April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে একটি বিশেষ প্রবণতা আছে

ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এর মধ্যে একটি বিশেষ প্রবণতা আছে। সে কারণে কখনো এমন মনে হয় যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করছি? সারা দিনে একবারও এ মাধ্যমে যাওয়া হয়নি বা অন্যরা খুব ভালো জীবনযাপন করছেন, যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন?

তাহলে জেনে রাখুন, আপনার মধ্যে একটি বিশেষ প্রবণতা আছে। যার নাম ফিয়ার অব মিসিং আউট (ফোমো)। এটি এমন একটি বিষয়, যা আপনার মধ্যে এমন এক অনুভূতির জন্ম দেয় যে অন্যরা হয়তো আপনার অনুপস্থিতিতে অনেক মজা করছেন বা করবেন। অন্যদের দেখে মনে হওয়া যে তারা ভালো জীবনযাপন করছেন, যা আপনি কোনো কারণে পারছেন না। মোটকথা, এটি আপনার মধ্যে এমন একটি অনুভূতির সৃষ্টি করে যে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করছেন। কিন্তু বাস্তবতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিন্ন।

ফোমোর ফলে ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক অস্বস্তি, অসন্তোষ, বিষণ্নতা, চাপের অনুভূতি, হীনম্মন্যতা, হিংসা, একাকিত্ব এবং তীব্র ক্রোধের মতো গভীর অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি এটি আপনার আত্মসম্মানকেও প্রভাবিত করতে পারে।

ফোমো একটি অপেক্ষাকৃত নতুন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা। বিপণন কৌশলবিদ ড্যান হারম্যান ১৯৯৬ সালে একটি গবেষণাপত্রে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় পর্যবেক্ষণ করা একটি ঘটনা বর্ণনা করার জন্য ‘ফোমো’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

ফোমোর অনুভূতি প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া পোস্টগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়। উদ্বেগটি আপনাকে বোঝায় যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ বা আকর্ষণীয় ঘটনা বর্তমানে অন্য কোথাও ঘটছে, যেটি সম্পর্কে আপনি অনবরত খোঁজ না রাখলে পিছিয়ে পড়বেন। জীবনকে আরও ভালো করে তুলতে পারে, এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে বঞ্চিত হবেন। ফলে ক্রমাগত সংযুক্ত থাকার ইচ্ছা মানুষকে বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারস্থ করছে, যা তাকে এসব তথ্য সম্পর্কে সারাক্ষণ অবগত রাখে। সে সম্পর্কে মানুষ বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের কারণে, যা দেখে অন্যদের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনকে মিলিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও বাড়ছে।

আগে পরিবারের সবাই বিশেষ মুহূর্তগুলোয় সবাই এক সঙ্গে উপস্থিত হতেন। সেই অনুষ্ঠান সম্পর্কে মুখে মুখে শুনলেও সেটা মানুষকে সেভাবে স্পর্শ করত না। আর একটু দূরের পরিচিত হলে তো জানারও কোনো উপায় ছিল না। আর এখন প্রযুক্তি আমাদের নিয়ে এসেছে একই ছাতার নিচে। যেখানে যে কোনো বিষয়, ঘটনা সবকিছুই একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে আছে বলে মনে হয়। মানুষ তাদের বাছাই করা সেরা ছবি দিয়ে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, যা অন্যদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। নিজের মধ্যে কী কী অভাব রয়েছে, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলে।

মনোযোগের পরিবর্তন
আপনার কিসের অভাব রয়েছে, তার ওপর মনোযোগ দেয়ার পরিবর্তে আপনার কী আছে, সেদিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার কী নেই, সেই তালিকা যদি বেশি লম্বা করে ফেলেন, তাহলে নিজেকে অসুখী মনে হবে। তাই নিজের যা আছে, সেটার মধ্যে সুখ খোঁজার চেষ্টা করুন।

ডিজিটাল ডিটক্স করার চেষ্টা করুন

ডিজিটাল ডিটক্স মানে হচ্ছে- সব ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরতি নেয়ার প্রক্রিয়া।

ফোমো থেকে দূরে থাকতে এবং আপনার বাস্তব জীবনের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার কমাতে হবে। এতে আপনার মধ্যে ফোমোর প্রবণতা কমে আসবে।

জার্নাল রাখুন
নানা রকম অভিজ্ঞতার স্মৃতি ধরে রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করাটা একটা সাধারণ প্রবণতা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অনলাইনে দেয়া আপনার অভিজ্ঞতাগুলো সবাই পছন্দ করছেন কি না, সে সম্পর্কে আপনি উদ্বিগ্ন থাকতে পারেন। যার ফলে বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দিকে যাবেন। যদি এমন হয়, তাহলে এর পরিবর্তে আপনি আপনার কিছু ছবি এবং স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি ব্যক্তিগত অ্যালবাম বা ডায়েরি রাখুন। এই অভ্যাস আপনাকে আরও ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

বাস্তব সম্পর্ক স্থাপন
সব সময় যোগাযোগ ধরে রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারস্থ হওয়া স্বাভাবিক। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু ভার্চুয়াল জগতের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বাস্তবে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করতে পারেন।

প্রযুক্তির এই সময়ে ‘মনোযোগ অর্থনীতি’ নামক একটি নতুন বিষয়ও আলোচিত। একটি পণ্য বা সেবা বিক্রি করার জন্য প্রযুক্তিগুলো ক্রমাগত আমাদের মনোযোগের দখল নেয়ার চেষ্টায় আছে। কিছু থেকে বাদ পড়ে না যাওয়ার ভয়ে সব সময় সবকিছুতে অংশগ্রহণ কিংবা সবকিছু সম্পর্কে অবগত থাকার কারণে বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারস্থ হওয়ার চক্র সেই মনোযোগ অর্থনীতিকেই এগিয়ে নিচ্ছে। তাই এটি থেকে বের হয়ে আসা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

সূত্র:সময় নিউজ

Print Friendly, PDF & Email