May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জনতা-প্রিমিয়ারসহ ৬ ব্যাংক প্রভিশন পূরণে ব্যর্থ

অর্থনীতিক প্রতিবেদকঃ বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ৬ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ প্রান্তিক থেকে এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে জনতা ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। বাকিগুলোর মধ্যে আগের প্রান্তিকের তুলনায় ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কমলেও বেড়েছে বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংকের। সংশ্লিষ্টদের দাবি, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণেই প্রয়োজনীয় প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ছে; ফলে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চের শেষে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিকভাবে প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমেছে। আলোচ্য সময়ে ৩৩ হাজার ৬১৫ কোটি ৬৭ হাজার কোটি টাকা প্রভিশনের বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।
এতে আরও দেখা গেছে, মার্চ মাস শেষে ৩টি সরকারি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ৫৭১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ তালিকায় থাকা ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ২৩০ কোটি ৬৬ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি ছিল।
৩টি বেসরকারি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ তালিকার ব্যাংকগুলোর মধ্যে কমার্স ব্যাংকের ২৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এই ৩টি ব্যাংকের মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কমার্স ব্যাংকের ২২৩ কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৫৫ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি ছিল।
প্রসঙ্গত, বিতরণকৃত ঋণের ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক কোম্পনি আইন অনুযায়ী, প্রভিশনে ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এছাড়া টানা দুই বছর ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বড় অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের বিধানও রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রভিশন ঘাটতি পূরণের সুযোগ পেতে পারে।
প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার ফজলে রশিদ বলেন, বিভিন্ন কারণে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়, এর মধ্যে একটি খেলাপি ঋণ। খেলাপি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণও বাড়াতে হয়। এটা সবসময় সম্ভব হয় না।
তিনি জানান, প্রভিশন ঘাটতি পূরণে প্রিমিয়ার ব্যাংককে তিন বছরের সময়সীমা বেধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছর থেকে এ সময় কার্যকর হবে।
প্রভিশন ঘাটির প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৫৯ হাজার ৪৪১ কোটি টাকায় ঠেকেছে, যা মোট অনাদায়ী ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

Print Friendly, PDF & Email