April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

‘ক্রসফায়ারে’ র‌্যাবকে ছাড়িয়েছে পুলিশ

বিশেষ প্রতিনিধি : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ কথিত “ক্রসফায়ার” বা বন্দুক যুদ্ধে বিশেষায়িত বাহিনী র‌্যাবের তুলনায় নিয়মিত বাহিনী পুলিশের বিরুদ্ধেই সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে বেশি। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এর এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
সংগঠনটি বলছে, চলতি ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে ‘ক্রসফায়ারে’ ৬২ জন মারা গেছেন, এর মধ্যে ৩৭ জনের মৃত্যুতে পুলিশ জড়িত। প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে আসক জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ি, ৩৭ জনের মধ্যে ৩০ জন থানা পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন, ডিবি পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন ৭ জন। র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ ২৪ জন এবং বিজিবির ‘ক্রসফায়ারে’ ১ জন নিহত হয়েছেন বলে আসকের পরিসংখ্যানে বলা হয়। এই সময়ে পুলিশের ‘নির্যাতনে’ ৫ জন, ডিবি পুলিশের ‘নির্যাতনে’ ১ জন, পুলিশের গুলিতে ৫ জন, বিজিবির গুলিতে ১ জন মারা যান বলে আসক জানায়। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তাদের এই প্রতিবেদনে থানা হাজতে ‘অসুস্থ’ হয়ে ৪ জন এবং ‘রহস্যজনকভাবে’ ১ জনের মৃত্যুর তথ্যও স্থান পায়।
২০০৪ সালে র‌্যাব গঠনের পর পুলিশের এই বিশেষ বাহিনীর অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বা ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনাগুলো নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার।
বিচার-বহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যে কয়েকজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পুলিশের পক্ষে অবস্থান নিলেও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন কয়েকদিন আগেই সংসদে দাঁড়িয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধের সমালোচনা করেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, “আজকে প্রতিদিনই দেখছি ক্রসফায়ারে জঙ্গি নিহত হচ্ছে। ক্রসফায়ার এই সমস্যার সমাধান নয়। বরঞ্চ তার মধ্য দিয়ে আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা-ব্যর্থতা দেখছি।”
পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘জঙ্গি’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহল থেকে পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘জঙ্গি’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহল থেকে
আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ে সাদা পোশাকে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫০ জনকে তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয়জনের লাশ পরে পাওয়া যায়, দুজন ফেরত এসেছে, চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাকিদের কোনো খবর মেলেনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার মোট ৬৯৩ ঘটনায় ১৪২ জন নিহত এবং ৯ হাজার ৮৫ জন আহত হন। এর বাইরে রাজনৈতিক সহিংসতার মোট ১১৮টি ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং এক হাজার ২০৫ জন আহত হন।
ছয় মাসে কারা হেফাজতে ৪২জন মারা যাওয়ার তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, এর মধ্যে ১৪জন কয়েদি এবং ২৮ জন হাজতি।
আসকের হিসাব অনুযায়ী, ছয় মাসে সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১২ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৮ জন, যাদের মধ্যে ১৭ জন ফেরত এসেছে বিজিবির মধ্যস্থতায়।
আসকের প্রতিবেদনে শিশু নির্যাতন ও হত্যা, রাজনৈতিক সংঘাত, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক হয়রানি, সীমান্ত সংঘাত, কারা হেফাজতে মৃত্যু, ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ের সংখ্যাগত হিসাবও দেওয়া হয়েছে।
এই সময়ে ৫৯১টি শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে ২৩৫জন শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এবং ১৫জন আত্মহত্যা করেছে।
গত ছয় মাসে ৭৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে আসকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email