April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পবিত্র হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় তিনি (শেখ হাসিনা) এ জ্যেষ্ঠ নেতার প্রতি ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। এছাড়া সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর আইনি লড়াইকে ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে দেখছেন তিনি। আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার বার্তা পাওয়ার পরই রোববার সকালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানিতে গিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। শুনানিতে অংশ নিয়ে বের হয়ে এসে টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, আমার নেতা চান না এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করি। আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবো। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেলাম। এ নিয়ে আর শুনানি করার দরকার নেই।

এর আগে সদস্য পদ বাতিলের শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য রোববার সকালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যান আওয়ামী লীগের সাবেক এই মন্ত্রী ও তার আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ূয়া। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যান দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওসার।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি ধর্মভিক্তিক দল সব সময় আওয়ামী লীগকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ছড়ায় এই দলগুলো। আর ধর্ম নিয়ে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্য তাদেরকে উস্কে দেয়। এ জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব আবদুল লতিফের উপর নাখোশ।

ইসির শুনানি থেকে বেরিয়ে এসে লতিফ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আমার ঈমানে এতটুকু দুর্বলতা নাই। যা প্রচার হয়েছে, তা মিথ্যা প্রচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলেও ‘নেতার প্রতি’ (শেখ হাসিনা) এখনও ‘অনুগত’ বলেও মন্তব্য করেন লতিফ।

এর আগে সকালে ইসির এই শুনানির এখতিয়ার নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর দায়ের করা রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে তার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে শুনানিতে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার রায়ই চূড়ান্ত হয়। এরপর পূর্ব নির্ধারিত শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য ইসিতে যান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও আইন শাখার যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সম্মলন কক্ষে বেলা ১১টায় শুনানি শুরু হয়। লতিফ পদত্যাগ করবেন জানিয়ে দিলে ১৫ মিনিটেই শুনানি শেষ হয়ে যায়।

গত ১৩ জুলাই লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের জন্য জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গঠনতন্ত্র অনুসারে লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদও নেই, সেহেতু এই দলের মনোনয়নে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য পদেও তাকে বহাল রাখা সমীচীন হবে না।

এরপর লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে চিঠি দেন স্পিকার। ওই চিঠির সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের চিঠিটিও যুক্ত করেন স্পিকার। চিঠিটি পাওয়ার পর ইসি আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীর কাছে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চায়। দুই পক্ষই পরে ব্যাখ্যা দেয়।

গত বছর পবিত্র হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় দলীয় সদস্য পদ ও মন্ত্রিত্ব হারানোর পর এবার সংসদ সদস্য পদও হারাতে বসেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

Print Friendly, PDF & Email