April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

এ বছর কি ঘুরে দাঁড়াবে জ্বালানি খাত?

দেলোয়ার হোসেন মহিন: বিদায়ী বছরে মার্কিন ডলার সংকট বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল। কারণ পরিস্থিতি সামলাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা আমদানি কমিয়েছিল সরকার। এতে চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন বাড়েনি। ফলে গরমের সময়ে বাসাবাড়ি ও শিল্প কারখানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দেখা গেছে।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে বেসরকারি উৎপাদনকারীরা ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে না পেরে বিপাকে পড়েন।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে বেসরকারি উৎপাদনকারীরা ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে না পেরে বিপাকে পড়েন।

যেমন- গত রোববার বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২১ সালের আগস্টে ছিল ৪০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ডলার সংকটের কারণে আমদানি চাপ অব্যাহত থাকবে।

তাই বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো এ বছর জ্বালানির দামে স্থিতিশীলতার পূর্বাভাস দিলেও মার্কিন ডলারের সংকট এ বছরও বাংলাদেশের জন্য মূল সমস্যা হতে চলেছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন, কারখানা পরিচালনা, পরিবহন সচল রাখা, এমনকি রান্নার জন্য প্রাথমিক জ্বালানির আমদানি বিল পরিশোধে সরকারি ও বেসরকারি খাতগুলো সময়মতো ডলার পাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ম তামিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে ডলারের ঘাটতি ছাড়া আমাদের বড় কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা কমেছে, ফলে এর দাম চলতি বছরে কমবেশি অপরিবর্তিত থাকবে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ এলএনজি, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল ও কয়লাসহ আমদানি করা প্রাথমিক জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।

বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন পেট্রোলিয়াম পণ্য ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে আমদানি করতে হয় ৯২ শতাংশ। আমদানিকৃত জ্বালানির ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া দেশে বছরে প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয় এবং প্রায় ২৮০ বিসিএফ এলএনজি আমদানি করা হয়। মোট ব্যবহৃত গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার হয়।

যেহেতু প্রাকৃতিক গ্যাস সারাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব নয়, তাই রান্নার জন্য তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যার চাহিদার ৯৫ শতাংশ পূরণ করছে বেসরকারি সরবরাহকারীরা। গত বছর প্রায় ১৬ লাখ টন এই জ্বালানি আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭-৮ শতাংশ বেশি।

বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াট এবং চলতি বছর আরও ৫ হাজার ৪৮০ মেগাওয়াট জাতীয় নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গ্রীষ্মকাল শুরুর প্রথম মাস এপ্রিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। ওই সময় শুধু সেচের জন্য বাংলাদেশের অতিরিক্ত ২ হাজার ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে।

জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সেচ মৌসুমে সরকার প্রতিদিন ১ হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ১ লাখ ৫৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েল এবং ১৫ হাজার ৬০০ টন ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।

গত ডিসেম্বরে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ ঘাটতি ও আমদানিকারক এবং সরকারের কাছে অর্থ বকেয়া থাকায় জাহাজ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত হাই সালফার ফুয়েল অয়েল (এইচএসএফও) আমদানি কমিয়ে দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সাবেক সভাপতি ইমরান করিমের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৩৫ লাখ টন ১৮০-সিএসটি এইচএসএফও আমদানি করবে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম।

চলতি সপ্তাহে বিআইপিপিএ’র সভাপতি ফয়সাল খান প্রথম কথাকে বলেন, ডলার ঘাটতির কারণে স্থানীয় ব্যাংকগুলো জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ঋণপত্র খুলতে পারছে না। ব্যাংকগুলি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ও খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় সম্পর্কিত ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতেও লড়াই করছে।

তিনি বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, মার্কিন ডলারের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Print Friendly, PDF & Email