্ধ হয়ে যাবে ত্বক।

– ত্বক সতেজ রাখার জন্য নিয়মিত অ্যালোভেরার প্যাক লাগাতে পারেন। দুই চামচ অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে প্যাক তৈরি করুন। পুরো মুখে লাগান, শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

– মুখের ত্বকে প্রতিদিন দুইবার অ্যালোভেরা লাগালে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ত্বক। গোলাপ জল ও অ্যালোভেরা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালেও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে।

– ত্বকের বলিরেখা দূর করার জন্য অ্যালোভেরার রস উপকারী। এজন্য শুকনো কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো, মধু ও তুলসী পাতার মিশ্রণের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন।

– কনুই বা হাঁটুর কালো দাগ দূর করতে অ্যালোভেরার পাতার রস নারকেল তেলের মধ্যে মিশিয়ে লাগান।

– ব্রণের দাগ দূর করার জন্য অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী।  অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও চন্দন পাউডার মিশিয়ে মুখে লাগান। ব্রণের দাগ চলে যাবে।

– স্ক্রাব হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরার সঙ্গে দুধ, মসুর ডালের গুঁড়া, তুলসী পাতা, চন্দন ও গোলাপ পাপড়ি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি দিয়ে ঘষে ঘষে ত্বক পরিষ্কার করুন। মরা কোষ উঠে স্নিগ্ধ হবে ত্বক।

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা

– চুল পরিষ্কার করতে শ্যাম্পুর বদলে অ্যালোভেরা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যায়। নারিকেল তেল, লেবুর রস ও নারিকেলের দুধের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করুন। চুল সতেজ থাকবে।

– চুলের যত্নে যারা বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন না তাদের জন্য চটজলদি সমাধান এনে দিতে পারে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা জেল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ২ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে চুল পড়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি নতুন চুল গজাবে।

– অ্যালোভেরার জেল, টক দই এবং ডিম মিলিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল বাড়বে দ্রুত।

– চুলের সুস্থতায় অ্যালোভেরা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। কিছু মাইল্ড বা হারবাল শ্যাম্পু অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ থাকে। চাইলে সাধারণ শ্যাম্পুতে খানিকটা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে হারবাল শ্যাম্পু বানিয়ে নিতে পারেন।

– চারভাগের একভাগ আর্মন্ড ওয়েলের সাথে আধা কাপ অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে মাথায় লাগান। চুলের ময়েশ্চার বাড়বে।

– চুল সুস্থ রাখতে নিয়মিত তেল ব্যবহার প্রয়োজন। নারিকেল বা জলপাই তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে চুলে লাগালে পারেন। চাইলে ঘরে বসেও বানিয়ে নিতে পারেন অ্যালোভেরা হেয়ার অয়েল। চার ভাগের একভাগ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ভেজিটেবল অয়েল মিক্স করুন। তারপর মিশ্রণটি ১০ মিনিট গরম করে ঠাণ্ডা করে নিন। শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে ও চুল পড়া কমবে। এছাড়া খুশকি দূর করতে লেবুর রস ও নারিকেল তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় লাগাতে পারেন।

– চুলের ঝলমলে ভাব বাড়াতে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা। অনেক সময় রোদ ও ধুলাবালিতে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। দুর্বল হয়ে মাঝখান থেকে ভেঙ্গে পড়ে। শ্যাম্পু করার পর নিয়মিত অ্যালোভেরা কন্ডিশনার ব্যবহার করলে মুক্তি পাবেন এ সমস্যা থেকে। বাজার থেকে না কিনে ঘরে বসে বানিয়ে নিতে পারেন কন্ডিশনার। এজন্য গামলার পানিতে একটি লেবুর রস মিশান। পাঁচ ফোটা নারিকেল তেল কিংবা তিলের তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করুন। সূত্র: সময়

Print Friendly, PDF & Email