May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ব্যাংক ঋণে কৃষকের কাঁধে চড়া সুদের বোঝা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : গত বছর তফসিলি ব্যাংকগুলো প্রায় ৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার কৃষি ঋণ দিয়েছে। তবে এই ঋণের বেশিরভাগই বিতরণ করা হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাধ্যমে।
ফলশ্রুতিতে কৃষকের যেখানে ১০ শতাংশের কম সুদে এই ঋণ পাওয়ার কথা সেখানে তাদের সুদ গুণতে হচ্ছে ২৫ শতাংশের ওপরে।
বাংলাদেশে ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে মোট ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বণ্টনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকগুলো এনজিও’র মাধ্যমেই বণ্টন করেছে ৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার এনজিও’র মাধ্যমে কৃষি ঋণ না দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিলেও সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
২০১৫ সালে ব্যাংকগুলো এনজিও’র মাধ্যমে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করে। আর তার আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগেও তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় তাদের লক্ষ্যমাত্রার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় এখনও কোনো কোনো ব্যাংক তাদের লক্ষ্যমাত্রার পুরোটাই এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করছে। ফলে অনেক কৃষককেই স্বাভাবিকের তুলনায় দুই গুণেরও বেশি সুদ গুণতে হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো থেকে এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণের প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ শতাংশ হারে ঋণের নেয় কিন্তু কৃষক পর্যায়ে তারা ২৫ শতাংশ সুদে এই ঋণ বিতরণ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, গত তিন বছরে ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণের প্রবণতা দেখে এটা স্পষ্টতই বলা যায় যে, ব্যাংকগুলো আসলে নিজেদের পরিবর্তে এনজিও’র মাধ্যমেই কৃষি ঋণ বিতরণে আগ্রহী।
তিনি বলেন, এনজিও’র মাধ্যমে ঋণ দেওয়া ব্যাংগুলোর বেশিরভাগই বিদেশি ও বেসরকারি মালিকানার ব্যাংক।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও কিছু দিন আগে কৃষি ঋণের সুদহার ১০ শতাংশের নিচে রাখার ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানান।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক এনজিও এবং ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৃষি ঋণে সুদ হার কমানোর নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়।
ওই কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে এনজিওর মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে; যা হতাশার।
তিনি বলেন, কৃষক ঋণ নেয় ফসল উৎপাদনে সহায়তা পাওয়ার আশায়। কিন্তু তাদের যদি ২৫ শতাংশের ওপরে সুদ গুণতে হয় তবে সে চাপ তাদের জন্য অনেক বেশি হয়ে যায়। ঋণ নিয়ে ভালো করার বদলে আরও ঋণের জালে জড়াতে হয় তাদের।

Print Friendly, PDF & Email