April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

পাখির কলকাকলীতে মুখরিত নাটোরের সমসখলসী গ্রাম

ডেস্ক:  জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার সমসখলসী গ্রাম এখন পাখির কলকাকলীতে মুখরিত। প্রতিদিন পাখির কিচিরমিচির ডাক আর কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে এই গ্রামবাসীর। গ্রামবাসীর সাথে পাখিদের মিতালী দেখতে পাখি গ্রামে ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী।
এই গ্রামের পুকুর পাড়ে আম, কাঁঠাল, শিমুল, তেঁতুল, খেজুর, তালগাছ আর বাঁশঝাড়ের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে শামুকখোল, পানকৈাড়ি, দোয়েল, ঘুঘুসহ নানান জাতের শত শত পাখি। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকালেই দেখা যাবে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ডানা মেলে উড়ছে ইচ্ছেমতো।
উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে গ্রামের গাছে গাছে পাখিরা নির্ভাবনায় বেঁধেছে বাসা আর মেতে উঠেছে খোশগল্পে। পাখির কলকাকলী ও কিচিরমিচির শব্দে পুরো গ্রাম জুড়ে যেন বিরাজ করছে এক মধুময় সুরের আবহ।
নাটোর জেলা সদর থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরের নিভৃত এই গ্রামে ২০০৫ সালের দিকে অতিথি পাখির আনাগোনা শুরু হয়। এখানে দেশীয় প্রজাতির প্রায় ৩৫ রকমের পাখি দেখা মিলছে। আর এসব পাখিদের বিচরণও যেন দিন দিন বেড়েই চলছে।
পাখিকে ভালবেসে পাখি রক্ষা ও দেখাশুনা করেন সব বয়সী মানুষ। এরই মধ্যে গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে পাখি গ্রাম হিসেবে। এসব পাখি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই এই গ্রামে আসছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শণার্থীরাও।
প্রথম প্রথম অনেকেই অনেক দূর থেকে পাখি শিকার করতে আসলেও সচেতন কিছূ মানুষের বাধার মুখে তাতে ব্যর্থ হন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে গড়ে তোলা হয় জনমত। পরে পুরো গ্রামের লোকজন পাখি নিধন বন্ধ করতে ব্যানার, সাইনবোর্ড, লিফলেট দিয়ে সতরর্কীকরন করাসহ থানা পুলিশের সহায়তা নেন। ঘোষনা করা হয় পাখিদের অভয়াশ্রম।
এদিকে পাখির সার্বিক নিরাপত্তা ও বংশ বিস্তারে স্থানীয় যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত ইয়ুথ সোসাইটি ফর এনভায়রমেন্ট এন্ড ডেভলপমেন্ট নামের পরিবেশবাদী একটি সংগঠন কাজ করছে। এই সংগঠনের উদ্যোক্তা হচ্ছেন জুয়েল রানা নামে এক যুবক।
সমসখলসী গ্রামের পাখি প্রেমী জুয়েল রানা ও প্রাক্তন শিক্ষক বিরল কুমার জানান, প্রতি বছর পাখিরা শীতের সময়ে দল বেঁধে আসে। কোথাও থেকে তারা আসে কেউ জানে না। বিলের শামুক আর মাছ তাদের প্রধান খাবার। তবে বিল শুকিয়ে গেলে পাখিরা খাবার সন্ধানে চলে যায় অন্য গন্তব্যে। পাখির বিষ্ঠা নিয়ে কিছুটা বিপত্তি ঘটলেও এখন পাখি আর মানুষের মিতালী সুচিত হয়েছে। গ্রামের সবাই পাখিকে পরম ভালবাসা দিয়ে আগলিয়ে রেখেছেন । অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় পাখির জন্যে খাবার রাখেন।
পাখি দেখতে আসা যশোরের মেহেদী হাসান বলেন, পাখি দেখে আমি মুগ্ধ এবং পাখিদের শৃংখলাবোধ দেখে খুবই অভিভুত হয়েছি। কানাডা প্রবাসী এই গ্রামের সন্তান মুহাম্মদ বজলুশ শহীদ বলেন, সরকারি উদ্যোগে গ্রামের খাস জমিগুলোতে পাখিদের উপযোগী বনায়ন করা হলে অভয়াশ্রম বাঁচবে এবং এলাকার মানুষও উৎসাহী ও উপকৃত হবেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার আমিরুল ইসলাম জানান, পাখিরা শুধু পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ কৃষির বিরাট উপকার করছে। ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় দমনে পাখিরা কাজ করার পাশাপাশি পাখির বিষ্ঠা জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, এসব পাখি রক্ষায় রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ এই গ্রামের মানুষকে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জাহান জানান, সমসখলসী গ্রামের পাখি সংরক্ষণ ও রক্ষাণাবেক্ষণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি রাখা হচ্ছে। পাখি পরিচিতি ও পাখি প্রেমীদের উদ্বুদ্ধ করতে খুব শীঘ্রই দুই দিনের পাখি মেলা ও প্রদর্শণীর আয়োজন করা হবে।

সূত্র: বাসস

Print Friendly, PDF & Email