May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর দায়িত্ব পালনের নির্দেশ: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও সতর্কতার সঙ্গে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সরকারি সেবা গ্রহণে মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
সম্মেলনে অংশ নেয়া ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও ৮ বিভাগীয় কমিশনারকে ১৯ দফা কাজের দিক-নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
একইসঙ্গে তিনি জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ জেলা এলাকায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি গড়ে তুলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘একদম তৃণমূল থেকে কমিটি গড়ে তুলে যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রসাশন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। সূচনা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মেজবাহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক রাজবাড়ি বেগম জিনাত আরা, জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ শেখ রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমদ।
জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ১৯টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে পরিত্রাণের জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্রতী হতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব প্রদানের তিনি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার হ্রাস এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাকে জনপ্রিয় করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলী, ২০১০ অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে।
শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘেœ করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যে কোন অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইতিহাস চেতনা, জ্ঞানস্পৃহা ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, নারী উন্নয়ন নীতি, ২০১১ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচাররোধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশানকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, কঠোরভাবে মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালান এবং এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।

সূত্র: বাসস

Print Friendly, PDF & Email