April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সাতক্ষীরায় জমে ওঠেছে ১০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট

দিলীপ কুমার দেব, সাতক্ষীরা থেকে: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় জমে ওঠেছে ১০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট। শতবছরের প্রাচীন খোরদো বাজারের এই খেঁজুর গুড়ের হাট এখন সহ¯্র মানুষের পদচারণায় জমে ওঠেছে।

শীত মৌসুম আসলে বাজারে খেজুর গুড় ও পাটালী আসা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গুড় ব্যাবসায়ীরা এসে এই বাজারে গুড় কেনার জন্য আগাম ঘরভাড়া নেয়। সেজন্য শীত মৌসুম আসলেই দেখা যায় খেঁজুর গাছের গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য।

খেঁজুর গাছ কাটা থেকে শুরু করে রস আহরণ করে সেই রস থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন এ জনপদের গাছিরা। গ্রামাঞ্চলে গাছিরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য তারা রস আগুনে জ্বালিয়ে তৈরি করেন গুড় ও পাটালি। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে গুড় ও পাটালী চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহর ও বন্দরে।

কলারোয়া উপজেলার খোরদো বাজারের খোরদো-চাকলা ব্রিজ সংলগ্ন গুড়ের হাট সপ্তাহে দণন দিন বৃহস্পতিবার ও রবিবার বসে। কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেষা খোরদো বাজারস্থ ব্রিজের মুখ সংলগ্ন রাস্তার ধারে এ হাট সত্যি চোখে পড়ার মতো। শীতের মৌসুমে কলারোয়া উপজেলার অন্যতম প্রধান এ খেঁজুর গুড়ের হাট বেশ জমজমাট হয়ে থাকে বলে অনেকে গুড় ব্যাবসায়ীরা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, কলারোয়ার খেঁজুরের রসের রয়েছে আলাদা খ্যাতি বা জস। সেই খেঁজুরের রস জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় গুড় ও পাটালি। উপজেলার খোরদো বাজারে খেঁজুর গুড় ও পাটালির হাটে গুড় ও পাটালি বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৩৫-৪০টি গ্রামের খেঁজুর গাছের গাছিরা।

গুড় বিক্রি করতে আসা কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের গাছি মোঃ মতিয়ার রহমান জানান, এখন আগের মতো খেজুর গাছ নেই। বিলুপ্তির পথে খেঁজুর গাছ। তাই রস এখন কম সংগ্রহ করা হয়। যা সংগ্রহ করা হয় তাতে খরচটা কোন রকম বেঁচে থাকে। খোরদো গ্রামের গাছি মোঃ জব্বার সানা জানান, বর্তমান বাজারে এক ভাড় গুড়ের দামও কম পাওয়া যায়। যেটা কষ্ট এবং জ্বালানি খরচ হিসেবে তুলনামূলকভাবে কম।

হাটে আসা বেপারিরা দাবি করেন, গাছিরা তাদের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন। তারা আরো বলেন, গত বারের চেয়ে এ বছর গুড়ের দাম অনেক বেশি।

কলারোয়া উপজেলার তুলশীডাঙ্গা গ্রামের শ্রীরাম প্রসাদ অধিকারী বলেন, কলারোয়ার খেঁজুর গুড়ে গাছিরা চিনি মিশিয়ে গুড় ও পাটালী তৈরী করছেন। চিনি মিশানো ছাড়া খেঁজুর গুড় এখন পাওয়া যায় না। চিনির দাম কম হওয়ায় গাছিরা খেঁজুর গুড়ে চিনি মিশিয়ে বেশী দামে খেঁজুর গুড় বলে বিক্রি করছেন। সেজন্য এই চিনি মিশানো খেঁজুর গুড়ে প্রকৃত খেঁজুর গুড়ের স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায় না।

গুড়ের বেপারি হুমায়ুন কবির জানান, এবছর গুড়ের দাম বেশি। গত বছর যে গুড়ের ভাড় ছিলো ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, এ বছর সেই গুড়ের ভাড় সাড়ে ৮শ’ থেকে ৯শ’ এমনকি এক হাজার’ টাকা ক্রয় করতে হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় গুড় ব্যবসায়ীরা বলেন, খোরদো বাজারের খেঁজুর গুড়ের হাট থেকে গুড় কিনে ড্রাম ভর্তি করে গোডাউনে স্টক করেও রাখেন অনেক ব্যবসায়ীরা। পরে শীত মৌসুম চলে গেলে সেই গুড় ও পাটালি চড়া দামে বিক্রয় করে থাকেন তারা। সবমিলিয়ে ইতোমধ্যে জমে ওঠেছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী খেঁজুরের গুড় হাট।

কলারোয়া উপজেলার তুলশীডাঙ্গা গ্রামের শ্রীরাম প্রসাদ অধিকারী বলেন, কলারোয়ার খেঁজুর গুড়ে গাছিরা চিনি মিশিয়ে গুড় ও পাটালী তৈরী করছেন। চিনি মিশানো ছাড়া খেঁজুর গুড় এখন পাওয়া যায় না। চিনির দাম কম হওয়ায় গাছিরা খেঁজুর গুড়ে চিনি মিশিয়ে বেশী দামে খেঁজুর গুড় বলে বিক্রি করছেন। সেজন্য এই চিনি মিশানো খেঁজুর গুড়ে প্রকৃত খেঁজুর গুড়ের স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায় না।

Print Friendly, PDF & Email