May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

কলেজ বন্ধ রেখে অধ্যক্ষের মেয়ের জন্মদিন!

ডেস্ক : নিজের সন্তানের জন্মদিন পালন করতে একজন পিতা অদ্ভুত অদ্ভুত সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই পারেন। তবে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে যা করেছেন তাঁকে অভাবনীয় কাণ্ড বললে বোধহয় ভুল হবে না।

নিজের মেয়ের জন্মদিন পালন করতে কলেজ সংলগ্ন চতরা মাল্টিমিডিয়া ক্যাডেট স্কুল বন্ধ রেখেছেন অধ্যক্ষ আব্দুর রব প্রধান। শুধু তাই নয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে পিকনিকে নিয়ে গিয়েছেন তিনি।

এ নিয়ে এখন সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বন্ধ রেখে ছাত্রছাত্রীদের কাছে চাঁদা নিয়ে মেয়ের জন্মদিন পালন করেছেন আব্দুর রব।

জানা গেছে, গত বুধবার চতরা মাল্টিমিডিয়া ক্যাডেট স্কুল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে ‘বড়বিল’ নামক স্থানে পিকনিকে নিয়ে যান আব্দুর রব। সেখানে মেয়ে রাবিতা প্রধানের জন্মদিন উপলক্ষে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিলের পানিতে নামা, গাছে ওঠার মতো বিভিন্ন আয়োজন ছিল। সেসব ছবি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও করেন তিনি।
মূলত এসব দেখার পরই শুরু হয় সমালোচনা। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক  নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার ছেলের জ্বর ছিল তবুও তাকে পানিতে নামিয়ে গোসল করানো হয়।’

ক্লাস বাদ দিয়ে অধ্যক্ষের মেয়ের জন্মদিন পালন উৎসব দেখে অবাক হয়েছেন স্থানীয়রাও। তবে তাঁরা এটাও বলছেন, কিছুদিন পর পরই বিভিন্ন ছলে উৎসব পালন করা এই প্রতিষ্ঠানের রীতি হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজের প্রাক্তন এক ছাত্র বলেন, ‘বার মাসে তের পার্বনের নাম শুনলেও এখানে হয় শত পার্বণ। নামে-বেনামে উৎসব লেগেই থাকে। কেউ পালন করতে না চাইলে তাঁর ওপর নেমে আসে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার খড়গ। এ জায়গায় স্যার (অধ্যক্ষ) যা বলবেন সেটাই আইন, অন্য শিক্ষকরা অসহায়। ছাত্ররা তাই নীরবে মুখ বুজে সব মেনে নেয়।’

তবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আব্দুর রব প্রধান এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এক ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘স্থানীয় সমালোচকদের উদ্দেশে বলছি, গতকাল আমার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সাত কিলোমিটার দূরে কাঠাগড়ে যাওয়া আসা, খাওয়া-দাওয়া, পুরস্কারসহ কোনো বিষয়ে এক পয়সা চাঁদা এমনকি কোনো গিফ্ট নেইনি মাল্টির (মাল্টিমিডিয়া ক্যাডেট স্কুল) বাচ্চাদের কাছ থেকে। আগের ভ্রমণও আমার খরচে করিয়েছি…অভিভাবকদের কাছে জেনে নিন। অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীর কথা নাই, অন্য মানুষের চুলকানি ধরে গেছে।’

তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে আব্দুর রব প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভুলকানি (পিকনিক) করতে নিয়ে গিয়েছিলাম এর বেশি কিছু নয়।’

নিজের মেয়ের জন্মদিন পালনের বিষয়টি প্রথমে বলতে না চাইলেও পরে স্বীকার করেন অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ ওই প্রোগ্রামের সাথে মেয়ের জন্মদিনও ছিল তাতে অন্যায় তো কিছু করি নাই।’

এভাবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অধ্যক্ষ তাঁর মেয়ের জন্মদিন পালন করতে পারেন কি না, জানতে চাইলে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘উনি তাঁর ব্যক্তিগত কাজকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করে অন্যায় করেছেন। মেয়ের জন্মদিন পালন করবেন ভালো কথা, কিন্ত সেটা এভাবে কেন?’

স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে তা তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান ইউএনও।

রংপুর জেলা শিক্ষা (মাধ্যমিক) কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, প্রতিষ্ঠান চলাকালীন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এভাবে অধ্যক্ষ তাঁর মেয়ের জন্মদিন আয়োজন করতে পারেন না। এমন কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে অভিভাবক আর ম্যানেজিং কমিটির লোকজনদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কারণ অভিভাবক বা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অভিযোগ না করলে জেলা শহরে বসে এসব বিষয়ে জানা সম্ভব হয় না বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email