April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

হার দিয়ে মূল পর্ব শুরু টাইগারদের

ডেস্ক প্রতিবেদন : ২০২ রান তাড়া করে জয়ের চিন্তা করাও আকাশচুম্বি স্বপ্ন। ইডেনে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের দেওয়া ২০২ রানের টার্গেটে ৬ উইকেটে ১৪৬ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। ৫৫ রানের পরাজয়ে হার দিয়ে বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে যাত্রা শুরু মাশরাফির দলের। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে আসলেও ‘আসল’ বিশ্বকাপের যাত্রাটা পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দিয়ে শুরু করতে হল বাংলাদেশের।

১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আজই প্রথম ইডেন গার্ডেনে পা পড়ে টিম বাংলাদেশের। আড়াই দশক পর ঐতিহ্যবাহী ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশের খেলা বলে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে ষোলকোটি বাংলাদেশিদের মনে। ম্যাচের শুরু থেকেই ইডেন ছিল বাংলাদেশের সমর্থকদের দখলে। দিন যত বেড়েছে দর্শক সমাগম ততই বেড়েছে, ততই বেড়েছে বাংলাদেশের সমর্থক। কিন্তু শুরুতে ফিল্ডিংয়ে নেমে উৎসবের মঞ্চে কিছুটা ভাঁটা পরে। পাকিস্তানের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে টার্গেট হিসেবে পাহাড় সমান রান পায় বাংলাদেশ।

 টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শহীদ আফ্রিদির দল ৫ উইকেটে ২০১ রান করে। যা টি-টোয়েন্টিতে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান। টানা ষষ্ঠ টস হারের খেসারত এভাবে মাশরাফিকে দিতে হবে তা কল্পনাও করেননি মাশরাফি!

তাসকিনের করা প্রথম ওভারটা ঠিক-ঠাক থাকলেও দ্বিতীয় ওভার থেকে পুরো আগ্রাসী শারজিল খান। আল-আমিনের করা দ্বিতীয় ওভারে বাহাতি ওপেনার একাই তুলে নেন ১৬ রান। ওই ওভারে আগে মোট ১৮ রান। তবে পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে সাফল্য দেন আরাফাত সানী। বোলিং অ্যাকশনের সন্দেহে পড়া সানী পরীক্ষা দিয়ে নিজের প্রথম ওভারে এসেই শারজীল খানকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান।

এরপর আর থামানো যায়নি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। মিস্টার প্রফেসর খ্যাত মোহাম্মদ হাফিজ নিজের দ্বিতীয় বলে ডাউন দ্যা উইকেট এসে লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকান। হাত খুলে হাফিজ যেই স্ট্রাইক নেওয়া শুরু করেন সেটা থামান সেই আরাফাত সানী। তবে কাজটা করেন বড্ড দেরীতে! উড়ন্ত পাখির মত মিডউইকেটে সৌম্য যখন হাফিজের ক্যাচটি ধরেন তখন তার নামের পাশে ৪২ বলে ৬৪। ১৫২.৩৮ স্ট্রাইক রেটে হাফিজ যে ইনিংসটি খেলেন সেখানে ছিল ৭টি চার ও ২টি ছক্কার মার।

হাফিজের সঙ্গে ছিলেন ওপেনার আহমেদ শেহজাদ। ৩৯ বলে ৮ বাউন্ডারিতে করেন ৫২ রান। দুজন দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ৯৫ রান। বল খরচ করেন ৬৮। এশিয়া কাপে শেহজাদকে দলে জায়গা না দিয়ে বেশ সমালোচিত হয়েছিল পিসিবি। বিশ্বকাপে তাকে ফিরিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস অন্তত নিতে পারছে তারা। এ জুটি ভাঙার পর শহীদ আফ্রিদি তিন ধাপ এগিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন।

কেন তার এ সিদ্ধান্ত তা স্কোরবোর্ড দেখলেই বোঝা যায়। মাত্র ১৯ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় বুমবুম আফ্রিদি করেন ৪৯ রান। ১ রানের জন্যে পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি মিস করেন তাসকিনের বলে।শোয়েব মালিকও শেষ দিকে ৯ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা রান পাওয়ায় দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০১ রান করতে কোনো সমস্যাই হয়নি ২০০৯ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।

বাংলাদেশ যে খুব ভালো বোলিং করেছে তা নয়। শর্ট বল, ফুলটস দিয়েছেন নিয়মিত। ফুললেন্থ বলগুলো যেগুলো করেছে সেগুলো ব্যাটম্যানরা সহজেই বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে ভালো করে আসা আল-আমিনকে আজ খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। ৩ ওভারে ১৪.৩৩ গড়ে রান দিয়েছেন ৪৩। অধিনায়ক মাশরাফিও ৩ ওভারে দিয়েছেন ৪১ রান। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ৩২ ম্যাচ খেলার সুবাদে ইডেনে খেলা হয়েছে সাকিব আল হাসানের। কেকেআরের ৩৮ উইকেট নিলেও জাতীয় দলের জার্সিতে আজ সাকিব ছিলেন উইকেটশূণ্য। ৪ ওভারে ৩৯ রান ব্যয় করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব।

জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে আমিরের বল বুঝে উঠার আগেই আউট সৌম্য সরকার। তিনে নামা সাব্বির তামিমকে সঙ্গে নিয়ে ৪৩ রানের জুটি গড়েন। আফ্রিদির করা প্রথম ওভারে এক ছয় ও এক চার মেরে তামিম-সাব্বির ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু বুমবুম আফ্রিদির দিনে তাকে ঠেকায় কে? সাব্বিরকে ২৫ রানে বোল্ড করে উইকেটের খাতা খুলেন আফ্রিদি। পরে নেন আরও ১ উইকেট উইকেট। সেটাও আগের ম্যাচে সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া তামিম ইকবালের। দেশসেরা এ ওপেনারের ইনিংসটি থামে ২৪ রানে। এরপর আর পেরে উঠেনি বাংলাদেশ। সাকিব ৪০ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থেকে দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন মাত্র। ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পথে আরেকটি রেকর্ডও গড়েছেন সাকিব। ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে একহাজার রান ও ৫০টি উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন সাকিব।

Print Friendly, PDF & Email