April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

নেতাদের তুলোধুনো করলেন খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি সিনিয়র নেতাদের ফাঁস হওয়া বেফাস মন্তব্য নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সিনিয়র নেতাদের ক্ষুব্ধ কণ্ঠে খালেদা জিয়া বলেন, “এখন আমাকে, তারেক রহমানকে ও দলকে নিয়ে অনেকেই বেফাঁস মন্তব্য করছেন। ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।” ভবিষ্যতে কোনও নেতার দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের পরিণতি মান্নান ভূঁইয়া ও চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর মতো হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন খালেদা জিয়া।

গত সোমবার রাতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বৈঠকে খালেদা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য সিনিয়র নেতাদের তুলোধুনো করেছেন- বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকের শুরুতে সবার মতামত মনোযোগ দিয়ে শোনেন খালেদা জিয়া। এসময় দল পুনর্গঠন, সরকারবিরোধী আন্দোলন ও চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় কী- তুলে ধরেন নেতারা। এরপর সবার উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “আপনারা যারা উপস্থিত আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আমাকে, তারেক রহমানকে ও দলকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, এই বিএনপি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দিয়ে কিছু হবে না। আজ বলেন, তাহলে কাকে দিয়ে হবে? আন্দোলন ব্যর্থের কথা বলেন? নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মাঠে নামেননি? সেদিন কোথায় ছিলেন? কেন ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন? দলের প্রতি আপনাদের অবদান কতটুকু সে খেয়াল কি আছে?”

খালেদা জিয়া বলেন, “তৃণমূলের নেতাদের কর্মকাণ্ড দেখে আমি সাহস পেয়েছিলাম। আর আপনারা ছিলেন লাপাত্তা।” এসময় উত্তেজিত হয়ে পড়েন তিনি। তার কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি নেতারা। তারা মাথা নিচু করে বসেছিলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, “টেলিফোনে কথা বলার সময় সতর্ক থাকবেন। দলের কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নিরসন হবে। ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।”

সূত্র জানায়, বৈঠকে সিনিয়র নেতাদের ধমক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৈঠকে উপস্থিত সবার কথা শুনলেও প্রভাবশালী এক ব্যারিস্টার ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যের কথা শোনেননি তিনি। উল্টো তার দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তাকে তুলোধুনো করেন। ভবিষ্যতে কোনো নেতার দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের পরিণতি মান্নান ভূঁইয়া ও চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর মতো হবে বলে এসময় হুঁশিয়ার করে দেন খালেদা জিয়া।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, “খালেদা জিয়া বৈঠকে নেতাদের তুলোধুনো করেছেন। ঈদের পর দল পুনর্গঠন শেষে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আবার রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। ঈদের পর খালেদা জিয়া জেলা সফরে যাবেন। একই সঙ্গে শিগগির সিনিয়র নেতাদের সারাদেশে গণসংযোগ, নিহত ও আহত নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।”

চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, “বৈঠকে ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন, খালেদা জিয়ার ওমরাহ পালন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান, সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোভাব, মানুষের মনোভাবসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।”

সূত্র জানায়, দলীয় নেতাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে খালেদা জিয়াও একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “ঈদের পর সব মহানগর, জেলা, উপজেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। যারা রাজপথে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারবেন তাদের দিয়ে দল পুনর্গঠন করা হবে। এরপর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। পাশাপাশি চেয়ারপার্সন সবাইকে এলাকায় গিয়ে দলের পক্ষে গণসংযোগ করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, সারোয়ারী রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল হালিম, রুহুল আলম  চৌধুরী, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email