May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

আজ সেই ভয়ার্ত ২১ আগস্ট

ডেস্ক:  আজ সেই ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে দেশের স্বাধীনতার কাণ্ডারি দলটির ওপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়। বিএনপি-জামায়াত সরকার শাসনামলে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার আজ ১২তম বার্ষিকী।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে হচ্ছিল আওয়ামী লীগের জনসভা। প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা ভাষণ শেষ করে ‘জয় বাংলা’ বলতে না বলতেই চারদিক প্রকম্পিত হয় বিকট আওয়াজে। মঞ্চের খুব পাশে বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেডগুলো।এরপর চারদিকে রক্ত আর আহাজারি।ভাগ্যক্রমেই বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তদানীন্তন ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে আগলে রাখেন।এরপর দ্রুত তাকে একটি গাড়িতে ওঠানো হয়। কিন্তু, আহতদের ওই অবস্থায় রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি যেতে চাননি।নেতা-কর্মীদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে যাচ্ছো, ওদের কী হবে?’ সেদিনের সেই দুঃসহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলায় আহত এবং মৃত্যুর মুখে পড়েও বারবার আহত-নিহতদের কাছে ছুটে যেতে চাচ্ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার জীবনরক্ষায় তাই একপ্রকার জোর করেই গাড়িতে তুলে সুধা সদনে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। তখনও তিনি বলছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে যাচ্ছো, ওদের কী হবে!’

আহতদের রেখে তিনি তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়তে চাননি।পরে যখন তিনি সিঙ্গাপুরে গেলেন সেখানেও তার চিকিৎসা সঠিকভাবে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরে চিকিৎসা মোটামুটি হলো।

চিকিৎসক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পর সেখানে তাকে হিয়ারিং এইড পরানো হয়। হিয়ারিং নিয়ে তিনি বর্তমানে মোটামুটি ভালো আছেন।

এদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিকিৎসক অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত সাক্ষ্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে তাঁর ডান কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুদিন পর ২৩ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার বাসায় তাঁকে ডাকা হয়। বাসায় গিয়ে তিনি শেখ হাসিনার কান পরীক্ষা করে দেখতে পান, কানের ভেতর রক্ত জমাট বেধেঁছে, একই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে কানের ভেতরের পর্দাও। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি শেখ হাসিনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উন্নত দেশে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কানের অবস্থা এখন কেমন সে বিষয়ে জানার জন্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কানের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, ‘এখন অনেকদিন ধরেই যাওয়া হচ্ছে না। তার (শেখ হাসিনা) তো কানে ও চোখে বেশ গুরুতর সমস্যা ছিল। তবে দেশের বাইরে চিকিৎসা করায় তিনি এখন অনেক ভালো আছেন।এখন আমাদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরাও তাকে দেখছেন। তবে বেশি দেখেন ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।’

এই হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত এবং অপর ৫০০ জন আহত হয়েছে। শেখ হাসিনা ওই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।

সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২১ আগস্টের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুইটি মামলায় ২০০৮ সালের ১১ জুলাই প্রথম চার্জশিট দাখিল করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং ২১ জন হুজি নেতাকর্মীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।

অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম সাবেক মন্ত্রী এবং জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে এবং ৮ জন জামিনে রয়েছে ও অন্যরা বর্তমানে বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছে।

অপর ১৯ জন আসামি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

পলাতক ১৯ আসামি হলো- তারেক রহমান লন্ডনে, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোর্সালীন এবং তার ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন ভারতের কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে।

জঙ্গিনেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (পূর্ব) এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান এবং খান সাঈদ হাসান বিদেশে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে।

তবে অপর অভিযুক্ত পলাতক হারিস চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি। পলাতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু এরা দুইজন কারাবন্দি বিএনপি সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। পিন্টুও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত।

অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে বিএনপি’র সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান বর্তমানে জেলে রয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান এবং আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছেন।

সূত্র :  বাসস

 

Print Friendly, PDF & Email