April 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ইতিহাসের সবচেয়ে ‘মন্দ’ এবারের ইউপি নির্বাচন: সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাপক সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি অনিয়মের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সবচেয়ে ‘মন্দ’ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬: রক্তক্ষয়ের রেকর্ড’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতারা এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষ এবং নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধের জেরে ১০১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহতের সংখ্যা অন্তত আট হাজার ছাড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ ও প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম এবং সুজন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে এখনও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬। আগামী ২৮ মে ও ৪ জুন যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের ভোটপর্বের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি অনিয়ম ও নেতিবাচক অনুষঙ্গের দৃশ্যমানতার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে মন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
নির্বাচনি সহিংসতায় প্রাণহানি সম্পর্কে তিনি বলেন, অতীতের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোর প্রাণহানির তথ্য অনুসন্ধান করে দেখা যায়- ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩ ও ১৯৯২ এ প্রাণহানির কোনও ঘটনা ঘটেনি। ১৯৮৮ সালে ৮০ জন, ১৯৯৭ সালে ৩১ জন, ২০০৩ সালে ২৩ জন এবং ২০১১ সালে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অতীতের নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৮৮ সালে। সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনের তকমাও জুটেছিল ওই নির্বাচনের নামের পাশে।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নিহত মোট ১০১ জনের মধ্যে চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা বিরোধেই প্রাণ গেছে ৬৩ জনের। পাশাপাশি এই নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে কখনই নির্বাচন কমিশনকে আমরা কঠোর অবস্থানে দেখিনি। এটাও সহিংসতা বৃদ্ধির বড় কারণ।
তিনি আরও জানান, বিভাগভিত্তিক প্রাণহানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দলগত পরিচয়ের দিক থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী বা সমর্থক ৪০ জন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ১২ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১ জন, জনসংহতি সমিতির ১ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ২ জন, মেম্বার প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ৩১ জন এবং ১২ জন সাধারণ মানুষ রয়েছেন প্রাণহানির তালিকায়। নিহতদের মধ্যে ৪ জন নারী ও ৩ জন শিশুসহ একজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৩ জন মেম্বার প্রার্থীও রয়েছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ৪২টি সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ পর্যন্ত নিহত ১০১ জনের মধ্যে নির্বাচনপূর্ব সংঘর্ষে ৪৫ জন, নির্বাচনকালীন সংঘর্ষে ৩৬ জন এবং নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, চলমান ইউপি নির্বাচন গণতান্ত্রিকও নয় বরং এক দুঃস্বপ্ন। নির্বাচনে অনিয়ম, মনোনয়ন বাণিজ্য, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনায় এই নির্বাচন যেন সবার কাছে গা সওয়া হয়ে গেছে। তার মানে এগুলো এখন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়।

Print Friendly, PDF & Email