April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

মানিকগঞ্জে র‌্যাবের অভিযানে

ডেস্ক : র‌্যাবের অভিযানে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থেকে মুক্তিপনের দাবীতে জিম্মিকৃত দুইজন ভিকটিম উদ্ধার এবং বিদেশী অস্ত্রগুলিসহ অপহরণকারী চক্রের ১০ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার।

গত ০৯ মার্চ ২০১৮ তারিখ আনুমানিক সকাল ১১.০০ ঘটিকায় ১। মোঃ জাফর ইকবাল (৪০), ২। মোঃ মিরাজ গাজী (৩৫) দ্বয় ব্যবসায়িক কাজে নিজ বাসা থেকে বের হন। কিছুক্ষণ পর হতে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল সমূহ বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যরা পরিবারিক প্রয়োজনে তাদের সাথে বারংবার যোগাযোগে ব্যর্থ হলে চিন্তিত অবস্থায় সময় পার করতে থাকেন। পরবর্তীতে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হতে ৫০,০০,০০০/-(পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা মুক্তিপন দাবি করে এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে ভিকটিম মোঃ জাফরের ভাগ্নে হাফিজুর রহমান সবুজ (২৮) র‌্যাব-২, শেরেবাংলানগর, ঢাকায় আসে।

র‌্যাব-২ অভিযোগ প্রাপ্ত হয়ে ভিকটিম ১। মোঃ জাফর ইকবাল (৪০) এবং ২। মোঃ মিরাজ গাজী (৩৫) দ্বয়কে উদ্ধারের নিমিত্তে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। র‌্যাব-২ জানতে পারে যে, ইতিমধ্যে ভিকটিম মিরাজ এর পক্ষ হতে মুক্তিপণ হিসেবে মোঃ রাজিবুল হাসান (রাজীব) ইসলামী ব্যাংক, ঝিটকা বাজার শাখা, মানিকগঞ্জ একাউন্ট নং-২০৫০৭৭৭০২০০২২৯০০৩ একাউন্টে ২,৫০,০০০/- টাকা জমা করা হয়েছে, উক্ত টাকা যে কোন সময় ব্যাংক থেকে উত্তোলিত হতে পারে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে র‌্যাব তার গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকাতায় গত ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখ সময় আনুমানিক ১৭.০০ ঘটিকায় উক্ত ইসলামী ব্যাংক, ঝিটকা বাজার শাখা, মানিকগঞ্জ হতে মুক্তিপনের টাকা নেওয়ার সময় (১) মোঃ রাজিবুল হাসান রাজীব (২৭) কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঐ দিন ২১২০ ঘটিকায় অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা (২) মোঃ সেলিম মোল্লা (৫০), (৩) মোঃ মোশারফ হোসেন (৪৭), (৪) মোঃ নিরব আহম্মেদ@টিটু (২৯), (৫) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), (৬) মোঃ তারেক হোসেন (৩১), (৭) মোঃ আবুল বাশার বিশ্বাস (৩৩), (৮) মোঃ রুহুল আমিন (৩৫), (৯) মোঃ তারেক হোসেন পুলক (২৬) (১০) মোঃ তুহিন বিশ্বাস (৩০) গ্রেফতার সহ অপহৃত ভিকটিমদ্বয়কে হাত, পা ও চোখ বাধা অবস্থায় মোঃ সেলিম এর বাড়ী (গ্রাম-কালোয়, থানা-হরিরামপুর, জেলা- মানিকগঞ্জ) হতে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মোঃ সেলিম মোল্লা সমাজে ভদ্রবেশী আচরণের অন্তরালে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে। এলাকার সাধারণ জনগণ তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কাছে জিম্মি। সে এলাকার উৎশৃঙ্খল যুবক, উঠতি বয়সি বখাটে ছেলেদেরকে কাচা টাকার লোভ দেখিয়ে রাজধানীসহ এলাকার বিত্তবান ব্যবসায়িদেরকে টার্গেট করে অপহরণ পূর্বক দীর্ঘদিন থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

উদ্ধারকৃত অপহৃত ভিকটিমের নিকট জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাসা হতে ফার্মগেটে আসার পর কতিপয় ব্যক্তিরা তাদেরকে ধানমন্ডি কোন দিক দিয়ে যেতে হবে জিজ্ঞাসা করে তাৎক্ষনিকভাবে একটি সাদা মাইক্রোবাসে জোর পূর্বক তুলে চোখ, মুখ বেধে অস্ত্রে ভয় দেখিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা তাদেরকে আস্তানায় নিয়ে মারধর করা শুরু করে এবং মুক্তিপণের টাকা দাবী করে। তারা এত টাকা কোথায় পাবো বলে অনুনয়-বিনয় করলে তখন থেকে অপহরণকারীরা প্রথমে হাত, পা ও চোখ বেধে পা উচু করে ঝুলিয়ে ভিকটিমদেরকে টর্চারিং শুরু করে। তখন তারা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পরিবারের সাথে কথা বলে টাকা আনার ব্যবস্থা করে।

অতঃপর অপহরণকারীদের চাপে ভিকটিম জাফর তার স্ত্রী’র সাথে মোবাইলে কথা বললে তার বাসায় ড্রয়ারে থাকা চেকবহি ও নগদ টাকাসহ (২ লক্ষ ৮৫ হাজার) মানিকগঞ্জে নিয়ে আসার জন্য বললে। তার বোন ০৯ মার্চ ২০১৮ তারিখ ২২৩০ ঘটিকার সয়ম উক্ত চেকবহি ও টাকা মানিকগঞ্জে নিয়ে আসে। মানিকগঞ্জে অপহরণকারী সদস্যদের একজন তার বোনের সাথে দেখা করে চেকবহি ও টাকা নিয়ে আসে।

অপরদিকে অপহরণকারীদের চাপে ভিকটিম মিরাজ ও তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত পাঁচ লক্ষ টাকা পাঠাতে বলে এবং একটি একাউন্ট নাম্বার দেয়। অনেক কষ্ট করে ভিকটিম মিরাজের স্ত্রী দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা একাউন্টে প্রেরণ করে এবং বাকি টাকা যোগার করার চেষ্টা করছে বলে জানায়। উক্ত একাউন্ট ছিল পূর্বে বর্ণিত রাজীবের একাউন্ট। উক্ত রাজিব অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা সেলিম এর সন্তান।

অপহরণকারীদের চাহিদানুযায়ী টাকা পাঠাতে দেরি হওয়ায় পুনরায় তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত, পা, চোখ বাধা অবস্থায় ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে তারা পবিত্র কালেমা পাঠ করায় ও বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে একটি গাড়িতে উঠায়। আমরা অনুনয়-বিনয় করে প্রান ভিক্ষা চেয়ে আকুতি জানায় এবং বাকী টাকা খুব দ্রুত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। অতঃপর র‌্যাব সদস্যরা এসে তাদেরকে বন্দীদশা হতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো ক। মোঃ সেলিম মোল্লা (৫০), পিতা-মৃত-আজিজুল হক মোল্লা, সাং-কামারঘুনা, থানা- হরিরামপুর, জেলা- মানিকগঞ্জ। এ/পি- শাহজাহানপুর, ২৬৮/১, ডিএমপি, ঢাকা। খ। মোঃ রাজিবুল হাসান রাজীব (২৭), পিতা- মোঃ সেলিম মোল্লা, সাং-কামারঘুনা, থানা- হরিমারপুর, জেলা- মানিকগঞ্জ।গ) মোঃ মোশারফ হোসেন (৪৭), পিতা- মৃত সকিল উদ্দিন, সাং-রানীয়াদী, থানা-হরিরামপুর, জেলা- মানিকগঞ্জ।ঘ। মোঃ নিরব আহম্মেদ@টিটু (২৯), পিতা- মোঃ আব্দুল হালিম মোল্লা, সাং-কান্দালংকা, থানা-হরিরামপুর, জেলা-মানিকগঞ্জ।ঙ। মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), পিতা-মৃত-রইচ উদ্দিন, সাং-ব্যাসদি, থানা-হরিরামপুর, জেলা-মানিকগঞ্জ।চ। মোঃ তারেক হোসেন (৩১), পিতা মোঃ আকছার উদ্দিন, সাং-গোপিনাথপুর মধ্যপাড়া, থানা-হরিরামপুর, জেলা- মানিকগঞ্জ।ছ। মোঃ আবুল বাশার বিশ্বাস (৩৩), পিতা-মৃত-রইজ উদ্দিন বিশ্বাস, সাং-বোসধী, থানা-হরিরামপুর, জেলা-মানিকগঞ্জ।জ। মোঃ রুহুল আমিন(৩৫), পিতা- মোহাম্মদ আলী, সাং-ঝিদকা ব্যাপারী পারা, থানা-হরিরামপুর, জেলা-মানিকগঞ্জ।
ঝ। মোঃ তারেক হোসেন পুলক (২৬), পিতা-মৃত-কেবিএম মহিউদ্দিন মোল্লা, সাং-ইশাখাবাদ, থানা-হরিরামপুর, জেলা-মানিকগঞ্জ। ঞ। মোঃ তুহিন বিশ্বাস (৩০), পিতা-আজিজ বিশ্বাস, সাং-বাহেরচর, থানা-হরিরামপুর, জেলা- মানিকগঞ্জ।

উদ্ধারকৃত মালামাল বিদেশী পিস্তল ০৬ (ছয়) টি, ম্যাগাজিন ০৯ (নয়) টি, গুলি ৩৬ (ছত্রিশ) রাউন্ড, চাইনিজ কুড়াল ০৭ (সাত) টি, চাপাতি ০৪ (চার) টি, মুক্তিপণের নগদ টাকা ২,৮৫,০০০/- (দুই লক্ষ পঁচাশি হাজার) টাকা। –প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।

Print Friendly, PDF & Email