April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

‘ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। দশম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে রবিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। আমাদের সামাজিক সূচক, জিডিবি, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে আমরা বুঝতে পারব দেশ কতটা এগিয়েছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এখন কৃষক আত্মহত্যা করে কিন্তু আমাদের দেশে কেউ না খেয়ে নেই। কৃষক আত্মহত্যা করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধান রক্ষা করতে ২০১৪ সালের নির্বাচন করেছিলাম। এ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য মাইল ফলক হয়ে থাকবে। আগে মানুষ মনে করত কোন দল অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা ছিল ভুল। কারণ দেশের সংবিধান কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকে মনে করেছিল এ নির্বাচন অনেকে মেনে নেবে না। জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সবাই মেনে নিয়েছে।’
খালেদা এই যুগের ঘষেটি বেগম
নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘খালেদা জিয়া এই যুগের ঘষেটি বেগম। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ-নেজামে ইসলামের খুনী, ১৯৭২ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত ছাত্রকে গুলি করে হত্যায় নেতৃত্বদানরকারী শফিউল আলম প্রধান ও ১৯৭৫’র খুনীরা আজ একত্রিত হয়েছে। আর তাদের নেত্রী হয়েছে খালেদা জিয়া। সুতরাং খালেদা জিয়া এই যুগের ঘষেটি বেগম।’
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ আজ বিশ্বের কাছে এক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করে প্রশাসনের কঠোর মনোভাব এবং সরকারের জিরো টলারেন্সের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করে চলেছে তা বিশ্বের কাছে সমাদৃত হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নির্বাচনের পর গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস করেও সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে খালেদা জিয়া। পরে বিদেশিদের হত্যা করে সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তাও পারেনি। এখন তারা বলছে নির্বাচন দিলে নাকি গুপ্তহত্যা বন্ধ হবে। যদি হত্যাকারীদের সাথে তাদের আতাত না থাকে তাহলে একথা তারা কিভাবে বলছে। খালেদা জিয়া ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জামায়াত ইসলামকে নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রীকে দ্রুত বিল আনার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঈদ বোনাসের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের আকুতি বিশেষ ভাতা চালু করার। আর কয়েকদিন বাদেই ঈদ। সকলেই ঈদ বোনাস পাবে। আর আমার মুক্তিযোদ্ধারা পাবেন না। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের মনের আকুতি- তাদের জন্য দুই ঈদে, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এবং বৈশাখী ভাতা চালু করা হোক।’
মন্ত্রী জানান, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। অচিরেই তা অনলাইনে দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৮ ধরনের আইডি কার্ড দেওয়া হবে। দেশের টাকা জাল হতে পারে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কার্ড জালিয়াতি হবে না। দেশের সকল হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হবে।’
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিদেশি সাহায্য নির্ভর বাংলাদেশ মাত্র ৪৬ বছরেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। সকল সূচকে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার হরতাল-নাশকতা দক্ষভাবে মোকাবেলার কারণেই এখন ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ অনেক বাড়ছে। যদি নাশকতা না থাকে বিনিয়োগ আরও বাড়বে, সপ্তম বার্ষিক পরিকল্পনার ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা আছে সেটাও অর্জন হবে।’
খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে খালেদা জিয়া নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। ইফতারের সময় উনি বলছেন প্রধানমন্ত্রী নাকি দেশ বিক্রি করে দিচ্ছেন! জামায়াত-স্বাধীনতাবিরোধীদের পাশে নিয়ে তার এমন উক্তি সত্যিই হাস্যকর। মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবেন না।’
ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘সারাবিশ্ব আজ বাংলাদেশকে বলে উন্নয়নের বিস্ময়, শেখ হাসিনাকে বলে উন্নয়নের ‘কাটার মাস্টার’। জঘণ্য এক জিঘাংসা নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল পরাজিত শত্রুরা দেশকে অকার্যকর করতে টার্গেট কিলিং করছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জঘন্য ও হীন ষড়যন্ত্র করছে। এদের ঘৃণা জানানোর ভাষাও আমাদের জানা নেই।’
মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘বছরে ১২ বার নাকে খত দিলেও খালেদা জিয়াদের মিথ্যাচার থামে না। এরা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার পর এখন গুপ্তহত্যা এবং বঙ্গন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে পর্যন্ত অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। বিএনপি-জামায়াত অতীতের ভুল থেকে কোনই শিক্ষা নেয়নি। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার স্বপ্নে বিভর রয়েছে।’
বাজেট আলোচনায় আরো অংশ নেন বি এম মোজাম্মেল হক, মো: গোরাম রব্বানী, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, মো; নূরুল ইসলাম ওমর, স্বপন ভট্টাচার্য্য, আনোয়ারুল আবেদীন খান প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email