সুমন্ত আসলাম : মাথার পেছনে দুটো বেণি দুলিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল মেয়েটি, বয়স সাত-আট। মায়ের হাতে বাম হাত, ডান হাতে একটা পানির পট। ব্যাগটা মায়ের কাঁধে। পূরবী সিনেমা হলের সামনের রাস্তা পার হয়ে ডিভাইডারের সামনে এসে দাঁড়ালেন তারা। ওপাশে যেতেই থমকে দাঁড়ালেন।
ময়লাবোঝাই উন্মুক্ত বিশাল একটা ট্রাক যাচ্ছে সামনে দিয়ে। দুর্গন্ধ। মায়ের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিজের নাকে নিতে যাচ্ছিল মেয়েটা। পারল না। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিল মাটি খুবলে যাওয়া ডিভাইডার থেকে। তার আগে পাশে দাঁড়ানো অফিসগামী এক ভদ্রলোক খামচে ধরলেন তাকে। একটা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল সে। হঠাত ছলছলিয়ে উঠল তার চোখ দুটো, বেঁচে থাকার আনন্দে, মায়ের হাতটা আবার ধরতে পারার আনন্দে।
প্রিয় পাঠক, বিশ্বে বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় আবারও দ্বিতীয় হওয়া ঢাকায় আপনাকে আমন্ত্রণ। এখানে এলে আপনি যা যা দেখতে পাবেন—
পিচঢালা রাস্তা এখন ফসিল, কঙ্কাল হয়ে গেছে সব ইট-সুরকি। প্রতি বছর রাস্তা মেরামতের বাজেট রুপান্তরিত হয়েছে দামি দামি গাড়িতে, সেগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো ঢাকা শহরের মসৃণ রাস্তাগুলো। নিম্ন-মধ্যবিত্তরা রাস্তায় কোমড়ের ব্যথায় কোঁকাতে কোঁকাতে তাদের জীবন যাপিত করছে প্রতিদিন। কোনো পোয়াতি বোন আতঙ্কে আছেন রিকশায় চড়তে। কোনো বৃদ্ধ বাবা তার ঘোলাটে চশমায় কেবল তাকিয়ে থাকেন সামনে, পা বাড়াতে সাহস পান না রাস্তায়। আর বাচ্চাগুলো স্কুলে যাওয়ার সময় আঁকড়ে ধরে থাকে তাদের বাবা কিংবা মাকে-আতঙ্কে, ধুকধুক করা হৃদয়ে।
আপনি আরও দেখতে পাবেন কালো চশমায় ঢাকা মানুষগুলোকে। যারা এসব দেখতে পান না কখনও। গোলটেবিল বৈঠক আর টক শোতে সমালোচনায় মুখর হয়ে তারা ঘুম যান, সকালে উঠেই সেই তারা বেড টি খেতে খেতে নিজ স্বার্থে মতাবানদের ফোন করে কুশল বিনিময় করেন হাসি হাসি মুখে।
মতার অপব্যবহার আর সম্পদ লুটের মেদ-ভুঁড়ির কিছু মানুষকে দেখে আপনার মনে হবে—আরে, দেশ তো সত্যি সত্যি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে! আপনার এও মনে হবে, যাক আগামীতে এসব শরীরসর্বস্ব মানুষের চর্বি রফতানি করে আমরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ থেকে অন্তত মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারব।
আপনি হঠাত খেয়াল করবেন—একি, হাঁটার জন্য যে ফুটপাত, সেগুলো কতই দখল হয়ে গেছে। কারা দখল করেছে? সেই কাপড়, চুড়ি, জুতো বিক্রি করা অভাবী মানুষগুলো? এত সাহস তাদের? না, এদের পেছনে অন্য কেউ আছে? যারা এসব দখল করে, এদের বসিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি চাঁদা নেন? দয়া করে আর বেশি কিছু ঘাটাতে যাবেন না। তথ্যপ্রযুক্তি আইন কিংবা খেয়াল-খুশিময় যে কোনো একটা কারণে আটকে পড়ে যেতে পারেন নিমিষে।
ঢাকায় এলে আপনি আরও কত কি দেখতে পাবেন! এ মুহূর্তে সবকিছু বলা কি ঠিক হবে? তার আগে আসুন না, যারা আমাদের মাথার ওপর বসে আছে, তাদের একটু সুড়সুড়ি দিই। তারা যে ঘুমিয়ে আছেন!
ব্যস, আপাতত এটুকুই।
না, আর কিছু?
লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া।
এ বিভাগের আরো..
অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয়
সংসদ সদস্যকে আইন প্রনয়ন নয়, মানতেও হবে
জাতীয় চারনেতা হত্যা নেপথ্যে থাকা কুশলীব কারা