April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়: সিপিডি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বিশ্ব অর্থনৈতিক সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতি হলেও সরকারের অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি ও সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা সংকোচনে উদ্যোগক্তাদের উদ্বিগ্নতা ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস ২০১৫-২০১৬’শীর্ষক প্রতিবেদন এবং নিজেদের একটি তড়িৎ জরিপ প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

প্রতিবেদন দুটি উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী অতিরিক্তি গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডির অতিরিক্তি গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ ১০৯তম অবস্থান থেকে ১০৭তম অবস্থানে এসেছে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতা কমেছে। এর কারণ উচ্চ সুদ ও ঋণ প্রাপ্তির কঠোরতা।

প্রসঙ্গত, ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০৭। আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়েছে দুই ধাপ। ২০১৪ সালে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৯তম।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের জরিপ করে আমরা পর্যলোচনা করেছি। ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। চীন ও ভিয়েতনামসহ উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো যদি তাদের কাক্ষ্মিত প্রবৃদ্ধি অর্জন না করতে পারে তবে বাংলাদেশে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে।”

ড. মোয়াজ্জেম বলেন, “সূচকে অবকাঠামো, সামাজিক ও সুশাসনসহ কিছু জায়গায় উন্নতি হয়েছে। তবে শিক্ষাসহ আরও কিছু মৌলিক জায়গায় অবনমন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মৌল ভিত্তির পাশাপাশি উৎকর্ষগত উন্নতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “মূলত অবকাঠামো, দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার জন্য ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করেছে।”

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ছাড়াও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের (স্টেকহোল্ডার)কাছ থেকে প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে মতামত নিয়ে তৈরি করা সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুশাসনের অনেক অভাব রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৮ শতাংশ মনে করেন অকার্যকর সংসদ আইন প্রনয়নে ভূমিকা রাখতে পারছে না। গত বছর এ মতামত ছিল ৬৭ শতাংশের। গত বছরে জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ জানিয়েছিল সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা ভাল ছিল। এবারের জরিপে ৫৪ শতাংশ মনে করেন  সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার সংকুচিত হয়ে গেছে।

এছাড়া, আইনি কাঠামো ব্যবসায়িক মামলা সমাধানে যথেষ্ট নয় বলে ৮৪ শতাংশ জরিপকারী মত দিয়েছেন। গত বছর এ মত ছিল ৭৬ শতাংশের।

রাজনীতিবিদদের নৈতিকতা সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে নেমে এসেছে। ৯৬ শতাংশ জরিপে অংশ নেওয়া মানুষ মনে করছেন রাজনীতিবিদরা নীতিহীন। গতবছর এমন ধারনা ছিল ৯৪ শতাংশ মানুষের। তার আগের বছর ছিল ৮৭ শতাংশ মানুষের মত।

জরিপে দেখা যায়, মুদ্রা পাচারের কারণ হিসেবে ২২ শতাংশ ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ব্যবসার পরিবেশ না থাকা এবং ১২ দশমিক ০১ শতাংশ দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন।

অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ১৪৪টি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের ৫৬ জন ব্যবসায়ী এ-সংক্রান্ত জরিপে অংশ নেন। জরিপের জন্য ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায নেওয়া হয়। জরিপটি করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে বলা হয়, অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা হচ্ছে মূল সমস্যা। সরকারের অনিশ্চয়তা বিষয়ে উদ্বেগের হার বেড়েছ ১১ দশমিক ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি ব্যবসার চতুর্থ সমস্যা। এর হার গত বছর ছিল ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

এছাড়া, উচ্চ সুদ হার, অদক্ষ শ্রমশক্তি, সুশাসনের অভাব, অপরাধ ও চুরি, মুলাস্ফীতি এবং অপর্যাপ্ত স্বাস্থ সেবা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

জেনেভা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশের অবস্থানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে আশানুরূপ নয়। সূচকে আমাদের স্কোর বাড়লেও তুলনামূলকভাবে অবস্থান একই। আমরা এখনো হাঁটছি। কিন্তু নিম্ন মধ্যম থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে আমাদের এখন দৌড়াতে হবে। এ জন্য উদ্ভাবনী শক্তির ওপর ভিত্তি করে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকে নিয়মিত এই রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।

Print Friendly, PDF & Email